নয়াদিল্লি: ভিন্ গ্রহে প্রাণের সন্ধান চলছে কয়েক  যুগ ধরেই। অতি সম্প্রতি আবার মানবসভ্যতাকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টাও শুরু হয়েছে। তার মধ্যেই চাঞ্চল্যকর দাবি চিনের (China)। বিশ্বের বৃহত্তম টেলিস্কোপে (World's Largest Telescope) পৃথিবীর বাইরে প্রাণের অস্তিত্বের (Signs Of Life) ইঙ্গিত মিলেছে বলে দাবি তাদের।   


বিশ্বের বৃহত্তম টেলিস্কোপে ধরা পড়ল ভিনগ্রহীদের অস্তিত্ব!


বিশ্বের বৃহত্তম রেডিও টেলিস্কোপ ‘Sky Eye’। চিনের দক্ষিণ-পশ্চিমের গুইঝো প্রদেশে বসানো রয়েছে সেটি। ওই টেলিস্কোপটির ব্যাস ৫০০ মিটার। রন্ধ্রযুক্ত অতি সংবেদনশীল ওই টেলিস্কোপ অতি দুর্বল রেডিও সোর্সও ধরতে সক্ষম। ২০২০-র সেপ্টেম্বর থেকে বহির্জগতে প্রাণের সন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে সেটি। ওই টেলিস্কোপ থেকে পাওয়া তথ্য বিচার করে এর আগেও দু’বার এমন দাবি করেছিল চিন। এক বার ফের বহির্জগতে প্রাণের অস্তিত্ব থাকার ইঙ্গিত মিলেছে বলে সম্প্রতি দাবি করেছে তারা।


সম্প্রতি বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তি সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় দৈনিক সংবাদপত্রে বিষয়টি নিয়ে একটি দীর্ঘ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। মুহূর্তের মধ্যে দেশের অন্দরে তা ছড়িয়ে পড়ে। চিনা সোশ্যাল মিডিয়া বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে যায়। তার পর ব্রিটেনের ‘Nature’ জার্নালেও বিশদ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। বিষয়টি নিয়ে এমন হইচই শুরু হওয়ায়, চিনা সংবাদপত্রের ওয়েবসাইট থেকে রিপোর্টটি তুলে নেওয়া হয়। কিন্তু তা নিয়ে আলোচনা থামেনি।


চিনা সংস্থা আলিবাবা মালিকানাধীন হংকংয়ের ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’ দৈনিক জানিয়েছে, পৃথিবীর বাইরে প্রায় ৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরত্ব থেকে রহস্যজনক আলোর ঝলকানি ধরা পড়েছে ‘Sky Eye’ টেলিস্কোপে। চিনা বিজ্ঞানীদের অনুমান, বহু দূরের কোনও ছায়াপথ থেকে কম্প্যাক্ট রেডিও সোর্স থেকেই ওই আলোর ঝলকতানি উৎসারিত হয়েছে। চিনের হেফেইয়ের ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টোকনোলজির জ্যোতির্পদার্থবিদ দাই জিয়াগো জানিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে যে ভাবে শোরগোল পড়ে গিয়েছে, যে ভাবে গোটা বিশ্ব এ নিয়ে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে, তাতেই হয়ত রাখঢাক করা হচ্ছে।


আরও পড়ুন: 5g spectrum Update: শীঘ্রই দেশে 5G পরিষেবা, 4G থেকে ১০ গুণ বেশি গতি হবে ইন্টারনেটের


জ্যোতির্বিজ্ঞানের ভাষায় টেলিস্কোপে ধরা পড়া এই ধরনের আলোর ঝলকানিকে ফাস্ট রেডিও বার্স্টস (FRB) বলা হয়। প্রত্যেক বার কয়েক সেকেন্ডের জন্যই এই ধরনের ঝলকানি স্থায়ী হয়। প্রত্যেক বারের ঝলকানিকে একত্রিত করে সূত্র খোঁজার চেষ্টা করেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু চিনের টেলিস্কোপে ধরা পড়া ওই আলোর ঝলকানি প্রতি ঘণ্টায় বেশ কয়েক বার ধরা পড়েছে, তাতেই এর উৎস অনুমান করা সম্ভব হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চিনের ন্যাশনাল অ্যাস্ট্রনমিক্যাল অবজারভেটোরিজের মুখ্য বিজ্ঞানী লি দি।


এর আগে, ২০১২ সালে পুয়ের্তো রিকোর আরসিবো টেলিস্কোপেও এই ধরনের আলোর ধলকানি ধরা পড়ে। এক ঘণ্টায় অজস্রবার তা চোখে পড়লেও, তার পর কার্যত মিলিয়ে যায়। তাই চিনের টেলিস্কোপে ধরা পড়া আলোর ঝলকানি পুয়ের্তো রিকোর টেলিস্কোপের থেকে আালাদা বলে মনে করা হচ্ছে।


এর আগে, ২০১৯ সালে টেলিস্কোপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য ঘেঁটে বহু দূর থেকে রেডিও দুই ধরনের সিগনাল মিলেছে বলে ২০২০ সালে দাবি করে চিন। এর পর ২০২২-এর গোড়ায় আরও একটি সন্দেহজনক ইঙ্গিত মিলেছে বলে দাবি করা হয়। সেই সময় একই সূত্র থেকে সব মিলিয়ে ৭৫টি আলোর ঝলকানি ধরা পড়েছে বলে দাবি করা হয়। এর পর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়া, হাওয়াই এবং নিউ মেক্সিকোর বিজ্ঞানীদের সঙ্গে মিলে ওই উৎসটিকে শনাক্ত করতে নেমে পড়েন চিনা বিজ্ঞানীরা।


একবার নয়, একাধিক বার ইঙ্গিত!


সেই সময় পৃথিবীর সৌরমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত আকাশগঙ্গা ছায়াপথের চেয়ে আয়তনে ছোট এবং অনুজ্জ্বল একটি ছায়াপথ থেকে ওই আলোর ঝলকানি উৎসারিত হয় বলে জানা যায়। চিনা বিজ্ঞানীদের দাবি, ওই ছোট ছায়াপথটির মধ্যে অতি ঘন এবং উচ্চ চৌম্বকীয় পরিবেশ থেকেই আলোর ঝলকানি ধরা পড়েছে। বহু দূরের কোনও নক্ষত্রের বুকে বিস্ফোরণ থেকেও ওই আলোর ঝলকানি ধরা পড়ে থাকতে পারে বলে পাল্টা যুক্তিও দেন অনেকে। কিন্তু বিগত কয়েক বছরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের টেলিস্কোপে প্রায়শই এই ধরনের ইঙ্গিত ধরা পড়া বহির্জগতে প্রাণের অস্তিত্বের দাবিই জোরাল হয়ে উঠছে।