ওয়াশিংটন: মার্কিন মুলুকে কর্মক্ষেত্রে ভিসায় রাশ। ‘এইচ ১ বি’ ভিসা ধারকদের বেতন দ্বিগুণের প্রস্তাব। সেনেটে বিল পেশ। আশঙ্কায় ভারতীয় আইটি সংস্থাগুলির শেয়ারে ধাক্কা।
নির্বাচনের আগে কখনও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মুখে ছিল ভারতের কথা তো কখনও আবার নরেন্দ্র মোদীর ভূয়সী প্রশংসা। অথচ, ক্ষমতায় আসার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিলেন, তাতেই ভারতের কপালে এখন দুশ্চিন্তার ভাঁজ!
কর্মসূত্রে মার্কিন মুলুকে থাকা, কয়েক হাজার ভারতীয়র কাজ হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে! মঙ্গলবারই, মার্কিন সংসদের ‘হাউস অফ রিপ্রেসেন্টেটিভসে’ ‘এইচ ১ বি’ ভিসা নিয়ে নতুন বিল পেশ করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। ‘ হাই স্কিলড ইন্টেগ্রিটি অ্যান্ড ফেয়ারনেস অ্যাক্ট’-এর মূল বক্তব্যই হল, ‘এইচ ১ বি’ ভিসা নিয়ে যাঁরা ভিনদেশ থেকে আমেরিকায় কাজ করতে আসবেন, তাঁদের বার্ষিক বেতন দ্বিগুণ করে দিতে হবে।
ন্যূনতম বেতন হবে, ১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। আগে যা ছিল ৬০ হাজার মার্কিন ডলার। এই প্রস্তাব দেখে, আপাতদৃষ্টিতে মনে হতেই পারে, বেতন বাড়লে তো সেখানে কর্মরত ভারতীয়দেরই লাভ! কিন্তু তেমনটা মোটেও নয়! বেতন দ্বিগুণের মধ্যেই লুকিয়ে কর্মচ্যুত হওয়ার আশঙ্কা!
কারণ তথ্যপ্রযুক্তি, কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং, বিজ্ঞানের মতো ক্ষেত্রে, ‘সস্তায় মেধা’ আমদানির জন্য আমেরিকা বরাবরই ভারতের ওপর নির্ভরশীল। কারণ, আমেরিকার কোনও নাগরিককে কর্মী হিসাবে নিয়োগ করলে, তাঁকে অনেক বেশি টাকা বেতন দিতে হবে। অথচ ভারতের মতো দেশ থেকে কম খরচে, ভাল মেধা পাওয়া যায়। যাতে মার্কিন সংস্থাগুলির লাভ হয়, আবার ভারতীয়রাও চাকরি পায়।
কিন্তু, ডোনাল্ড ট্রাম্প চাইছেন, তাঁর দেশের নাগরিকদেরই যেন বেশি করে নিয়োগ করে মার্কিন সংস্থাগুলি। তাই ঘুরপথে ভিনদেশ থেকে আসা কর্মীদের বেতন বাড়ানোর প্রস্তাব রাখলেন তিনি। কারণ, বেশি বেতন দিতে হলে বহু মার্কিন সংস্থাই আর ভারতের মতো দেশ থেকে কর্মী নিতে চাইবে না, বাধ্য হয়ে নিজের দেশের লোককেই কর্মী নিয়োগ করবে। এতে ভারতের মতো দেশের অংসখ্য মেধাবি ছেলে-মেয়ের ক্ষতি হবে, আর ট্রাম্পের দেওয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়ে যাবে।
ট্রাম্প-সরকারের ভিসা-বিল পেশের খবরে টালমাটাল বম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের তথ্যপ্রযুক্তি সূচক। একধাক্কায় সূচক নেমে গিয়েছে, ৪ শতাংশ নিচে! তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা টিসিএসের শেয়ার পড়েছে ৫.৬%। আরেক তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা টেক মাহিন্দ্রার শেয়ারের দামও ৯.৭% কমে গিয়েছে। এইচসিএলের শেয়ার পড়েছে ৬.৩%। ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিসের শেয়ার পড়েছে ৪.৬% হারে। আরেক তথ্য প্রযুক্তি জায়েন্ট উইপ্রোর শেয়ারের দাম পড়েছে ৪.২৩% হারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর, বুধবারই নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনে কথা হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের। সেই কথোপথনকে ‘উষ্ণ’ বলে বর্ণনা করেন প্রধানমন্ত্রী। এর ক’দিনের মধ্যেই ট্রাম্প যে বিল পেশ করলেন, তার ‘উষ্ণতা’ এতটাই, যে বিল আইনে পরিণত হলে কপাল পুড়তে পারে মার্কিন মুলুকে কর্মরত বহু মেধাবী ভারতীয়র। স্বপ্নভঙ্গ হতে পারে, সিলিকন ভ্যালিতে কাজের স্বপ্ন দেখা বহু উচ্চাকাঙ্খী প্রতিভাবান ভারতীয় তরুণ-তরুণীর।