কিভ: দিন সাতেক আগেও সাজানো গোছানো ছিল শহর। এখন চারিদিকে শুধুই ধ্বংসস্তূপ (Russia Ukraine War)। যুদ্ধের হানাহানি থেকে এ বার রক্ষা পেল না নাৎসি জার্মানির নৃশংসতার স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়ানো সৌধক্ষেত্রেও। রুশ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ধুলোয় মিশে গেল নাৎসি (Nazzi Force) শক্তির নৃশংসতার সাক্ষী বহনকারী ইউক্রেনের বাবিন ইয়ার গণহত্যা সৌধ ( Babyn Yar Holocaust Memorial)। তাতে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে বলে মন্তব্য করলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelensky)।
মঙ্গলবার ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে রাশিয়া কিভের রেডিও টাওয়ার গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ ইউক্রেন সরকারের। তার ঠিক পাশেই অবস্থিত বাবি ইয়ার গণহত্যা সৌধেও ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে বলে দাবি তাদের। তাতে সব মিলিয়ে পাঁচ জন মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় নিন্দার ঝড় উঠেছে সর্বত্র। আন্তর্জাতিক ইহুদি সংগঠন রুশ সরকাকে নাৎসি জার্মানির সঙ্গে তুলনা করেছে।
ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে সৌধটি ধুলোয় মিশে গিয়েছে বলে মঙ্গলবার দাবি করেন জেলেনস্কি (Russia Ukraine War News)। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘গোটা বিশ্বকে বলছি, বাবিন ইয়ারে যদি বোমাই আছড়ে পড়ে, তাহলে ৮০ বছর ধরে আর হবে না বলে লাভ কী হল! পাঁচ জন মারা গিয়েছেন। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটছে...।’
এই ঘটনায় বিশ্বের সামগ্রিক ইহুদি জনসমর্থনও প্রার্থনা করেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, “বিশ্বের সমস্ত ইহুদিদের অনুরোধ করছি আমি। কী ঘটছে আপনারা কি দেখতে পাচ্ছেন না ? লক্ষ লক্ষ ইহুদিদের এই সময় নীরব থাকা উচিত নয়। ফ্যাসিবাদ নীরবেই মাথা তোলে। নিরীহ নাগরিকদের হত্যার বিরুদ্ধে সরব হন। ইউক্রেনীয়দের হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান।”
আরও পড়ুন: Russia Ukraine Conflict: কিভের পথে রুশ বাহিনীর ৬৪ কিমি লম্বা গাড়ির সারি, ধরা পড়ল উপগ্রহ চিত্রে
জেলেনস্কির চিফ অফ স্টাফ আন্দ্রি ইয়েরমাক বলেন, “বাবিন ইয়ার সৌধে ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়েছে। আবারও বর্বরদের হাতে মৃত্যু ঘটছে গণহত্যার শিকার হওয়া মানুষের।” ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে মার্কিন সরকার। জেলেনস্কির সঙ্গে ফোনে আলাদা করে কথা বলেছেন তিনি। মার্কিন ইহুদি সংগঠনের তরফেও রাশিয়ার ভূমিকার তীব্র নিন্দা করা হয়েছে। তাদের বক্তব্য, ‘রাশিয়ার অবৈধ আক্রমণের এটাই বাস্তব চিত্র। বাবিন ইয়ার সৌধে আছড়ে পড়ছে বোমা, যা কি না দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়ঙ্করতম গণহত্যার স্মৃতিবাহক। সোভিয়েত পূর্বপুরুষের পথেই চলছেন পুতিন, গণহত্যার সৌধকে অপবিত্র করলেন তিনি।’
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রাক্কালে নাৎসি শক্তি ইউক্রেন দখল করে। ১৯৪১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কিভে অবস্থিত ওই জায়গায় প্রায় ৩৩ হাজার ইহুদিকে নৃশংস ভাবে খুন করে তারা। সেই সময় কিভে ৩৩ হাজারের কাছাকাছি ইহুদিরই বাস ছিল। অর্থাৎ সেখানকার সামগ্রিক ইহুদি জনসংখ্যাকেই নাৎসি বাহিনী খুন করে বলে অভিযোগ। সেই ভয়ঙ্কর ইতিহাসকে স্মৃতিতে গেঁথে রাখতেই গণহত্যার ওই ক্ষেত্রে সৌধ গড়ে তোলা হয়। তাতে আঘাত হানায় তীব্র নিন্দার মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ সরকারকে।
তবে ইউক্রেনের উপর আঘাত হানা থেকে বিরত হওয়ার কোনও লক্ষণই দেখাচ্ছে না রাশিয়া। দেশের প্রেসিডেন্ট ভঅলাদিমির পুতিনের দাবি, রুশ ভাষায় কথা বলা দেশের পূর্ব অংশের মানুষকে হত্যা করে চলেছে ইউক্রেন। ইউক্রেন সরকারের বিরুদ্ধেই নাৎসি শাসন চালানোর অভিযোগ এনেছেন তিনি। ইউক্রেনের এই নাৎসি শক্তিকে পরাভূত না করা পর্যন্ত পিছু হটবেন না বলে জানিয়েছেন তিনি।