কাবুল: আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পরেই কাশ্মীর প্রসঙ্গে ভোলবদল করল তালিবান।
আগের অবস্থান থেকে একশো আশি ডিগ্রি ঘুরে সংবাদ সংস্থা বিবিসি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তালিবান মুখপাত্র সুহেল শাহিন জানিয়েছেন, মুসলিম সংগঠন হিসেবে কাশ্মীর নিয়ে কথা বলার অধিকার তাঁদের আছে।
এর আগে ২৬ অগাস্ট তালিবানের আরেক মুখপাত্র জবিউল্লা মুজাহিদ বলেছিলেন, কাশ্মীর তালিবানের এক্তিয়ারের বাইরে। তিনি কাশ্মীরকে ভারতের অভ্যন্তরীণ ও ভারত-পাক দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বিষয় হিসেবে চিহ্নিত করেছিলেন।
তালিবান মুখপাত্র বলেছিলেন, আফগানিস্তানের মাটি কোনও দেশের বিরুদ্ধেই ব্যবহার করা যাবে না। ভারত ও পাকিস্তানকে নিজদেরই নিজেদের সমস্যা মেটাতে হবে। কারণ তারা প্রত্যকেই প্রতিবেশী ও তাদের স্বার্থ পরস্পর সম্পর্কিত। যদিও বিদেশ মন্ত্রক তখন তালিবানের কথায় গুরুত্ব দেয়নি। কারণ, কিন্তু তালিবানের কথায় আর কাজে যে বিস্তর ফারাক রয়েছে, তা এই ক’দিনে বারবার প্রমাণিত হয়েছে।
তালিবানের মুখপাত্র জবিদুল্লা মুজাহিদও সম্প্রতি একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, পাকিস্তান তাঁদের সেকেন্ড হোম। আর কাশ্মীরে অশান্তি ছড়াতে পাকিস্তান যে তালিবানের দিকে তাকিয়ে, তা আরও স্পষ্ট হয়ে গেছে ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের নেত্রীর এই মন্তব্যের জেরে।
সম্প্রতি, কাতারের রাজধানী দোহায় নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত দীপক মিত্তলের সঙ্গে তালিবানের প্রতিনিধি শের মহম্মদ আব্বাসের বৈঠক হয়। এটাই ছিল দু’তরফের মধ্যে প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
সূত্রের খবর, ভারতীয় দূতাবাসে হওয়া এই বৈঠকে নয়াদিল্লির তরফে তালিবানকে স্পষ্ট জানানো হয়, আফগানিস্তানের মাটিকে যেন কোনওভাবেই ভারত-বিরোধী সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার না করা হয়, তা সুনিশ্চিত করুক তালিবান। পাশাপাশি আফগানিস্তানে আটকে থাকা ভারতীয় ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের সুরক্ষা ও তাঁদের দ্রুত ভারতে ফেরানোর বিষয়টিও দেখতে হবে।
ভারতের সঙ্গে তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের সম্পর্ক কোন খাতে বইবে, সেই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠছিল। এখন কাশ্মীর প্রসঙ্গে তালিবানের এই মন্তব্যে, সেই আশঙ্কা স্পষ্ট হয়ে গেল মত কূটনৈতিক মহলের একাংশের।
পাকিস্তান সরকার, পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই, পাক জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা, হিজবুল মুজাহিদিন, হক্কানি জঙ্গি গোষ্ঠী এবং তালিবান একসঙ্গে হাত মেলালে তা আগামী দিনে ভারতের নিরাপত্তা এজেন্সিগুলির দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
ইতিমধ্যেই, তালিবানের উত্থানের পর পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সক্রিয় হয়েছে জঙ্গিরা। সূত্রের দাবি, গত ২ সপ্তাহে অন্তত ১০ বার সতর্কবার্তা দিয়েছেন গোয়েন্দারা। সূত্রের দাবি, লস্কর-ই-তৈবা ও জৈশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে আইএসআই-এর মদতপুষ্ট হাক্কানি জঙ্গি গোষ্ঠী। কাশ্মীরে নাশকতায় মদত দিতে, নতুন গোষ্ঠীর জন্য তহবিল সংগ্রহ করবে লস্কর প্রধান হাফিজ সইদ।
সূত্রের দাবি, আফগানিস্তানে জঙ্গিদের নতুন একটি নেটওয়ার্কও তৈরি হয়েছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে, তেহরিক-ই-তালিবান আমারত। জানা গেছে, এই জঙ্গি সংগঠনের নিয়ন্ত্রণ থাকবে জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের হাতে। তাকে সাহায্য করবে আরেক জঙ্গি নেতা মহম্মদ ইব্রাহিম আজহার।
পাশাপাশি লস্কর-ই-তৈবা ও জৈশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে পাক গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই-এর মদতপুষ্ট হাক্কানি জঙ্গি গোষ্ঠী। কাশ্মীরে নাশকতায় মদত দিতে, এই নতুন গোষ্ঠীর জন্য তহবিল সংগ্রহ করবে জঙ্গি গোষ্ঠী লস্কর-ই-তৈবার প্রধান হাফিজ সইদ।