নিউইয়র্ক: মঙ্গলবার আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এই পরিস্থিতিতে আফগানিস্তানের চলতি পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনার জন্য বৈঠকে বসছে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য অবহিত করতে পারেন এক মার্কিন আধিকারিক।
এর আগে ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও পরিষদের অ-সদস্য দেশ জার্মানি আফগানিস্তান থেকে নিরাপদে প্রত্যাবর্তন সংক্রান্ত প্রস্তাব রেখেছিল। ওই প্রস্তাবে সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, মানবাধিকার ও মানবিক দিক সংক্রান্ত বিষয়গুলি অন্তর্ভূক্ত হতে পারে।
সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের পর যাঁরা কাবুল বিমানবন্দর ছাড়তে চাইবেন, তাঁর নিরাপদে ফেরার সুযোগ দানের প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য ভোট হতে পারে।
এর আগে রুশ সংবাদসংস্থা স্পুটনিক জানিয়েছিল যে, আফগানিস্তান তালিবান কব্জায় নেওয়ার পর সে দেশে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষ মিশন প্রেরণের সম্ভাবনা সংক্রান্ত কোনও আলোচনা নিরাপত্তা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। সূত্রের উল্লেখ করে স্পুটনিক জানিয়েছিল যে, আফগানিস্তান, বিশেষ করে, কাবুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা মিশন পাঠানো নিয়ে নিরাপত্তা পরিস্থিতি এখন কোনও আলোচনা হচ্ছে না।
রাষ্ট্রপুঞ্জ সূত্রে খবর, ইংল্যান্ড, মার্কিন ও ফ্রান্সের প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা চলছে। তা সমগ্র নিরাপত্তা পরিষদ যত শীঘ্র সম্ভব তা অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে লক্ষ্য থাকবে, যে আফগানরা দেশ ছাড়তে চাইবেন, তাঁরা যেন নিরাপদে তা করতে পারেন।
আগামীকালই শেষ হচ্ছে আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের সময়সীমা।এখনও কাবুলে রয়েছেন তিনশো মার্কিন নাগরিক। প্রায় ৪৫ হাজার মানুষ আফগানিস্তান ছাড়ার অপেক্ষায় রয়েছেন।
এদিকে, সম্প্রতি, এক তালিবান নেতার সাক্ষাত্কার নিচ্ছিলেন আফগানিস্তানের একটি নিউজ চ্যানেলের অ্যাঙ্কর। তখনই, স্টুডিওয় ঢুকে পড়ে ৭ সশস্ত্র তালিবান জঙ্গি! সঞ্চালক কী প্রশ্ন করবেন, তা নির্দিষ্ট করে বলে দেয় তালিবান জঙ্গিরা।
১৫ অগাস্ট কাবুল দখলের পর তালিবান প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, আফগানিস্তানে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে সংবাদমাধ্যম। এটা ছিল, আফগানিস্তানে ক্ষমতা দখলের পর তালিবানের প্রথম ইন্টারভিউ।১৭ অগাস্ট, বেহেস্তা আর্ঘান্দ কে দেওয়া এই ইন্টারভিউতে দাবি করা হয়েছিল, এই তালিবান আর আগের তালিবান এক নয়। কিন্তু সময় যত এগিয়েছে, ততই মুখোশ খুলে গিয়েছে তালিবানের।প্রথমে মহিলা সঞ্চালকদের নিষিদ্ধ করা হয়। সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল থেকে বরখাস্ত করা হয় খাদিজা আমিন নামে পরিচিত এই মহিলা সাংবাদিককে।
কাবুলের রাস্তায়, সাংবাদমাধ্যমের কর্মী এক যুবককে বন্দুক দিয়ে বেধড়ক মারধরের ছবিও সামনে এসেছে।এক জার্মান সাংবাদিককে না পেয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যকে খুন করেছে তালিবান জঙ্গিরা। এসবের পর আর আফগানিস্তানে নিজেকে নিরাপদ মনে করেননি তালিবানের সাক্ষাত্কারর নেওয়া মহিলা সাংবাদিক বেহেস্তা। সম্প্রতি পরিবারকে নিয়ে কাতারে আশ্রয় নিয়েছেন।
এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপুঞ্জ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশন এবং সংবাদমাধ্যম নিয়ে কাজ করা সংস্থাগুলির উদ্দেশে একটি খোলা চিঠি লিখেছেন আফগান সাংবাদিক, চিত্র সাংবাদিক ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীরা।
তাতে বলা হয়েছে, সংবাদমাধ্যমের কর্মী, তাঁদের পরিবার ও সম্পত্তি যেভাবে ক্রমবর্ধমান চ্যালেঞ্জ এবং হুমকির সামনে পড়ছে, তা বিবেচনা করে, রাষ্ট্রপুঞ্জ এবং আশ্রয়দাতা দেশগুলির কাছে আমাদের জীবন এবং পরিবারকে বাঁচানোর জন্য পদক্ষেপ করার আহ্বান জানাচ্ছি।