কক্সবাজার: মায়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গিরা হিন্দুদের গ্রামে ঢুকে গণহত্যা করেছে বলে সে দেশের সেনা দাবি করেছে। রাখাইন প্রদেশের উত্তরে খা মাউঙ্গ সেইক গ্রামে গণকবর থেকে ৪৫ টি দেহ উদ্ধারের পর এই দাবি করেছে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ। যদিও সেই হত্যাকাণ্ডের যাঁরা প্রত্যক্ষদর্শীরা বলতে পারছেন না, সেদিন কারা ওই হামলা চালিয়েছিল। রাখাইন প্রদেশ থেকে পালিয়ে এসে দুই সন্তানকে নিয়ে বাংলাদেশে হিন্দু শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন রিকা ধর। তিনি বলেছেন, মুখোশধারী একদল দুষ্কৃতী তাঁদের হিন্দু গ্রামে হামলা চালায়। সেই হামলাকারীরা তাঁর স্বামী, দুই ভাই ও আরও অনেক প্রতিবেশীকে বড় দা দিয়ে কেটে খুন করে।  আতঙ্কিত গ্রামবাসীদের গ্রামের নিকটবর্তী পাহাড়ে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। রিকা ধর বলেছেন, মৃতদের সদ্য খোঁড়া তিনটি গর্তে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হয়। মৃতদের হাত তখনও পিছনে বাঁধা ছিল। ২৫ বছরের রিকা কোনওক্রমে ঘরবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পেরেছেন।
খা মাউঙ্গ সেইক গ্রামে গত রবিবার থেকে এখনও পর্যন্ত ৪৫ টি দেহ উদ্ধার করেছে মায়ানমার কর্তৃপক্ষ।  মায়ানমার সেনার দাবি, গত ২৫ আগস্টের মুসলিম রোহিঙ্গা জঙ্গিদের নৃশংস কার্যকলাপের প্রমাণ এই ঘটনা। ওই দিনই একাধিক পুলিশ পোস্টে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। এই ঘটনার পর রাখাইনে সাম্প্রদায়িক হানাহানি চরম পর্যায়ে পৌঁছয়।
হামলার পাল্টা জবাবে সেনা অভিযানে কয়েক শ মানুষের মৃত্যু হয়। রাখাইন ছেড়ে প্রাণের দায়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন প্রায় পাঁচ লক্ষ শরণার্থী। রাষ্ট্রপুঞ্জ এই ঘটনাকে জাতিগত গণনিধন আখ্যা দিয়েছে।
মায়ানমার অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা রাখাইনের বৌদ্ধধর্মাবলম্বী ও হিন্দুদের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে দাবি করে আসছে যে, রোহিঙ্গা জঙ্গিদের শায়েস্তা করতেই অভিযান চালানো হয়েছে।
একদিনের হানাহানির পর সবেমাত্র গত বুধবার রাখাইনে সংবাদমাধ্যমের ওপর আরোপিত নিয়ন্ত্রণ কিছুটা শিথিল করেছে মায়ানমার। যে গ্রামে হিন্দুদের গণকবর পাওয়া গিয়েছে সেখানে সংবাদমাধ্যমের যাওয়ার ব্যবস্থা করে সেনা। সংবাদমাধ্যমের ওপর এতদিনকার  নিষেধাজ্ঞার কারণে অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ যাচাই করে দেখার কাজটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
বাংলাদেশ ও মায়ানমারে ঘরছাড়া হিন্দুরা তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। বেঁচে আছেন কিনা, সেই খবরটুকুও জানতে পারছেন না।
খা মাউঙ্গ সেইক বা ফওয়েইরা বাজার বলে পরিচিত এলাকার প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, কালো মুখোশ পরে হামলা চালিয়েছিল দুষ্কৃতীরা।
কক্স বাজারে এক হিন্দু শরণার্থী ১৫ বছরের প্রমীলা শিল বলেছে, হামলাকারীরা তাদের পাহাড়ে নিয়ে যায়। অনেককেই কুপিয়ে খুন করে। নিজের চোখে সে ওই নৃশংস ঘটনা দেখেছে। সে বলেছে, প্রায় ১০০ জনকে খুন করা হয়েছে। মারা গিয়েছে তার স্বামী ও পরিবারের অন্যান্যরা।
সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনা এমনিতেই সাম্প্রদায়িক দিক থেকে স্পর্শকাতর রাখাইনে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে তিক্ততা বাড়িয়ে তুলেছে।
গণহত্যার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া রিকা বা প্রমীলা-কেউই বলছেন না যে, রোহিঙ্গা মুসলিম জঙ্গিরাই হামলা চালিয়েছিল । তবে তাঁরা বলছেন, হিন্দু হওয়ার জন্যই তাঁদের ওপর এই হামলা চালানো হয়েছে।
জঙ্গিদের প্রতি সহানুভূতিশীল রোহিঙ্গারা নিরীহ মানুষকে গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কুটুপালোং শরণার্থী শিবিরে  এক তথাককথিচ রোহিঙ্গা জঙ্গি ওই ঘটনার দায় বৌদ্ধদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছে। তার দাবি, তাদের বদনাম করতেই হিন্দুদের হত্যার দায় তাদের ঘাড়ে চাপাচ্ছে মায়ানমার সেনা।