কলকাতা: গত বছরে কঠিন সময়ের মধ্যে কেটেছে সময়। এক বছরে প্রাপ্তির পাশাপাশি হারানোর তালিকাও দীর্ঘ। কিন্তু প্রতিকূল সময়ে এমন কিছু ঘটনা, মুহূর্ত তৈরি হয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। যা মন কেড়েছিল নেটিজেনদের। করোনা ভাইরাসের জেরে জেরবার জীবনে সেই সব ভিডিও আনন্দের রসদ জুগিয়েছিল। মন কাড়া গান থেকে করোনাকালের নাচ, কিংবা মদন মিত্রের 'লাভলি' থেকে বছর শেষের সেনসেশন 'কাঁচা বাদাম', এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এ বছরের সেরা ১০ ভাইরাল ভিডিও- 


মানিকে মাগে হিতে


২০২১ সালে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর মধ্য়ে অবশ্য়ই অন্য়তম মানিকে মাগে হিতে গানটি। আসমুদ্রহিমাচল বছরভর মেতে উঠেছিল শ্রীলংকার সিংহলি ভাষার মিষ্টি এই গানের সুরে। ২৮ বছর বয়সি গায়িকা ইয়োহানি ডি' সিলভারের এই গান মন ছুঁয়ে গেছে আট থেকে আশির। ভাষার বেড়াজাল টপকে শ্রোতার অন্তরে পৌঁছে গিয়েছিল  মানিকে মাগে হিতে।


পিপিই কিট পরে চিকিৎসকদের নাচ


২০২০- এর মত ২০২১ শেও করোনার কামড়ে নাজেহাল গোটা বিশ্ব। মনোবিদরা বলেছেন, করোনা আক্রান্ত হলে শুধুমাত্র শরীর নয়, চাপ পরে মনেও। তাই এই সময় রোগীদের যতটা আনন্দে রাখতে কোভিড ওয়ার্ডের মধ্য়েই পিপিই কিট পরে নাচতে দেখা গেল এক নার্সকে। তাঁর নাচের ভিডিয়ো প্রকাশ্য়ে আসতেই নেটমাধ্যমে মুহূর্তে  ভাইরালও হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, কলকাতার উডল্যান্ডস হাসপাতালের ওই নার্সের নাম অজিতকুমার পট্টনায়েক।


বচপান ক্য়ায়া প্য়ায়ার


২০২১ শে বচপান ক্য়ায়া প্য়ায়ার গানের স্রোতা গা ভাসাননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। ২০১৯ সালে একদিন স্কুলের এক স্যার ছোট্ট সহদেবকে বলেন রাজস্থানের লোকসঙ্গীত বচপন কা পেয়ার গানটা গাইতে। সহদেব স্কুল ইউনিফর্ম পরেই গানটা গায়। আর সেই শিক্ষক মহাশয় সহদেবের গানটি রেকর্ডিং করেন। পরে তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটা শেয়ারও করেন। কিন্তু গত দু'বছর এই ভিডিওটা ভাইরাল হয়নি। কিন্তু বাদশা এই গানটি মিক্স করে সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করতেই চারদিকে খোঁজ পড়ে যায় গানের গলা যার, সেই শিশু শিল্পী কে? যার পর খোঁজ মেলে ছত্তিশগড়ের সুকমা জেলার ছিন্দগড় ব্লকের বাসিন্দা সহদেবের।


মদন মিত্র ভাইরাল ভিডিও


অনস্ক্রিন হোক বা অফস্ক্রিন। আক্ষরিক অর্থেই রণে বনে জলে জঙ্গলে যিনি অলটাইম হিট, তিনিই মদন মিত্র। এবছরও নিজের বিভিন্ন কর্মকীর্তিতে তিনি বারবার উঠে এসেছেন খবরের শিরোনামে। ২০২১ শে উপ নির্বাচনের আগে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় হয়ে গান গেয়েছিলেন মদন মিত্র। ‘ভবানীপুর টু কামারহাটি, ওয়েস্ট বেঙ্গল টু দেশের মাটি/ মমতার হাত ধরে সামনে হাঁটি’–তাঁর এই গানের ভিডিও প্রকাশ্য়ে আসার পরই ভাইরাল হয়ে যায় নেট দুনিয়ার।


তুমুল বৃষ্টিতে সারমেয়কে আশ্রয় কনস্টেবলের


সোশাল মিডিয়ায় এমন কিছু ছবি ভাইরাল হয় তা নির্বাক কিন্তু অনেক কথা ধরা থাকে ফ্রেমে। তেমনই একটি ছবি চলতি বছরে মন কেড়েছে মহানগরের। যেখানে তুমুল বৃষ্টিতে একই ছাতার তলায় ট্রাফিক কনস্টেবল ও সারমেয়রা। কলকাতা পুলিশ সেই পুলিশকর্মীর পরিচয় প্রকাশ করে ছবিটি পোস্ট করতেই তা ভাইরাল হয়। পুলিশের মানবিক কাজকে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন নেটিজেনরা।


