বেজিং: এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই এই নিয়ে দ্বিতীয়বার ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানকে সমর্থনের দাবি খারিজ করল চিন। বেজিং-এর তরফে এ দিন স্পষ্ট করে জানান হল, ভারত-পাক দ্বন্দ্বে কোনও একটি দেশের পক্ষ নেওয়ার কথা চিন কোথাও বলেনি। এর আগে পাক সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছিল যে, লাহৌরের কনসাল জেনারেল ইয়ু বোরেন বলেছেন যে, ‘যে কোনও বিদেশি আগ্রাসন ও কাশ্মীর প্রশ্নে পাকিস্তানের পাশে দাঁড়াবে চিন’। পঞ্জাব প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে জারি করা প্রেস বিবৃতিতে ইয়ুকে উদ্ধৃত করে এ কথা জানানো হয়েছে বলে পাক দৈনিক ‘ডন’ দাবি করে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র জেং শুয়াং সাফ জানিয়েছেন, ‘এ ধরনের মন্তব্য সম্পর্কে তিনি অবগত নন’। একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কাশ্মীর প্রশ্নে চিনের অবস্থানের কোনও পরিবর্তন হয়নি।


জেং বলেছেন, ‘কাশ্মীর প্রশ্নে চিনের অবস্থান খুবই ধারাবাহিক এবং স্পষ্ট। ভারত ও পাকিস্তান-উভয় দেশেরই বন্ধু ও প্রতিবেশী হিসেবে চিন আশা করে যে, ওই দুটি দেশ আলোচনার টেবিলে বসে কাশ্মীর সহ অন্যান্য বিষয়ে তাদের মতপার্থক্য নিরসন করবে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে’। ভারত ও পাকিস্তান দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতা এবং অগ্রগতির লক্ষ্যে যৌথভাবে কাজ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছে চিন।

উল্লেখ্য, ‘ডন’-এ প্রকাশিত খবর অনুযায়ী পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরের প্রেস বিবৃতিতে দাবি করা হয় যে, চিনের কনসাল জেনারেল আশ্বাস দিয়েছেন, ‘যে কোনও বিদেশি আগ্রাসনের ক্ষেত্রে আমাদের দেশ পাকিস্তানকে পূর্ণ সমর্থন দেবে’।

পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী শাহবাজ শরিফের সঙ্গে বৈঠকে ইয়ু এই আশ্বাস দেন বলে দাবি করা হয়। একইসঙ্গে দাবি করা হয় যে, চিনের কনসাল জেনারেল বলেছেন যে, ‘কাশ্মীর ইস্যুতেও আমরা পাকিস্তানের পাশে রয়েছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। ভারতের কাশ্মীরে নিরস্ত্র কাশ্মীরীদের ওপর অত্যাচার একেবারেই অযৌক্তিক এবং কাশ্মীরীদের আকাঙ্খা অনুযায়ীই কাশ্মীর সমস্যার সমাধান করতে হবে’।

কিন্তু পাকিস্তানের এই দাবি খারিজ করে দিল চিনের বিদেশমন্ত্রক।

এর আগে নিউইয়র্কে গত ২২ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভার অধিবেশনের অবকাশে চিনের প্রধানমন্ত্রী লি খ্যাজিয়াংয়ের সঙ্গে বৈঠক করেন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফ।ওই বৈঠকে চিনের প্রধানমন্ত্রী কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন বলে পাক সংবাদমাধ্যম দাবি করেছিল। ডন-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কাশ্মীর প্রসঙ্গে পাকিস্তানের অবস্থানকে সমর্থন দিয়ে যাওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন চিনের প্রধানমন্ত্রী। খ্যাজিয়াংকে উদ্ধৃত করে দাবি করা হয়েছিল যে তিনি শরিফকে বলেছেন, ‘আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন করব এবং যে কোনও মঞ্চেই পাকিস্তানের হয়ে কথা বলব’।

কিন্তু পাকিস্তানের ওই দাবিতে সায় দেয়নি চিন। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র লু কাঙ বলেছিলেন, দুই নেতার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক এবং পারস্পরিক স্বার্থ সমন্বিত আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে মতামতের আদানপ্রদান হয়েছে।

এ কথা বলে চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র পাকিস্তানের দাবি খারিজ করে দিয়েছিলেন।

এবার আরও একবার পাকিস্তানের দাবি নাকচ করে দিল বেজিং।

কাশ্মীর নিয়ে উত্তেজনা চরমে পৌঁছনোর পর একাধিক বার পাক মিডিয়া দাবি করেছে, এই বিরোধে পাকিস্তানের পাশে রয়েছে চিন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যে দু’বার বিবৃতি দিয়ে চিন পাক মিডিয়ার সেই দাবি নস্যাৎ করে দিল। চিনের এদিনের বক্তব্যে ফের ধাক্কা খেল ইসলামাবাদ।