কিভ: আন্তর্জাতিক চোখরাঙানির তোয়াক্কা না করেই ইউক্রেনের রাজধানী পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে রাশিয়া (Russia Ukraine War)। চেরনোবিল পরমাণু কেন্দ্রেরও (Chernobyl Nuclear Power Plant) দখল নিয়েছে তারা। আমেরিকা এবং ন্যাটো (NATO) যাতে চেরনোবিলকে সামরিক কাজে ব্যবহার করতে না পারে, তার জন্যই এমন পদক্ষেপ বলে দাবি তাদের। কিন্তু রুশ বাহিনীর হাতে চেরনোবিলের দখল যাওয়ার পর থেকেই বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে বলে এ বার অভিযোগ সামনে এল। তা নিয়ে ইউরোপীয় দেশগুলির সাহায্য প্রার্থনা করছে ইউক্রেন সরকার।


রুশ সেনা (Russia Ukraine War NEws) দখল নেওয়ার পর থেকেই চেরনোবিলে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা বাড়তে শুরু করেছে বলে দাবি করে ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ বিষয়ক মন্ত্রক। বলা হয়, ‘‘আগ্রাসী শক্তির হাতে উঠেছে চেরনোবিল। সেখানে থাকা প্লুটোনিয়াম-২৩৯ যে কোনও মুহূর্তে পরমাণু বোমা হয়ে উঠতে পারে। তাতে হাজার হাজার হেক্টর ভূমি প্রাণহীন মরুভূমিতে পরিণত হবে।’’


ওয়াশিংটনে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ওকসানা মারকারোভা অভিযোগ করেন যে, চেরনোবিলে এখন যদি কিছু ঘটে, তার দায় রাশিয়ার। কারণ সেখানে নিয়ম-কানুন শিকেয় উঠেছে। চেরনোবিলে কর্মরত ৯২ জন কর্মীকে রুশ সেনা পণবন্দি করে রেখেছে বলেও অভিযোগ তোলেন তিনি। ইউক্রেনীয় পরিবেশ মন্ত্রকের দাবি, চেরনোবিল রুশ সেনার দখলে যাওয়ার পরিণাম ভয়ঙ্কর হতে পারে।


যদিও ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা জানিয়েছে, আচমকা বিপুল পরিমাণ সেনা এবং সরঞ্জাম জড়ো হওয়ায় তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা বেড়ে গিয়েছে। এত কিছুর আনাগোনায় তেজস্ক্রিয় ধূলিকণা বাতাসে উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক পারমাণিক শক্তি সংস্থা (The International Atomic Energy Agency/IAEA)  আবার জানিয়েছে যে, এই তেজস্ক্রিয় বিকিরণ সাধারণ মানুষের জন্য তেমন ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তাদের বক্তব্য, ‘‘নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ঘণ্টায় ৯.৪৬ মাইক্রোসিভার্টস তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ধরা পড়েছে, যা যথেষ্টই কম এবং পরমাণু শক্তি কেন্দ্র সংলগ্ন এলাকার নিরিখে নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।’’


বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে সেনা অভিযানের প্রথম দিন চেরনোবিল দখল করে রাশিয়া। শুক্রবার সে দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রকের মুখপাত্র ইগর কোনাশেঙ্কভ জানান, ২৪ ফেব্রুয়ারি চেরনোবিলের দখল নিয়েছে রুশ সেনা। সেখানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা স্বাভাবিক রয়েছে। পরমাণু কেন্দ্রের কর্মীরা আগের মতই কাজ করছেন, নজর রাখছেন তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ওঠানামার দিকে। ইউক্রেনের প্রতিবেশি দেশ পোল্যান্ডও জানিয়েছে যে, বায়ুমণ্ডলে তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার কোনও রেকর্ড নেই তাদের কাছে।


আরও পড়ুন: Russia Ukraine War: রাষ্ট্রপুঞ্জে এক অবস্থান ভারত-চিনের, রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোটদান থেকে বিরত দুই দেশই


পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম পারমাণবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল চেরনোবিল। ১৯৮৬ সালের এপ্রিলে সেখানকার চুল্লিতে বিস্ফোরণ ঘটে। মুহূর্তের মধ্যে সেখান থেকে পারমাণবিক তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ে, যা গ্রাস করে ফেলে দেড় লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের বেশি অঞ্চলে। হিরোশিমা-নাগাসাকির তুলনায় চেরনোবিল থেকে ৫০০ গুণ বেশি তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায় বলে জানা যায়।  রাশিয়া, ইউক্রেন, বেলারুশ এমনকি চিন এবং আমেরিকাতেও তার প্রভাব টের পাওয়া গিয়েছিল।


ওই দুর্ঘটনার প্রভাবে উত্তর ইউরোপের বায়ুমণ্ডলে তেজষ্ক্রিয় বিকিরণের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যায়। সুইডেনের পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, নিজেদের দেশেই কিছু ঘটেছে বলে প্রথমে ধারণা জন্মায় তাদের।  তাই তড়িঘড়ি সুইডেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরে জানা যায় চেরনোবিলে বিপর্যয় ঘটেছে। রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেব অনুয়ায়ী, চেরনোবিল বিপর্যয়ের পর তেজস্ক্রিয় বিকিরণের (Radiation Levels) প্রভাবে প্রায় ৪ হাজার মানুষ মারা যান।


তবে আজও চেরনোবিলের ধ্বংসস্তূপ পুরোপুরি পরিষ্কার করা যায়নি। এখনও সেখানে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ রয়েছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের। সব কিছু পরিষ্কার করে ২০৬৫ সালের আগে সম্পূর্ণ ভাবে সেটিকে নিরাপদ ঘোষণা করা সম্ভব নয় বলে দাবি তাঁদের।