কিভ: প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে বসে শুধু নির্দেশ দিচ্ছেন না তিনি। দেশবাসীকে বিপদে ফেলে রেখে পালানোর পরিকল্পনাও নেই। বরং শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে শত্রুর হাত থেকে দেশ এবং দেশবাসীর স্বাধীনতাকে রক্ষা করে যাবেন বলে এ বার বার্তা দিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelensky)। প্রত্যাখ্যান করলেন আমেরিকার তরফে তাঁকে নিরাপদে কিভ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব।  সাফ জানিয়ে দিলেন, এই মুহূর্তে অস্ত্রশস্ত্রই একমাত্র প্রয়োজন তাঁর। পালানোর জন্য বিমান বা গাড়ি নয়।


একটি মার্কিন সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার তরফে নিরাপদে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয় জেলেনস্কিকে (Russia Ukraine War)। কিন্তু ফোনে জেলেনস্কি তাঁদের বলেন, ‘‘আমার লড়াই এখানেই। প্রচুর অস্ত্রশস্ত্রের প্রয়োজন। পালানোর গাড়ি বা বিমানের নয়।’’


ইউক্রেনের সরকার ফেলে দেওয়াই যে তাঁদের লক্ষ্য, ইতিমধ্যেই তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তাঁর সেনাবাহিনী ঢুকে পড়েছে পড়শি দেশের রাজধানী কিভে। তাতেই আমেরিকার তরফে জেলেনস্কিকে দেশ ছাড়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। কিন্তু তা প্রত্যাখ্যান করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। পরিবর্তে শনিবার সকালে যখন মুহুর্মুহু ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়ছে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে অনতিদূরে, গোলাগুলির শব্দে কাঁপছে চারিদিক, সেই সময় রাস্তায় নেমে আসেন জেলেনস্কি।



আরও পড়ুন: Russia-Ukraine Crisis: যুদ্ধের মধ্যেই আলোচনার দরজা খোলার চেষ্টা ইউক্রেন ও রাশিয়ার, সময় ও স্থান নিয়ে চলছে কথা


প্রেসিডেন্ট ভবনের ঠিক সামনের রাস্তা থেকে এ দিন ভিডিয়ো রেকর্ড করে নেটমাধ্যমে পোস্ট করেন জেলেনস্কি। তাতে বলেন, ‘‘আমরা হাতিয়ার ফেলে আত্মসমর্পণ করব না। দেশকে রক্ষা করতে জান লড়িয়ে দেব। সেনাবাহিনীকে আত্মসমর্পণ করার নির্রদেশ দিয়েছে বলে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছেছে। তাতে কান দেবেন না। সত্যই আমাদের অস্ত্র। এটা আমাদের দেশ। আমাদের সন্তানরা রয়েছে। মাতৃভূমিকে আমরা রক্ষা করবই।’’ লোকবল, সামরিক বলে এগিয়ে রাশিয়ার সামনে জেলেনস্কির এই অবস্থান প্রশংসা কুড়োচ্ছে। 



রুশ আগ্রাসনের মুখে প্রথম থেকেই যদিও রাস্তায়, সেনা শিবিরে দেখা গিয়েছে জেলেনস্কিকে। শুক্রবার রাতেও সেনার সঙ্গে ভিডিয়ো পোস্ট করেন তিনি। বলেন, ‘‘আমি এখানেই রয়েছি, আমাদের নাগরিকরা রয়েছেন, সেনাও রয়েছে।’’ শত্রুপক্ষের শতাধিক সৈনা নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন জেলেনস্কি। তবে ইউক্রেনেও যে হতাহতের সংখ্য়া বেড়ে চলেছে, তা-ও মেনে নেন। তিনি বলেন, ‘‘এই রক্তপাত বন্ধ করাই আমাদের লক্ষ্য। শত্রুপক্ষেরও অনেক ক্ষতি হচ্ছে। সীমান্ত পেরিয়ে ঢোকা ওদের শতাধিক সৈন্য মারা গিয়েছেন। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে আমাদেরও ক্ষতি হচ্ছে। কিন্তু ইউক্রেনের নাগরিকরা উৎসাহ হাহরাচ্ছেন না। আগ্রাসী শক্তির বিরুদ্ধে সর্বশক্তি দিয়ে লড়ে যাচ্ছেন।’’


ইউক্রেনের বিরুদ্ধে রাশিয়া সরকার একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ব্যবহার করছেন বলেও দাবি করেন জেলেনস্কি। তাঁর অভিযোগ, লোকালয় থেকে কিন্ডারগার্টেন স্কুল যত্রতত্র আছড়ে পড়ছে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র। ঘটনাচক্রে এ দিনই রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে রাশিয়ার নিন্দায় আনা প্রস্তাব ধোপে টেকেনি। ভারত, চিন, সংযুক্তি আরব আমিরশাহি ভোটদান থেকে বিরত থেকেছে। ১১টি দেশ ভোট দিলেও, স্থায়ী সদস্য হিসেবে ভেটো প্রয়োগ করে তা আটকে দিয়েছে রাশিয়া। যদিও বিগত দু’মাস ধরে পরিস্থিতি যখন ক্রমশ তেতে উঠছিল, সেই সময় বার বার পশ্চিমি দেশগুলিকে উত্তেজনার আবহ তৈরি করা থেকে বিরত থাকতে আবেদন জানিয়েছিলেন জেলেনস্কি। কিন্তু যুদ্ধ যখন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে, ইউরোপ বা কোনও দেশের কাছ থেকে সাহায্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।