Union Budget 2022: কেউ দশবার, কেউ ন’বার, স্বাধীন ভারতে যাঁদের হাত দিয়ে পেশ হয়েছে বাজেট
দেশের অর্থনীতির গতিপথ ঠিক করে দেয় বাজেট। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত ভারতে ৭৩টি বার্ষিক বাজেট পেশ হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট এবং চারটি বিশেষ বাজেটও রয়েছে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appদেশের অর্থমন্ত্রীর হাত দিয়েই সংসদে বাজেট প্রস্তাব পেশ হয়। তার পর তা নিয়ে চলে বিচার-বিশ্লেষণ। স্বাধীনতার পর থেকে এখনও পর্যন্ত কার হাতে বাজেট পেশ হয়েছে, দেখে নিন এক ঝলকে।
দেশভাগের ক্ষত বুকে নিয়ে স্বাধীন ভারতের প্রথম বাজেট পেশ করেন দেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী আরকে সম্মুখম ছেত্তী। ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে সংসদে বাজেট পেশ করেন তিনি। শরণার্থী সঙ্কটের কথা মাথায় রেখে খাদ্যশস্যের জোগান বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রথম ভারতীয় গভর্নর সিডি দেশমুখ। ১৯৪৩ সালে দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। দেশের অর্থমন্ত্রী হন ১৯৫০ সালে। কৃষি প্রধান ভারতের সেচ ব্যবস্থার পরিকাঠামো এবং উৎপাদন বাড়ানোর উপর জোর দেন তিনি। ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন সিডি দেশমুখ।
জওহরলাল নেহরুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত টিটি কৃষ্ণমাচারি দু’বার অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলেছেন। প্রথম বার ১৯৫৭ সালে বাজেট পেশ করেন তিনি। ১৯৬৪ সালে ফের ওই পদে পুনর্নিযুক্ত হন। প্রথম তিনিই সম্পত্তি কর এবং রিয়েল এস্টেট শুল্ক চালু করেন। এতে তাঁর উপর ক্ষুব্ধ হন দক্ষিণপন্থী রাজনীতিক এবং শিল্পপতি মহল।
স্বাধীনতা সংগ্রামী মোরারজি দেশাই ১৮৫৮ থেকে ১৯৬৩ এবং ১৯৬৭ থেকে ১৯৬৯, দু’দফায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন। সবমিলিয়ে ১০টি বাজেট পেশ করেন তিনি। ১৯৭৭ সালে দেশের প্রধানমন্ত্রীও হন মোরারজি দেশাই।
১৯৭৩ সালে বাজেট পেশ করেন যশবন্তরাও চহ্বাণ। ৫৫০ কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতির বিষয় সামনে আসে তাতে। ওই বাজেটকে ‘ব্ল্যাক বাজেট’ বলে উল্লেখ করা হয় সেই সময়।কয়লাখনিগুলির জাতীয়করমের ঘোষণা করেন চহ্বাণ।
১৯৭৫ থেকে ১৯৭৭ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন সি সুব্রহ্মণ্যম। খাদ্য উৎপাদনে ভারতকে আত্মনির্ভর করে তোলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর।
১৯৭৭ থেকে ১৯৭৯ পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন এইচএম পটেল। বিদেশি বিনিয়োগ টানতে শুল্ক ছাড়ের ঘোষণা করেন তিনি।
১৯৭৯ সালের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত অর্থমন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন চৌধরি চরণ সিংহ। দেশের যুক্তরাষ্ট্রীয় রাজস্ব কাঠামোর আমূল পরিবর্তন ঘটে তাঁর হাতে। তাঁর বাজেটেই যুক্তমূল্য করের বিষয়টি উঠে আসে।
রামস্বামী বেঙ্কটরমণ ১৯৮০-’৮১-র বাজেটে জীবনদায়ী ওষুধের উপর থেকে শুল্ক হটান। সাইকেল, তার যন্ত্রাংশ, মাজন, সেলাই মেশিন, প্রেসার কুকার এবং সাবানের উপর থেকেও শুল্ক সরান তিনি।
