লন্ডন: আপনার ফোনে রাখা পাসওয়ার্ড ও পিন সুরক্ষিত তো?
সম্প্রতি, একটি গবেষণায় উঠে এসেছে, আপনি যখন এই সংবেদনশীল ও গোপন তথ্য দিচ্ছেন, তখন কেবলমাত্র স্মার্টফোনের ‘মোশন সেন্সর’-কে হাতিয়ার করেই সেই তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে হ্যাকাররা।
ব্রিটেনের নিউক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল সাইবার বিশেষজ্ঞ হাতেকলমে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে একবার আন্দাজ করেই চার-ডিজিটের পিন নম্বর হাতিয়ে নেওয়া যেতে পারে। শতাংশের বিচারে সেই সাফল্যের হার প্রায় ৭০। ক্রমপর্যায়ে, পঞ্চমবারে হ্যাকাররা, ১০০ শতাংশ সাফল্যের সঙ্গে ওই তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
কিন্তু, কী করে এই তথ্য চলে যাচ্ছে হ্যাকারদের কাছে? বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, ফোনের অভ্যন্তরীণ সেন্সরই হ্যাকারদের আসল হাতিয়ার। তাঁরা জানান, অধিকাংশ গ্রাহকই টের পান না, কখন তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে যাচ্ছে। এমনকী, ফোনের মধ্যে যে প্রায় ২৫টি বিভিন্ন ধরনের সেন্সর রয়েছে, তার অধিকাংশ সম্পর্কেই ওয়াকিবহাল নন তাঁরা বলেও জানান গবেষকরা।
ওই বিশেষজ্ঞ দলের অন্যতম সদস্য মারিয়ম মেহরনেজাদ বলেছেন, অধিকাংশ স্মার্টফোন, ট্যাবলেট এবং অন্যান্য গ্যাজেটের মধ্যে একাধিক সেন্সর রয়েছে। যেমন—জিপিএস, ক্যামেরা, মাইক্রোফোন, জাইরোস্কোপ, প্রক্সিমিটি, এনএফসি, রোটেশন সেন্সর এবং অ্যাক্সেলেরোমিটার।
তিনি যোগ করেন, মোবাইল অ্যাপলিকেশন এবং ওয়েবসাইট এই সেন্সরগুলিকে অ্যাক্সেস করার জন্য গ্রাহকের থেকে কোনওপ্রকার ‘পার্মিশন’ বা অনুমতি চায় না। ফলে, এই অ্যাপের মধ্য থাকা বিভিন্ন ম্যালওয়্যার (ম্যালিসিয়াস সফটওয়্যার) ফোনের মধ্যে থেকে অত্যন্ত গোপনে ওই সব তথ্যের ওপর ‘নজরদারি’ চালাতে পারে এবং প্রয়োজনমতো সেগুলিকে ব্যবহার করতে পারে।
কী কী তথ্য হাতাতে পারে হ্যাকাররা? সাইবার বিশেষজ্ঞদের মতে, ম্যালওয়্যার ও মোশন সেন্সরকে ব্যবহার করে ফোন থেকে কল টাইমিং, গ্রাহক ফোনে কখন কী করছেন তার বিস্তারিত তথ্য ছাড়াও, টাচ ফাংশন এবং পিন ও পাসওয়ার্ডের দখল নিতে পারে।
এখানেই শেষ নয়। ধরে নেওয়া যাক, কোনও গ্রাহক অনলাইন ব্যাঙ্কিং অ্যাকাউন্টেক কাজ সেরে কোনওভাবে লগ-আউট না করেই বেরিয়ে এসেছেন। তার কিছুক্ষণ পর ফোনের ব্রাউজারে অন্য কোনও পেজ ওপেন করেছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রাউজারে থাকা বিভিন্ন ম্যালিসিয়াস কোড আগের পেজ থেকে গ্রাহকের ব্যাঙ্কের যাবতীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে।
মারিয়ম জানান, মানুষ তাঁদের স্মার্টফোনে ক্যামেরা ও জিপিএস-এর ওপর বেশি গুরুত্ব বা সময় ব্যয় করেন। কিন্তু, অন্য সেন্সরগুলি যে তাঁদেপ ফোনে আড়ি পেতে রয়েছে সেই নিয়ে তাঁরা উদাসীন। তিনি এ-ও জানান, বর্তমান যুগে এই সেন্সর হল স্মার্টফোন নির্মাতা সংস্থাগুলির ইউএসপি। কারণ, মোবাইল ফোনের ব্যবসার সাফল্য অনেকটাই নির্ভর করছে এই সেন্সরের সংখ্যার ওপর।
এখানেই সমস্যা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। প্রযুক্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যের আড়ালে ফোনের মধ্যে সিঁদ কাটছে হ্যাকাররা।