কাবুল: আধুনিকতার ছাঁচে ফেলে নিজেদের ঘষামাজার প্রতিজ্ঞা নিয়েছিল। মেয়েদের শিক্ষা, স্বাধীনতা নিয়ে প্রতিশ্রুতিও ছিল ভূরি ভূরি। কিন্তু আফগানিস্তানে সময় যত এগোচ্ছে, ততই পরিষ্কার হচ্ছে তালিবান (Taliban) অভিসন্ধি। এ বার দেশে মেয়েদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ করল তারা। কাবুল-সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এই নিয়ম চালু হয়েছে। খাদ্যসঙ্কট, অর্থনৈতিক সঙ্কটে যখন যুঝছে দেশ, সেই সময় আফগা মহিলাদের উপর তাদের এই কড়া অবস্থান ঘিরে নিন্দার ঝড় উঠছে।
মেয়েদের গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞা তালিবানের
আফগানিস্তানের (Afghanistan) তালিবান সরকার যদিও বিজ্ঞপ্তি জারি করে এমন কোনও সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করেনি। তবে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম সূত্রে বিষয়টি সামনে এসেছে। জানা গিয়েছে, বিভিন্ন প্রদেশের প্রশাসনকে মৌখিক ভাবে নিজেদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে তালিবান নেতৃত্বের তরফে। সেই মতো বেশ কিছু দিন আগে থেকেই সেখানে মেয়েদের ড্রাইভিং লাইসেন্স দেওয়া বন্ধ হয়েছে।
গত বছর ১৫ আগস্ট আফগানিস্তানে তালিবান শাসন পুনরায় কায়েম হওয়ার পর থেকেই সে দেশে মহিলাদের জীবনধারণের অধিকার নিয়ে আশঙ্কা দেখা দেয়। আন্তর্জাতিক চোখরাঙানি এড়াতে মেয়েদের শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হবে না বলে প্রথমে যদিও ঘোষণা করে তালিবান। হিজাব, বোরখা ছাড়া বাড়ির বাইরে পা রাখা নিয়েও নিষেধাজ্ঞাও শিথিল করার কথা বলে তারা। কিন্তু সময় যত এগোতে থাকে, ততই সেই প্রতিশ্রুতির বিচ্যূতি চোখে পড়ে। বিভিন্ন প্রান্তরে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ব্ধ হয়। হিজাব নিয়ে জারি হয় ফতোয়া। লিপস্টিক, হিলতোলা জুতো পরা, এমনকি জোরে কথা বলার উপরও নেমে আসে খাঁড়া। সেই পরিস্থিতিতেই এ বার মেয়েদের গাড়ি চালানো নিষিদ্ধ হল।
আরও পড়ুন: WHO on Covid Death: করোনায় ৪৭ লক্ষ মৃত্যু ভারতে, জানাল WHO, 'বাড়িয়ে দেখানো হচ্ছে', বলল দিল্লি
আফগানিস্তানে তালিবান পুনরায় ক্ষমতা দখলের আগের কয়েক বছর যদিও সেখানে মেয়েদের গাড়ি চালানোর উপর কোনও রকম নিষেধাজ্ঞা ছিল না। কাবুলের রাস্তায় নিত্যদিনই গাড়ির স্টিয়ারিংয়ে হাত রেখে এগিয়ে যেতে দেখা যেত মেয়েদের। এ বার তাতেই ইতি পড়ল। কূটনীতিকদের মতে, আফগানিস্তানে সঙ্কট ক্রমশ ঘোরাল হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়ে চলেছে। নিত্যদিন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন আফগান মহিলারা।
সম্প্রতি আফগানিস্তানে ষষ্ঠ শ্রেণির ঊর্ধ্বে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার ঝড় উঠলে সাফাই দিতে এগিয়ে আসেন তালিবান নেতৃত্ব। জানানো হয়, যথেষ্ঠ সংখ্যক শিক্ষক না থাকাতেই এমন সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে আপাতত। ঘাটতি পূরণ হয়ে গেলেই নির্দেশ প্রত্যাহার করা হবে। কিন্তু শুধু মেয়েদেরই স্কুলে যাওয়া বন্ধ করা হল কেন, তার সদুত্তর মেলেনি।
আফগানিস্তানের অবস্থান ঘিরে সঙ্কট
কূটনৈতিক সূত্রে খবর, আফগানিস্তানে মানবিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। দেশের সিংহভাগ নাগরিক খাদ্য সঙ্কটের আওতায় চলে এসেছেন। দেশের ২ কোটি ৩০ লক্ষ নাগরিকের কাছে সাহায্য পৌঁছে দেওয়া জরুরি, যা কিনা দেশের ৯৫ শতাংশ জনসংখ্যা।