কলকাতা: ভারতের মতোই বাংলাদেশেও বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৭,০৭৫ জন। মৃত্যু হয়েছে ৫২ জনের। পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে সোমবার থেকে শুরু হয়েছে লকডাউন। জরুরি কাজের জন্য সীমিত পরিসরে অফিস খোলা থাকলেও, গণ পরিবহণ চলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে সরকার লকডাউন জারি করলেও, সবাই নিষেধাজ্ঞা মানতে নারাজ। রাজধানী ঢাকা, বরিশাল সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যবসায়ীরা দোকান ও বাণিজ্যকেন্দ্রগুলি খোলা রাখার অনুমতি দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। সোমবার বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। অনেক জায়গাতেই গণ পরিবহণ সচল রাখার দাবিও জানাচ্ছেন বহু মানুষ। লকডাউনের মধ্যেই কীভাবে ঢাকায় বইমেলা চালু রাখার অনুমতি দেওয়া হল, সেই প্রশ্নও তুলছেন অনেকে। আপাতত এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন জারি করা হলেও, এর মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে বলেও ইঙ্গিত দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। 


লকডাউনের প্রথম দিন বাংলাদেশের পরিস্থিতি কেমন ছিল? ঢাকার বাসিন্দা অভিনেত্রী-মডেল শান্তা পাল বাংলাদেশ থেকে ফোনে এবিপি লাইভকে জানালেন, ‘এই মুহূর্তে রাজনীতি আর করোনার জন্য দেশের অবস্থা খুব খারাপ। করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ মানুষই মাস্ক পরতে চাইছে না। লোকজন অকারণে রাস্তাঘাটে ঘুরে বেড়াচ্ছে। টিকা নিতেও নারাজ বেশিরভাগ লোক। ফলে লকডাউন করে খুব একটা লাভ হবে বলে মনে হয় না।’


পুলিশ আধিকারিক জহিরুল ইসলাম ফোনে এবিপি লাইভকে জানালেন, ‘আমি গত বছর করোনা আক্রান্ত হয়েছিলাম। তবে শরীরে করোনার উপসর্গ সামান্যই ছিল। বাড়িতে থেকেই সুস্থ হয়ে উঠেছিলাম। এখন ঢাকা ও চট্টগ্রামে করোনার প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে। তুলনায় বরিশালে সংক্রমণের হার কিছুটা কম। গতবার ভয় ছিল ৮০ শতাংশ আর এবার ভয় মাত্র ১ শতাংশ।’


ঢাকার ব্যবসায়ী সুমন হালদার ফোনে এবিপি লাইভকে বললেন, ‘কাজ ছাড়া বাইরে বেরোচ্ছি না। যত বেশি সম্ভব বাড়িতেই থাকছি। সবাইকেই সাবধানে থাকতে হবে। মাস্ক পরা অত্যন্ত জরুরি। সবারই টিকা নেওয়া উচিত।’


বরিশালের ব্যবসায়ী শিশির হালদার অবশ্য সাবধানতা অবলম্বন করেই দোকানপাট খোলা রাখার পক্ষে। তাঁর বক্তব্য, ‘গত বছর লকডাউনের জন্য ব্যবসা মার খেয়েছে। এবারও যদি টানা বেশ কয়েকদিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়, তাহলে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের পথে বসতে হবে। সরকারের কাছে তাই আমার আবেদন, সতর্কতা বজায় রেখে দোকান খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হোক। আমি হোম ডেলিভারি দেওয়া শুরু করেছি। অন্তত সেটার অনুমতি দিক সরকার।’


বরিশালের ব্রজমোহন কলেজের ছাত্র আরিয়ান আবদুল্লা এবিপি লাইভকে জানালেন, ‘কেউ লকডাউন মানতে চাইছে না। সবার মধ্যেই বেপরোয়া ভাব দেখা যাচ্ছে। এরকম চললে কিছুতেই সংক্রমণ ঠেকানো যাবে না। মাস্ক পরা যে কতটা জরুরি, সেটা বেশিরভাগ মানুষই বুঝতে চাইছে না।’


পটুয়াখালির বাসিন্দা মহম্মদ জশিমের মতে করোনা সংক্রমণ রোখার জন্য লকডাউন জারি করা উচিত নয়। এতে সাধারণ মানুষের সমস্যা বাড়ছে। এছাড়া কিছু হচ্ছে না। জশিম এবিপি লাইভকে জানালেন, ‘লকডাউনের ফলে গরিব মানুষ সমস্যায় পড়ছে। যারা দিনমজুরের কাজ করে, তাদের আয়ের পথ বন্ধ। তবে সরকার করোনা সংক্রমণ রোখার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের সমস্যা দূর করার বিষয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তরিক। মানুষকেও সচেতন হতে হবে।’


বাংলাদেশের চিকিৎসা পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই মনে করছেন, এক সপ্তাহের জন্য লকডাউন জারি করে করোনা সংক্রমণ কোনওভাবেই ঠেকানো যাবে না। কারণ, বহু মানুষ রাস্তায় বেরিয়ে পড়ছেন। রাস্তাঘাটে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাও সম্ভব হচ্ছে না। তাই সরকারের অন্যরকম কোনও পন্থার কথা ভাবা উচিত।