ইসলামাবাদ:  জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামায় নারকীয় জঙ্গি হামলার পর পাকিস্তানে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির অবাধ কার্যকলাপ বন্ধের জন্য পাক সরকারের ওপর চাপ বাড়িয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। এই প্রবল চাপের মুখে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান বলেছেন যে, পাকিস্তানে ‘জিহাদি গোষ্ঠী ও সংস্কৃতি’র কোনও স্থান নেই।


গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদের এক সন্ত্রাসবাদী সিআরপিএফের কনভয়ে আত্মঘাতী হামলা চালায়। এই ঘটনায় ৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়।

জঙ্গি দমনে বালাকোটে প্রত্যাঘাত করে ভারত। পরের দিন পাকিস্তানের বায়ুসেনা পাল্টা জবাব দেওয়ার চেষ্টা করে এবং পাক বিমানকে খেদিয়ে দিতে গিয়ে একটি মিগ ২১ বিমান ভেঙে পড়ে এবং ওই বিমানের পাইলট ধরা পড়েন। অবশ্য ১ মার্চ ভারতের হাতে পাইলটকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

সাংবাদিক ও সম্পাদকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ইমরান বলেছেন, ভারতের এনডিএ সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হিংসার রাজনীতিতে ভর করে সাধারণ নির্বাচনে জিততে চায়। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভারতে নির্বাচন শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ রেখায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত ঝুঁকি অব্যাহত থাকবে এবং দেশকে সব সময় প্রস্তুত থাকতেও বলেছেন ইমরান।

তাঁর হুমকি, দেশে সশস্ত্র বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে এবং কোনও ধরনের সামরিক আগ্রাসনের উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।

ইমরান বলেছেন, ন্যাশনাল অ্যাকশন প্ল্যান নিয়ে সহমত দেশের সব কটি রাজনৈতিক দল এবং জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আরও ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ, তাঁর সরকার পাকিস্তানের মাটিতে জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির কার্যকলাপ কোনওভাবই বরদাস্ত করবে না।

জিহাদি গোষ্ঠীগুলির ‘উত্পত্তি ও জিহাদি সংস্কৃতি’র উল্লেখ করে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এই গোষ্ঠীগুলির অস্তিত্ব মার্কিন নেতৃত্বে আফগানিস্তানে সোভিয়েতের বিরুদ্ধে আফগান যুদ্ধের সময় থেকে রয়েছে। তিনি বলেছেন, এখন এই ধরনের গোষ্ঠীগুলির কোনও জায়গা পাকিস্তানে নেই। কারণ, পাকিস্তান বিশ্বকে এই বিশ্বাস দিতে চায় যে, তারা শুরু শান্তিকামী দেশই নয়, সেইসঙ্গে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি নীতির মাধ্যমে জিহাদি সংস্কৃতি দূর করতেও দায়িত্ববান।

ইমরান বলেছেন, ভারত পাকিস্তানকে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স (এফএটিএফ)-এর কালোতালিকাভূক্ত করতে সচেষ্ট। আর তেমন হলে পাকিস্তান যে প্রচুর সমস্যার মুখে পড়বে, তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশও করেছেন ইমরান।

সন্ত্রাসবাদের ক্ষেত্র আর্থিক মদত সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক নজরদার সংস্থা এফএটিএফ গত মাসেই পাকিস্তানকে গ্রে তালিকাতেই রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তৈবা ও জামাত-উদ-দাওয়ার মতো জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির আর্থিক যোগান বন্ধ করার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের ব্যর্থতার জন্য এফএটিএফ ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

২০১৮-র জুনে পাকিস্তানকে গ্রে তালিকাভূক্ত করা হয় এবং এফএটিএফ ২৭ দফা অ্যাকশন প্ল্যানও তাদের দিয়েছিল। ওই প্ল্যান অক্টোবরে এফএটিএফ-র বর্ধিত অধিবেশনে এবং দ্বিতীয়বার এই সপ্তাহের বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়।

দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বলতে গিয়ে ইমরান বলেছেন, নিষিদ্ধ সংগঠনগুলিকে অনেক আগেই নিশ্চিহ্ন করা উচিত ছিল। কিন্তু এখন তাঁর সরকার ওই গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। তাদের মূলস্রোতে ফিরিয়ে আনতে সরকার প্রচুর পরিমাণ অর্থ ব্যয় করছে বলেও জানিয়েছেন ইমরান।

উল্লেখ্য, আমেরিকা ইতিমধ্যেই ইসলামাবাদকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, ভারতে ফের কোনও জঙ্গি হামলা তা পাকিস্তানরে চরম বিপদে ফেলবে। একইসঙ্গে জঙ্গি সংগঠনগুলির বিরুদ্ধে যথাযথ ও দীর্ঘস্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পাকিস্তানকে বলেছে আমেরিকা।