নয়াদিল্লি: সম্প্রতি রামজশ কলেজে হিংসার ঘটনায় একটি ছাত্র সংগঠনের বিরুদ্ধে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরব হয়ে আলোড়ন তুলেছেন দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী গুরমেহর কউর। কয়েক মাস আগে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন কার্গিল যুদ্ধের শহিদের কন্যা। সাম্প্রতিক বিতর্কের সূত্রে সেই ভিডিওটি এখন ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। ভিডিওতে প্ল্যাকার্ড হাতে তাঁর পাকিস্তান তথা মুসলিম বিদ্বেষী থেকে শান্তিকামী হয়ে ওঠার কাহিনী জানিয়েছেন গুরমেহর। ভিডিওতে গুরমেহর বলেছেন, ‘আমার মনে আছে, আমার বাবাকে মেরেছে বলে আমি পাকিস্তান ও পাকিস্তানিদের কতটা ঘৃনা করতাম। আমি মুসলিমদেরও ঘৃণা করতাম। কারণ আমি মনে করতাম, সব মুসলিমই পাকিস্তানি। ছয় বছর বয়সে তো আমি বোরখা পরা এক মহিলাকে ছুরি দিয়ে মারতে গিয়েছিলাম। কোনও এক আশ্চর্য কারণে আমি ভেবেছিলাম আমার বাবার মৃত্যুর জন্য ওই মহিলা দায়ী। আমার মা আমাকে শান্ত করেন এবং আমাকে বোঝান যে, পাকিস্তান নয়, যুদ্ধ আমার বাবাকে মেরেছে। ও কথা বুঝতে আমার সময় লেগেছিল। এখন বিদ্বেষের মনোভাব থেকে বেরিয়ে আসতে শিখেছি। এটা খুব সহজ না হলেও খুব কঠিনও নয়।যদি আমি পারি, তাহলে আপনিও পারবেন’।
গুরমেহরের ওই ভিডিও-র প্রত্যত্তুরে এবার একটি ভিডিও শেয়ার করলেন এক পাকিস্তানি যুবক। ভিডিওতে ভারতের শহিদ-কন্যার প্রতি সহমর্মিতা-সমর্থন জানিয়েছেন তিনি। ফায়াজ খান নামে ওই পাক যুবক একাধিক প্ল্যাকার্ডের মাধ্যমেই তাঁর বার্তা দিয়েছেন ওই ভিডিওতে।
ফায়াজ বলেছেন, ‘হাই, গুরমেহর কউর। আমি পাকিস্তানের ফায়াজ। আমি যখন প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় এসেছিলাম তখন স্কুলে যেরকম শিখেছিলাম, সেরকম ভাবেই ভারতীয়দের দেখতাম। কিন্তু খুব শীঘ্রই আমরা একে অপরের সঙ্গে অন্য ঘনিষ্ঠ বন্ধুর মতোই খাবার, ক্লাসরুমের চেয়ার ভাগ করতে শুরু করলাম’।

ফায়াজ আরও বলেছেন, ‘কার্গিল যুদ্ধে তোমার বাবার মৃত্যুর কারণে আমি তোমার ও তোমার পরিবারের জন্য দুঃখিত। আমার নিজের শহর সোয়াতে আমি যুদ্ধ খুব কাছ থেকে দেখেছি। সৌভাগ্যক্রমে এই যুদ্ধে আমাদের পরিবারের কারুর প্রাণ যায়নি। কিন্তু আমার চারপাশে রয়েছে অনেক গুরমেহর কউর’।
ফায়াজ অস্ট্রেলিয়াতে থাকেন। তিনি চান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ভিসা নিয়ন্ত্রণের অবসান হোক।
ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের শান্তির জন্য লড়াই করতে হবে এবং গুরমেহর কউরের মতো যন্ত্রনা থেকে হাজার হাজার মানুষকে রক্ষা করতে হবে। আমি তোমাকে তোমার বাবার ভালোবাসা দিতে পারব না। কিন্তু তুমি নিশ্চিত ভাবেই ‘দুশমন দেশ’ থেকে একজন দাদা পেলে। সারা বিশ্বে এমনই সুন্দর সম্পর্ক গড়ে উঠুক, যেখানে ভাই হবে মুসলিম, বোন শিখ।