নয়াদিল্লি: পাকিস্তানে কি ফের নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকার বনাম সেনাবাহিনী দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে বা হতে চলেছে? শাসক দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ নওয়াজ (পিএমএলএন) সূত্রে এমনই ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছে। উরি হামলা এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর ঘটনাপ্রকৃতি যেদিকে গড়াচ্ছে, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সেনাপ্রধান রাহিল শরিফের সম্পর্ক স্বাভাবিক নেই। দুই শরিফের ঠান্ডা লড়াই চলছে। ফলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে বলেই মনে হচ্ছে।


ভারতের ডিজিএমও যখন সরকারিভাবে পাক অধিকৃত কাশ্মীরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের খবর দেন, সেই সময় অ্যাবোটাবাদে শারীরিক সক্ষমতা প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়া তরুণ সেনা জওয়ানদের পুরস্কার দিতে যাচ্ছিলেন রাহিল। তিনি সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের খবর পাওয়ার পরেও অ্যাবোটাবাদ সফর বাতিল করেননি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ইসলামাবাদে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ফিরে যাননি রাহিল। তিনি জানিয়ে দেন, ফোনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। কয়েক ঘণ্টা পরে ফোনে তাঁদের কথা হয়। কিন্তু শরিফ দেখা করতে চাইলেও দেখা করেননি রাহিল।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর বিশ্বের সামনে পাকিস্তানের ঐক্যবদ্ধ ছবি তুলে ধরতে চেয়েছিলেন শরিফ। কিন্তু সেনাপ্রধানের আচরণে তিনি অপমানিত হন। তখন থেকেই দু জনের সম্পর্কের অবনতির কথা প্রকাশ্যে চলে আসে। পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা নাসির খান জানজুয়া সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেন। বৃহস্পতিবার রাওয়ালপিণ্ডিতে জাতীয় সংসদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে দেখা করেন রাহিল। শুক্রবার ইসলামাবাদে মন্ত্রিসভার বৈঠকে যাওয়ার কথা থাকলেও, শেষপর্যন্ত লাহৌরে চলে যান রাহিল। ফলে স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, পাক প্রধানমন্ত্রীর কোনও নির্দেশই মানছেন না সেনাপ্রধান।

পাকিস্তানের শাসক দল সূত্রে জানা গিয়েছে, সেনাবাহিনীর সবুজ সঙ্কেত পাওয়ার পরেই উরিতে জঙ্গি হামলা হয়। এই হামলায় সেনাবাহিনীর পূর্ণ সমর্থন ছিল। জঙ্গিদের সবরকম সাহায্য করেছে সেনাবাহিনী। সেই সময় দেশে ছিলেন না শরিফ। তিনি রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কে গিয়েছিলেন। আবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের ঠিক আগের দিন ইসলামাবাদে গিয়ে পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে কাশ্মীরকে সামনে রেখে ভারতের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক স্তরে সুর চড়ানোর অনুরোধ করেছিলেন সেনাপ্রধান। কিন্তু সেই তিনিই সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের পর থেকে নওয়াজকে এড়িয়ে যাচ্ছেন। ফলে দু জনের সম্পর্কের অবনতি নিয়ে জল্পনা বেড়েছে।

পাকিস্তানের বর্তমান সেনাপ্রধান সেদেশে রীতিমতো তারকা। তিনি দেশের যে কোনও রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি জনপ্রিয়। আগামী মাসেই সেনাপ্রধানের পদে রাহিলের মেয়াদ পূরণ হচ্ছে। বিভিন্ন মহল থেকে মেয়াদ বাড়ানোর দাবি উঠলেও, নওয়াজ এখনও রাহিলকে সেনাপ্রধানের পদে রেখে দেওয়ার বিষয়ে আগ্রহ দেখাননি। দু জনের দূরত্ব এতেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে রাহিলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে, তিনি এত সহজে সরে যেতে রাজি নন। ভারতের প্রতি পাক সেনাপ্রধানের ব্যক্তিগত আক্রোশ রয়েছে। কারণ, ১৯৬৫ সালের যুদ্ধে কাকাকে হারিয়েছিলেন রাহিল। ১৯৭১ সালের যুদ্ধে আবার তাঁর দাদার মৃত্যু হয়। সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে রাহিলকে তৃতীয় আঘাত করেছে ভারত। এর জবাব না দিয়ে সরতে নারাজ পাক সেনাপ্রধান। ফলে পাকিস্তানে ক্ষমতার দুই কেন্দ্রের মধ্যে আরও একবার সম্মুখ সমরের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে।