নয়াদিল্লি: পোর্ট ব্লেয়ার যাওয়ার পথে যাত্রীসমেত নিখোঁজ হয়ে যায় বায়ুসেনার বিমান। চিরুণি তল্লাশি চালিয়েও গত সাড়ে সাত বছরে বিমানটির হদিশ মেলেনি। এতদিন পর আচমকাই বঙ্গোপসাগরে ওই বিমানটির ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মিলল। চেন্নাই উপকূল থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে, বঙ্গোপসাগরের ৩.৪ কিলোমিটার গভীর থেকে বিমানের ধ্বংসাবশেষের খোঁজ মিলেছে। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করেই বিমানের ধ্বংসবশেষ উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। (Wreckage of IAF Plane)
২০১৬ সালের ২২ জুলাই চেন্নাই থেকে আন্দামানের পোর্ট ব্লেয়ারের উদ্দেশে রওনা দেয় ভারতীয় বায়ুসেনার পরিবহণের কাজে ব্যবহৃত AN-32 বিমানটি। ২৯ জন যাত্রীকে নিয়ে রওনা দেয় বিমানটি। কিন্তু গন্তব্যে আর পৌঁঁছয়নি বিমানটি, বরং উড়ানের কিছু ক্ষণ পরই নিখোঁজ হয়ে যায়। বিমানটির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ছিল K-2743. বিমানটি নিখোঁজ হয়ে গেলে তন্নতন্ন করে খোঁজা হয় সেটিকে। জলে নামানো হয় ডুবুরিও। কিন্তু সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। (Bay of Bengal)
তারই মধ্যে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক অধীনস্থ চেন্নাইয়ের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ওশান টেকনোলজি-র তরফে নামানো গভীর জলে তল্লাশি চালানোর স্বয়ংক্রিয় যান, অটোমেটিক আন্ডারওয়াটার ভেহিকল (AUV) । একরকম অপ্রত্যাশিত ভাবেই সাড়ে সাত বছর আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া বায়ুসেনার ওই বিমানের ধ্বংসাবশেষের হদিশ পায়। স্বয়ংক্রিয় ওই গভীর জলের যানটি নরওয়ে থেকে আনা হয়েছিল ছ'মাস আগে। গত সপ্তাহে পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য বঙ্গোপসাগরের জলে নামানো হয় সেটিকে। তাতেই ধাতব কিছু অংশ উদ্ধার হয়, যা ওই বিমানের বলে জানা গিয়েছে।
জানা গিয়েছে, ওই স্বয়ংক্রিয় জলযানটিকে নামিয়ে সাগরের ৩,৪০০ মিটার এলাকায় তল্লাশি চালানো হয়। ব্যবহার করা হয় উচ্চ শক্তিসম্পন্ন ফোটোগ্রাফি প্রযুক্তিও, তাতেই সাগরের তলদেশে বিমানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে থাকতে দেখা যায়। কেন্দ্রীয় ভূবিজ্ঞান মন্ত্রকের সচিব এম রবিচন্দ্রণ জানিয়েছেন, প্রথমে অশোক চক্রের প্রতীকটি চোখে পড়ে। সকলে ভেবেছিলেন কোনও জাহাজের অংশ বোধহয়। আরও খুঁজেপেতে বাকি ধাতব অংশও চোখে পড়ে। পরে ভারতীয় নৌবাহিনী এবং বায়ুসেনা ওই ধ্বংসাবশেষকে নিখোঁজ বিমানের অংশ বলে চিহ্নিত করে।
তবে নিখোঁজ বিমানের ধ্বংসাবশেষ খুঁজতে নয়, বরং পরীক্ষা নিরীক্ষা চালাতেই জলে নামানো হয়েছিল স্বয়ংক্রিয় জলযানকে। বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের ঘটনা একেবারেই অপ্রত্যাশিত বলে জানিয়েছেন রবিচন্দ্রণ। ওই বিমানের ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করায় পীড়িত পরিবারগুলিও অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকার বদলে, ভবিষ্যতের পথে এগোতে পারবেন বলে মনে করা হচ্ছে। যে ২৯ জন যাত্রীসমেত নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিল বিমানটি, তাঁদের কারও বেঁচে থাকার সম্ভাবনা নেই। কী কারণে বিমানটি দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয়, নতুন করে তদন্ত শুরু হচ্ছে।