কলকাতা: প্রথা ভেঙে বিয়ে, গায়ে নেই সোনার গয়না, নেই শাঁখা-পলা-সিঁদূরও। আর তা নিয়েই সমাজমাধ্যমে তুমুল ট্রোলড বাঙালি কন্যে। দৃপ্ত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন এই কন্যে, বাবার সারাজীবনের সঞ্চয় নিঃশেষ করে সোনার গয়না কিনে বিয়ে (Social Marriage) করবেন না। এই কাজ অত্যন্ত অশ্লীল। তাই গা ভর্তি ইমিটেশনের গয়না পরে সেরেছেন বিয়ে, তাও যজ্ঞ, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান ছাড়াই। পিতৃতান্ত্রিক এই প্রথা মানেন না তিনি। আর এই স্বীকারোক্তিকে ঘিরেই ট্রোলের বন্যা সমাজমাধ্যমে। নেটিজেনদের চর্চায় এখন ঊষসী কর (Ushasee Kar) নামের এই বাঙালি কন্যে। শুধু ট্রোল (Viral Post) নয়, সমাজমাধ্যমে স্পষ্ট দুটি পক্ষ বিভাজন ঘটে গেছে তাঁর এই পোস্টকে ঘিরে। কেউ বিদ্রুপ করছেন, কেউ আবার পিঠ চাপড়ে দিয়ে সাবাসি দিয়েছেন।
ইমিটেশনের গয়না পরে বিয়ে করেছেন ঊষসী। বাঙালি বিয়েতে কন্যার গা ভর্তি সোনার গয়না পরাই তথাকথিত 'রীতি', আর এই গয়না কনের সাজকে ঘিরেই আত্মীয়-স্বজন মহলে চর্চা চলে। বাবা-মা সারাজীবনের সঞ্চয় থেকে সোনার গয়না কিনে মেয়েকে সাজিয়ে পাঠান শ্বশুরবাড়িতে, এমনটাই হয়ে আসছে, কিন্তু এই প্রথা ভেঙে দৃপ্ত ঘোষণা করতেই যেন টনক নড়ে ওঠে নেটিজেনদের। আদপেই যেন এক বিপ্লব ঘটিয়েছেন ঊষসী কর।
২৩ নভেম্বর ফেসবুক প্রোফাইলের ছবি বদলে বিয়ের সাজে একটি ছবি আপলোড করে দৃপ্ত স্বীকারোক্তিতে লেখেন ঊষসী, 'জ্ঞান হওয়া ইস্তক বিয়ে করার দুটো শর্ত দিয়ে রেখেছিলাম বাবা-মা কে। এক, বাবার সারাজীবনের যাবতীয় সঞ্চয় নিঃশেষ করে সোনার গয়না কেনার অশ্লীল কাজটা আমি করবনা। দুই, ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করব না।...কিন্তু, আমার কোনো লজ্জা নেই এটা বলতে, যে বিয়ের দিন সাজার জন্য যা গয়না আমি পরেছি, তার ৯৫% ইমিটেশন। সিঁদুর, শাঁখা পলা, যজ্ঞ ইত্যাদি কিছুই স্থান পায়নি আমার বিয়েতে। আমি পিতৃতান্ত্রিক ধর্মীয় ব্যবস্থায় বিশ্বাস করিনা, আর উল্টোদিকে বাবাকে সারাজীবনের পরিশ্রম আমার গয়না কিনে জলে দিতে হোক, তাতেও বিশ্বাস করি না।'
আর এই পোস্টের কমেন্টেই নানাবিধ মন্তব্যের ঝড় এসে পড়ে। কেউ লেখেন, ‘বেনারসী, মেকআপ, ভালো ফটোশুট, এইগুলোই তো বিয়ে। যজ্ঞ, সিঁদুর দান, কন্যা সম্প্রদান, মন্ত্র, সাত পাক এইগুলো বিয়ে নাকি এগুলো তো কার্টুন! আপনি ইমিটেশন দিয়ে সাজবেন কি ডায়মন্ড দিয়ে সে ব্যাপারে রচনা লিখে ভাইরাল হওয়ার টেকনিক ভালো না!’ আবার জনৈক নেটিজেন ঊষসীর সমর্থনে লেখেন, 'সোনার গয়নার বদলে ইমিটিশন পরে বিয়ে করা একেবারেই উচিত.. এবং এসব ট্যাবু কালচার ভেঙে যাওয়া উচিত সবার পক্ষে সম্ভব নয় ২০২৪ এ দাঁড়িয়ে ৭৪ হাজার টাকা ভরির সোনা কেনা.. কিছু লোকজন প্রেসার কুকার হয়ে যায় সোনা কিনতে গিয়ে... সবার সামর্থ্য সমান নয়.. তাই অবিলম্বে নিজের পছন্দের সোনা বা ইমিটিশন কেনা উচিৎ'। সমালোচনা করতেও ছাড়েননি অনেকে, কেউ লেখেন, 'বাঙালি বিয়েতে সিঁদুর শাঁখা পলার একটা আলাদা সম্মান। যেটা হয়তো টাকা দিয়ে বিচার করা যায় না। যতদিন এগোচ্ছে প্রতিটা মানুষের বিচিত্র শখ হচ্ছে। কেউ সাদা শাড়ি পড়ে বিয়ে করছে, কেউ রুপোর গয়না, কেউবা মহিলা পুরোহিত দিয়ে.. মানে নতুন কিছু একটা করতেই হবে। তা না হলে লোকের কাছে আকর্ষণীয় হবে কিভাবে ??' সবমিলিয়ে বিয়েকে ঘিরে প্রথাভাঙার আওয়াজে দ্বিধাবিভক্ত বাঙালি নেটিজেন।