পিপিই কিট পরে সিঁদুর খেলা মহিলাদের


এক অভিনব বিজয়া দশমী। করোনাকালে সচেতনার বার্তা দিতে এবছর দক্ষিণ দমদম এলাকার অমরপল্লি সর্বজনীন দুর্গোৎসবে পিপিই কিট পড়েই দেবীবরণ করেন মহিলারা। পুজোয় নানা কোভিড বিধিনিষেধ ছিল। সংক্রমণ এড়াতে ও সচেতনতার বার্তা দিতেই এমন উদ্যোগ নেন এই ক্লাবের মহিলারা। সেই ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশাল মাধ্যমে। সাধুবাদও জানিয়েছেন অনেকে। 


ইংরেজিতে এমএ পাস করে চা বিক্রি টুকটুকির


পড়াশুনো করে স্বপ্ন ছুঁয়েছেন। কিন্তু বাস্তব বড় কঠিন। ইংরেজিতে এমএ ডিগ্রি থাকলেও চাকরি জোটেনি। কথাতেই আছে পেটের টান বড় বালাই। তাই সংসারের হাল ধরতে চা বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন বছর ২৫-এর যুবতী টুকটুকি। উত্তর ২৪ পরগনার হাবড়ার তাঁর দোকানের নাম দিয়েছেন- ‘এমএ ইংলিশ চাইওয়ালি। টুকটুকির এই লড়াইয়ের কাহিনি ভাইরাল হয়েছে নেটপাড়ায়। কোনও কাজই ছোট নয়, তাই এই ব্যবসার মাধ্যমেই এখন বড় স্বপ্ন দেখছেন ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর কন্যে। 


বরের সামনেই প্রাক্তন প্রেমিকাকে সিঁদুর দান প্রেমিকের


এ যেন সিনেম্যাটিক বিয়ে। প্রেম প্রত্যাখ্যান করে প্রেমিক থেকে প্রাক্তন প্রেমিক করে দিয়েছিলেন প্রেমিকা। কিন্তু সেই ব্যবহার মন থেকে মেনে নিতে পারেননি প্রেমিক। তাই প্রাক্তনের বিয়ের চুপিসারে এন্টি নিয়ে মালাবদলের সময় সিঁদুর পরিয়ে দেন প্রেমিক। মণ্ডপে তখন হতবাক অবস্থা বরের। এমনই এক উদ্ভট বিয়ের সাক্ষী থেকেছে উত্তরপ্রদেশের গোরক্ষপুর। তারপরই সেই ভিডিয়োর বিভিন্ন অংশ ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়।


'রানাঘাটের অন্নপূর্ণা'


শীতকাল মানেই বিয়ের মরশুম। আয়োজন-ভুরিভোজের ছবিতে ছেয়ে গিয়েছিল নেটমহল। সব ছাপিয়ে যে ছবি ভাইরাল হয়েছিল তা হল বিয়েবাড়ির সাজেই মাটিতে বসে স্টেশন চত্বরে এক মহিলার খাওয়ার বিলির। রাত ১টার সময় বিয়ে বাড়ির সমস্ত বাড়তি খাবার স্টেশন চত্ত্বরের পথশিশু ও অভুক্তদের মধ্যে বিলি করে 'রানাঘাটের অন্নপূর্ণা' হয়ে উঠেছিলেন পাপিয়া কর।  তিনি নিজেই প্রথমে সেদিন রাতের ছবি পোস্ট করেন নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায়। সেই ছবি মুহূর্তে ভাইরাল হয়।


কাঁচা বাদাম


'বাদাম বাদাম দাদা কাঁচা বাদাম', আমার কাছে নাই গো বুবু ভাজা বাদাম'।  ২০২১-শে এই গানটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। এমনকি সারা বিশ্বে কয়েক মিলিয়ন মানুষ দেখে ফেলেছেন এই গানের ভিডিও। এখনও ফেসবুক, ইউটিউব, রিলসে চোখ রাখলেই বেজে উঠছে এই গান। কিন্তু যে মানুষটি এই গান করেছেন তিনি পেশায় একজন বাদাম বিক্রেতা। তাঁর নাম ভুবন বাদ্যকর। বীরভূম জেলার দুবরাজপুর ব্লকের অন্তর্গত লক্ষ্মীনারায়ণপুর পঞ্চায়েতের কুড়ালজুড়ি গ্রামের বাসিন্দা তিনি।