কাবুল: ৯/১১-র ২০ বছর পর  আমেরিকার ট্যুইন টাওয়ারে জঙ্গি হামলার নিন্দা করে বিবৃতি প্রকাশ করল আফগানিস্তানের তালিবান। ইসলামিক রিপাবলিক অফ আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রকের জারি করা ওই বিবৃতিতে আল-কায়দারও সমালোচনা করা হয়েছে। এমনকি তালিবানের সঙ্গে দূরত্ব বোঝাতে আল-কায়দাকে জঙ্গি সংগঠন বলে কার্যত স্বীকারই করে নেওয়া হয়েছে ওই বিবৃতিতে। আফগানিস্তানেও গত ২০ বছর ধরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে বলে তালিবানের তরফে ওই বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে।


উল্লেখ্য, আমেরিকা থেকে ১১,১৩১ কিমি দূরে তালিবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে বসেই নিউইয়র্কের ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার ছক কষা হয়েছিল।  ২০০১-র ৯ সেপ্টেম্বর এই হামলা চালানো হয়েছিল। এর ২০ বছর পর ঘটনার নিন্দা করল তালিবান। তালিবান মুখপাত্র আল-কায়দার থেকে নিজেদের দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করেছেন। যে আল কায়দার নেতা ওসামা বিন লাদেন তালিবান শাসনাধীন আফগানিস্তানে গা ঢাকা দিয়েছিল, সেই তালিবান আল কায়দার সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করছে।


আফগানিস্তানের বিদেশমন্ত্রক এক বিবৃতিতে বলেছে, নিরীহদের রক্ত ঝরানো একেবারেই ঠিক নয়। তালিবান মুখপাত্র তারিক গজনীওয়াল বলেছেন, আল কায়দার সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই। জেহাদের নামে নিরীহদের খুন করা একেবারেই ঠিক নয়।


উল্লেখ্য, তালিবান শাসনের বর্তমান মনোভাব নিয়ে ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে।  প্রশ্ন উঠেছে, তালিবান কি সত্যিই বদলে গিয়েছে, না বদলানোর নাটক করছে। কারণ, আফগানিস্তানে এখন যা চলছে, তা কারুর অজানা নেই। তালিবানকে আফগানিস্তানে দারিদ্র জনিত সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। আফগানিস্তানের অর্থনীতি আগে থেকেই বিদেশি সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল। মোট অভ্যন্তরীন উৎপাদন (জিডিপি)-র ৪০ শতাংশই বিদেশি সাহায্যে পূর্ণ হত। আফগানিস্তানে তালিবান কব্জার পর বিদেশি আর্থিক সহায়তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্ক ও আইএমএফ আফগানিস্তানকে আর্থিক সহায়তা বন্ধ রাখার করা জানিয়েছে। আমেরিকা দ্য আফগানিস্তান ব্যাঙ্কের ৯ বিলিয়ন ডলার বিদেশি মুদ্রার ভাণ্ডার ফ্রিজ করে দিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি বন্ধ হয়ে গিয়েছে এবং নগদ হাতে পেতে লোকজনকে ব্যাপক সমস্যার মুখে পড়তে হয়েছে। খাবার-দাবার সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম আকাশ ছুঁয়েছে।  


এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক মহলের স্বীকৃতি আদায় ও বিদেশি আর্থিক সাহায্য ফের চালু হোক-এমনটাই তালিবান চাইছে বলে মনে করা হচ্ছে। এ জন্য তালিবান তাদের ভাবমূর্তি ঠিক করার চেষ্টা করছে। এবং এভাবে বিবৃতির মাধ্যমে বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করছে যে, তারা বদলে গিয়েছে।  তবে তালিবানের উদ্দেশ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সংশয় বহালই রয়েছে। একদিকে  ৯/১১-র নিন্দা তারা করছে, অন্যদিকে, যেদিন পেন্টাগনে মার্কিন পতাকা শোকে অবনত থেকেছে, সেইদিন আফগানিস্তানের রাষ্ট্রপতি ভবনে নিজেদের পতাকা ফের উড়িয়েছে তালিবান। এরইমধ্যে দারিদ্রের সম্মুখীন তালিবান তাদের রং বদলের চেষ্টা করছে। যদিও চিন ও পাকিস্তান ছাড়া, বিশ্বের অন্যান্য দেশ আফগানিস্তান নিয়ে আপাতত ‘ওয়েট অ্যান্ড ওয়াচ’ নীতি গ্রহণ করেছে।