নিউ ইয়র্ক: সারা বিশ্বে অন্তত ১১০ কোটি এমন মানুষজন আছেন, যাঁদের সরকারিভাবে কোনও অস্তিত্ব নেই। তাঁদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যা নেহাত কম নয়। এই শিশুদের জন্ম শংসাপত্র নেই। ফলে তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সবরকম সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। আফ্রিকা ও এশিয়াতে এই অস্তিত্বহীন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। রাষ্ট্রপুঞ্জের একটি রিপোর্টে এই ভয়াবহ তথ্য উঠে এসেছে।


বিশ্ব ব্যাঙ্কের ‘আইডেন্টিফিকেশন ফর ডেভেলপমেন্ট’ (আইডিফোরডি) প্রকল্পের রিপোর্টে বলা হয়েছে, যে অঞ্চলগুলিতে দারিদ্র্য, বৈষম্য, মহামারী ও সশস্ত্র সংঘর্ষ সবচেয়ে বেশি, সেখানেই অস্তিত্বহীন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। আইডিফোরডি প্রকল্পের দায়িত্বে থাকা আধিকারিক বিজয়ন্তী দেশাই বলেছেন, এই সমস্যার পিছনে বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছে। তবে উন্নয়নশীল অঞ্চলগুলিতে বসবাসকারী মানুষের সঙ্গে সরকারি পরিষেবার দূরত্বই সবচেয়ে বড় কারণ। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, পেরুর আমাজন জঙ্গলের কাছে যাঁরা বাস করেন, তাঁদের কাছে প্রশাসনিক পরিষেবা পৌঁছে দিতে গেলে নৌকা করে যেতে পাঁচ দিন সময় লাগে। তাছাড়া মানুষের অজ্ঞতাও সরকারি সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকার একটা বড় কারণ। বেশিরভাগ মানুষই জন্ম নথিভুক্ত করার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। জন্ম নথিভুক্ত না করলে যে প্রাথমিক পরিষেবাগুলি পাওয়া যায় না, এর ফলে শিশুশ্রমিক বা নাবালিকা বিয়ে বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেটা অনেক বাবা-মা জানেন না।

রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রতিনিধি তথা শিশু ত্রাণ সংস্থার ডিরেক্টর অ্যানা-সোফি লইস বলেছেন, স্কুলে ভর্তি হওয়া বা জাতীয় স্তরের পরীক্ষা দেওয়ার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জন্ম শংসাপত্র প্রয়োজন। আফ্রিকা ও এশিয়ার লক্ষ লক্ষ শিশু স্কুলে ভর্তি হতে গিয়ে এই সমস্যার মুখে পড়ে। বাবা-মায়েদের সে বিষয়ে অবহিত করতে হবে। তাহলে এই সমস্যার সমাধান করা যায়।

পেরুর প্রাক্তন উন্নয়ন মন্ত্রী ক্যারোলিনা ত্রিভেলি বলেছেন, রাজনৈতিক অবস্থার কারণেও অনেক পরিবার নিজেদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত করে রাখতে বাধ্য হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সরকার কোনও একটি বিশেষ গোষ্ঠীর মানুষকে সবরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকে এবং অন্যান্য গোষ্ঠীর মানুষকে বঞ্চিত করে। এই বৈষম্যের কারণেই বঞ্চিত লোকজন নিজেদের নাগরিকত্ব বা গোষ্ঠীর পরিচয় দিতে ভয় পান। অন্ক শিশুর জন্ম হয় ধর্ষণের ফলে। তাদের পরিচয় গোপন রাখেন মা। চিনে আবার এক সন্তান আইন চালু হওয়ার পর অনেক দম্পতিই শাস্তির ভয়ে একের বেশি সন্তানের জন্ম নথিভুক্ত করেন না। ফলে সরকারিভাবে নথিভুক্ত না হওয়া শিশুরা সমস্যায় পড়ছে।