চম্পাই (অসম) : বয়স ৮০ ছুঁইছুই । কিন্তু, উৎসাহের শেষ নেই । তিনি প্রমাণ করলেন, ইচ্ছা থাকলে বয়স কোনও বাধা-ই হতে পারে না ! উৎসাহ আর ইচ্ছাশক্তিতে ভর করেই তাই আবার স্কুলের চৌহদ্দিতে বছর ৭৮-এর লালরিংথারা (Pu Lalringthara)। 


খুয়াঙ্গগ্লেঙ্গ। ইন্দো-মায়ানমার সীমান্তের (Indo-Myanmar Border) ছোট্ট একটি গ্রাম । ১৯৪৫ সালে এখানেই জন্মগ্রহণ করেন লালরিংথারা। ক্লাস টুয়ে পড়ার সময় বাবাকে হারান। পরিবারের আর্থিক টানাপোড়েনের মুখে ছাড়তে হয় পড়াশোনা। ঝুমের খেতে কাজ শুরু করে দিন গুজরান হতে থাকে। সেই সময় দারিদ্র, ঘন ঘন স্থান পরিবর্তন, সব রকমের প্রতিবন্ধকতারই মুখোমুখি হতে হয়েছে তাঁকে। প্রতিকূল এইসব পরিস্থিতি তাঁকে ইস্পাত-কঠিন করেছে। কিন্তু, এই লড়াই করতে করতেই কখন প্রথাগত শিক্ষা থেকে দূরে চলে যেতে হয়েছে ! যদিও, স্বপ্ন দেখা থামাননি লালরিংথারা। পঠনপাঠন শেষ করার স্বপ্ন। তাই আবার সাহস করে স্কুল-বেঞ্চ-বোর্ড-শিক্ষকদের সান্নিধ্যে অশীতিপর এই বৃদ্ধি । 


রাষ্ট্রীয় মাধ্যমিক শিক্ষা অভিযান হাই স্কুলে ভর্তি হয়েছেন। এখন অবশ্য তাঁর লক্ষ্যটা, পৃথক। ইংরাজিতে দক্ষতা বাড়াতে চান তিনি। যাতে টিভিতে সম্প্রচারিত বিভিন্ন খবর, আবেদনপত্র লিখতে সুবিধা হয়, সেদিকেই নজর দিয়েছেন লালরিংথারা। 


তবে, এই প্রথম সংবাদ শিরোনামে উঠে আসেননি মিজোরামের (Mizoram Man) চম্পাই জেলার রুকাওয়ান গ্রামের এই বৃদ্ধ। এর আগে ২০১৮ সালে ক্লাস ফাইভে ভর্তি হয়েছিলেন লালরিংথারা। সেই সময় শোরগোল পড়ে যায়। নিউ রুইকাওয়ান মিডল স্কুলে নাম লেখান তিনি। তাঁর এই অঙ্গীকারের গল্প আমাদের অনুপ্রাণিত করে। ২০১৮ সালে একটি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে লালরিংথারা বলেছিলেন, 'মিজো ভাষায় লিখতে বা পড়তে আমার কোনও অসুবিধা নেই। যদিও ইংরাজি ভাষা শেখার প্রতি আগ্রহ আমাকে শিক্ষার প্রতি ক্ষুধার্থ করে তুলেছে। এখন সাহিত্যের সব ধরনের লেখাতেই ইংরাজি শব্দের প্রয়োগ থাকে, যা আমাকে প্রায়ই বিভ্রান্ত করে। তাই নিজের দক্ষতার বৃদ্ধির জন্য আমি স্কুলে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিই। মূলত ইংরাজি ভাষায় দক্ষতা বৃদ্ধির জন্যই ফিরে আসা।' 


২০১৮ সালে লালরিংথারার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছিলেন নিউ রুইকাওয়ান মিডল স্কুলের প্রধান শিক্ষক বানলালকিমা। তিনি বলেছিলেন, 'পু লালরিংথারা এক অনুপ্রেরণার নাম। ছাত্র এবং শিক্ষকদের কাছে চ্যালেঞ্জও। একজন প্রশংসনীয় মানুষ। যার শেখার অদম্য উৎসাহ। তাই তাঁকে সবরকমের সাহায্য করা প্রয়োজন।'