কিভ : প্রবল সঙ্কটের মুখেও তিনি আত্মসমর্পণ করার কথা মুখে আনেননি। উপরন্তু, রাশিয়ার সঙ্গে অসম যুদ্ধে কার্যত সামনে দাঁড়িয়ে থেকে দেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তাঁর এই লড়াকু মানসিকতার জন্যই এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত হলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। ভার্চুয়ালি ইউরোপীয়ান পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখার পর প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে উঠে দাঁড়িয়ে হাততালি দিয়ে সম্মান জানালেন সেখানকার সদস্যরা। 


জেলেনস্কি বললেন, "ইউক্রেনের সব শহরকে ঘিরে ফেলা সত্ত্বেও, আমরা আমাদের দেশ ও স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছি। কেউ আমাদের ভাঙতে পারবে না। আমরা শক্তিশালী, আমরা ইউক্রেনিয়ান।" 


চারিদিক থেকে ইউক্রেনকে ঘিরে ফেলেছে রাশিয়া। কিন্তু সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে থাকলেও, রাশিয়ার সামনে মাথা নত করতে নারাজ জেলেনস্কি। তাই আমেরিকার তরফে তাঁকে নিরাপদে দেশ ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হলেও, পত্রপাঠ তা প্রত্যাখ্যান করে দেন। বোমা, গুলির মধ্যেই রাস্তায় নেমে জানিয়ে দেন, শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও মাতৃভূমিকে রক্ষা করে যাবেন তিনি। একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার তরফে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় জেলেনস্কিকে (Russia Ukraine War)। কিন্তু ফোনে জেলেনস্কি তাঁদের বলেন, ‘‘আমার লড়াই এখানেই। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন। পালানোর গাড়ি বা বিমানের নয়।’’


ইউক্রেনের সরকার ফেলে দেওয়াই যে তাঁদের লক্ষ্য, ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর সেনাবাহিনী ঢুকে পড়েছে পড়শি দেশের রাজধানী কিভে। তাতেই আমেরিকার তরফে জেলেনস্কিকে দেশ ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। 


যুদ্ধের ৫ দিনের মাথায় ইউক্রেনকে সাহায্যের কথা জানায় ন্যাটো। রাশিয়া-ইউক্রেন (Russia and Ukraine) বৈঠকের মাঝেই ট্যুইট করেন ন্যাটো (NATO) প্রধান। "রুশ বাহিনীর মোকাবিলায় পাঠানো হচ্ছে এয়ার ডিফেন্স মিসাইল। ইউক্রেনকে ট্যাঙ্ক বিধ্বংসী অস্ত্রও দিচ্ছে ন্যাটো। ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে", ট্যুইটারে জানান ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টোলটেনবার্গ।


এদিকে বেলারুশে ইউক্রেনের সঙ্গে শান্তি-আলোচনা ব্যর্থ হওয়ার পর আরও বড়সড় হামলার ছক রয়েছে রাশিয়ার। এমনই আশঙ্কা করা করা হচ্ছে। ৬৪ কিলোমিটার লম্বা কনভয় নিয়ে কিভের পথে এগোচ্ছে রুশ সেনা, উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে সেই ছবি। আকাশ ও জলপথেও হামলার আশঙ্কা। কিভের নাগরিকদের বাঙ্কারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। কঠিন এই পরিস্থিতিতেও লড়াইয়ের ময়দান ছাড়তে নারাজ জেলেনস্কি। তাঁর এই মানসিকতার জন্য আন্তর্জাতিক মঞ্চে প্রশংসিত হচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট।