বেজিং: ১৫৫তম জন্মদিবসে প্রথমবার চিনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশ করে বিশ্বকবিকে সম্মান জানাল চিন।

 

রবীন্দ্রনাথ চিনে অত্যন্ত জনপ্রিয়। শুধু লেখার জন্যই নয়, চিনের মানুষকে আফিমের নেশা ধরানোর জন্য পশ্চিমি শক্তির বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন কবি। এই কারণে তাঁকে এখনও সেদেশে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হয়। তাঁর বহু লেখাই চিনা ভাষায় অনুদিত হয়েছে। কিন্তু তা হয়েছে ইংরাজি অনুবাদ থেকে। এই প্রথম গান বাদ দিয়ে অন্য সব রচনা সরাসরি বাংলা থেকে চিনা ভাষায় অনুবাদ করা হল। ৩৩টি খণ্ডে কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক প্রকাশিত হয়েছে।

 

চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ও ভারতীয় ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষাতেও অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। রবীন্দ্র রচনাবলী প্রকাশ উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল এই রেডিও স্টেশন। এই অনুষ্ঠানে ভারত ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতরা হাজির ছিলেন।

 

চিনা ভাষায় রবীন্দ্র রচনাবলীর প্রধান অনুবাদক ডং ইউ চেন বলেছেন, ১৮ জন বাঙালি সাহিত্যিক, চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া, চিনের বিদেশমন্ত্রক, সেনাবাহিনী এবং সেন্ট্রাল কমিউনিস্ট পার্টি স্কুল যৌথভাবে এই অনুবাদের কাজ করেছে। গোটা কাজটা শেষ করতে পাঁচ বছর সময় লেগেছে।

 

ডং ছয়ের দশকে রাশিয়ার লেনিনগ্রাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করার সময়ই প্রথম রবীন্দ্রনাথের লেখার সঙ্গে পরিচিত হন। শুধু ভারতই নয়, চিন সহ সারা বিশ্বের জন্য কবির মানবিকতাবোধে মুগ্ধ চিনের মানুষ, বলছেন ডং।

 

এই অনুবাদের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তরুণী কাও ইয়ানহুয়া। তিনি বাংলাদেশে গিয়ে বাংলা নিয়ে পড়াশোনা করে সেখানে কিছুদিন চিনা দূতাবাসে কাজও করেছেন। এখন চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালে কাজ করেন কাও। তাঁর মতে, রবীন্দ্রনাথের রচনা রোম্যান্টিক। এই কারণেই তিনি তরুণ প্রজন্মের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয়।

 

বাংলা থেকে সরাসরি চিনা ভাষায় রবীন্দ্রনাথের লেখা অনুবাদ করতে গিয়ে ডং, কাওদের বেশ বেগ পেতে হয়েছে। বাংলার পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথ বেশ কিছু সংস্কৃত শব্দও ব্যবহার করেছিলেন। অভিধানের অভাবে সেগুলি চিনা ভাষায় অনুবাদ করা খুব কঠিন ছিল। এই কাজের বিনিময়ে পারিশ্রমিকও মিলেছে সামান্য। তবে যেহেতু সবাই আবেগের বশে কাজটা করেছেন, তাই কোনও বাধাই দমাতে পারেনি। বাংলাদেশের সাহিত্যিকরা অনুবাদের কাজে সাহায্য করেছেন। তবে ভারতের কারও সাহায্য নেওয়া হয়নি।