১৯৮৫-র বাজেটে ভিপি সিংহই মুক্ত অর্থনীতির প্রস্তাব আনেন। শিল্পপতিদের উপর করের বোঝা চাপিয়েছিলেন তিনি। ধীরুভই অম্বানী-সহ একাধিক শিল্পপতির বাড়িতে তাঁর নির্দেশে তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর।
ন্যূনতম কর্পোরেট করের সূচনা করেন রাজীব গাঁধী। বাজেট প্রস্তাব বিবেচনা করতে জিরো-বেসড বাজেটের সূচনাও তাঁর হাতেই।
১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন মনমোহন সিংহ। তাঁর আমলেই উদার অর্থনীতির সঙ্গে পরিচিত হয় দেশ। পরবর্তী কালে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ওই পদে ছিলেন।
১৯৯০ সালে অল্প সময়ের জন্য অর্থমন্ত্রকের দায়িত্ব সামলান যশবন্ত সিনহা। দ্বিতীয় বার ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত অর্থমন্ত্রী ছিলেন। বাজেট পেশের নিয়মে বড় রদবদল ঘটান তিনি। তত দিন পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিন, বিকেল ৫টায় বাজেট পেশ হওয়া নিয়ম ছিল। তিনি সকাল ১১টায় বাজেট পেশ করতে শুরু করেন।
২০০২ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন বিজেপি-র দাপুটে নেতা তথা প্রাক্তন সেনা আধিকারিক জসবন্ত সিংহ। খরার জেরে তখন খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে দেশ। বাজেটে কৃষিক্ষেত্রকে গুরুত্ব দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৯৬ থেকে ১৯৯৭, ১৯৯৭ থেকে১৯৯৮, ২০০৪ থেকে ২০০৮ এবং ২০১২ থেকে ২০১৪, মোট চার দফায় দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন পি চিদম্বরম। নাগরিকদের ব্যক্তিগত আয়করে ছাড় দিয়ে সকলকে চমকে দিয়েছিলেন তিনি। তাতে কর আদায়ের পরিমাণ বেড়েছিল। ২০০৬ সালের বাজেটে পণ্য পরিষেবা করের প্রথম প্রস্তাবকও তিনিই।
১৯৮২ থেকে ১৯৮৪, ২০০৯ থেকে ২০১২, দু’দফায় অর্থমন্ত্রী ছিলেন প্রণব মুখোপাধ্যায়। আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারের থেকে পাওয়া ঋণ মেটানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের কৃতিত্বও দেওয়া হয় তাঁকে।
২০১৪ সাল থেকে ২০১৯ পর্যন্ত দেশের অর্থমন্ত্রী ছিলেন অরুণ জেটলি। মূল বাজেটের সঙ্গে রেল বাজেটকে সংযুক্ত করেন তিনিই। ফেব্রুয়ারির শেষ দিনের পরিবর্তে প্রথম দিন বাজেট পেশের নিয়মও তাঁরই চালু করা।
২০১৯ সালে দেশের অর্থমন্ত্রী হন নির্মলা সীতারামন। সেই থেকে তিনিই বাজেট পেশ করে আসছেন। ব্রিফকেসের বদলে হালখাতার আদলে কাগজে পাজেট পেশের সূত্রপাত করেন তিনি। করোনা কালে গত বছর থেকে ডিজিটাল বাজেট পেশ হচ্ছে।
এ যাবৎ সর্বাধিক বাজেট পেশের রেকর্ড মোরারজি দেশাইয়েরই। অর্থমন্ত্রী হিসেবে মোট ১০টি বাজেট পেশ করেন তিনি। এমন নজির আর কারও নেই।
অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন পি চিদম্বরম ন’টি, প্রণব মুখোপাধ্যায় আটটি, যশবন্ত সিনহা, যশবন্তরাও চহ্বাণ এবং সিডি দেশমুখ সাতটি করে বাজেট পেশ করেছেন। মনমোহন সিংহ এবং টিটি কৃষ্ণমাচারি ছ’টি করে বাজেট পেশ করেছেন নিজেদের সময়কালে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -