Buddhadeb Bhattacharjee: জনস্রোতে মিশে বিদায় নিলেন জননেতা
তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। চলতে চেয়েছিলেন বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো। সেই তিনি, জনতার কোলাহলে আত্মাকে সঁপে দিয়ে, সবাইকে কাঁদিয়ে পাড়ি দিলেন তারার দেশে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appশুক্রবার সকাল থেকেই তপসিয়ার পিস ওয়ার্ল্ডের সামনে জড়ো হন অনেকে। কারও হাতে ফুল, কারও হাতে ছবি। প্রিয় নেতাকে শেষবারের মতো দেখার আকুতি অসংখ্য অনুরাগী ও গুণমুগ্ধদের।
আগেভাগেই পৌঁছে গিয়েছিলেন স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য ও সন্তান সুচেতন। ছিলেন মহম্মদ সেলিম, সুজন চক্রবর্তী, রবীন দেবরা। সকাল ১০.৩৫ মিনিটে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দেহ পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বের করে শববাহী গাড়িতে তোলা হয়। বেঙ্গালুরু থেকে আনা লাল জারবেরা ফুল আর রক্ত পতাকা দিয়ে সাজানো হয় শববাহী গাড়ি। সেখানেই বুদ্ধবাবুকে শেষ শ্রদ্ধা জানান অনেকে।
সকাল ১০.৩৯ মিনিট। পিস ওয়ার্ল্ড ছেড়ে বিধানসভার উদ্দেশে রওনা হয় কনভয়। শববাহী গাড়ির সামনের আসনে ছিলেন সুজন চক্রবর্তী। মুহুর্মুহু উঠতে থাকে লাল সেলাম আর অমর রহে ধ্বনি। পার্ক সার্কাস, পার্ক স্ট্রিট হয়ে শোক মিছিলের মুখ তখন বিধানসভার দিকে।
এদিন সকাল ১১টা ৪ মিনিটে পিস ওয়ার্ল্ড থেকে বিধানসভা ভবনে পৌঁছয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর মরদেহ। ঠিক যে জায়গায় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হয়েছিল জ্যোতি বসুকে, ঠিক সেখানেই তাঁর উত্তরসূরীর দেহ শায়িত রাখা হয়। ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শেষবার বিধানসভায় এসেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ১৩ বছর ৬ মাসের মাথায় বিধানসভায় এল তাঁর নিথর দেহ।
সকাল ১১টা ৩৭ মিনিটে বিধানসভা ছেড়ে আলিমুদ্দিনের উদ্দেশে রওনা হয় শোক মিছিল। বেলা ১২টা ৫-এ সিপিএমের সদর দফতর আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে শেষবারের মতো পৌছন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। মুজফফর আহমেদ ভবনে বুদ্ধবাবুকে শ্রদ্ধা জানান প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত, ডি রাজারা।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে অন্ধপ্রদেশ, কেরল, তামিলনাড়ু থেকেও হাজির হয়ছিলেন পার্টিকর্মী, সদস্যরা। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে লাইন পড়ে যায় মৌলালি পর্যন্ত। যার ফলে বন্ধ করে দিতে হয় এজেসি বোস রোডের একটি দিক
দুপুর ৩টে ২৫। আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে শেষবারের মতো বেরিয়ে গেল বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দেহ। গন্তব্য DYF-এর রাজ্য় সদর দফতর দীনেশ মজুমদার ভবন। বিকেল ৪টে ১৫ মিনিটে দীনেশ মজুমদার ভবনে পৌঁছয় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর দেহ। এরপর সন্ধেয় নীলরতন সরকার মেডিক্য়াল কলেজের হাতে তুলে দেওয়া হয় বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর দেহ।
তাঁর ট্রেডমার্ক ছিল সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি আর পায়ে কোলাপুরি চটি। গান-কবিতা-ছবি ছিল পছন্দের। পড়ে রইল তাঁর কাজ, তাঁর স্মৃতি। বিদায় বেলাতেও তিনি দিয়ে গেলেন আলো।
রাজনীতি যে নিছকই বাড়ি-গাড়ি-অর্থ-বিজ্ঞাপন সর্বস্ব একটি বিষয় নয়, প্রায় ৬ দশকের রাজনৈতিক জীবনের মধ্য়ে দিয়ে যিনি প্রমাণ করে গেলেন। সেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে জনতার ঢল নামল রাজপথে। দীর্ঘদিন ধরে দু কামরা ফ্ল্য়াটে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে, অসুস্থ অবস্থায় শুয়ে থাকা সত্ত্বেও তিনি যে বঙ্গ রাজনীতির হৃদয়েই ছিলেন। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শেষবারের মতো সেটা জানাতেই যেন আবেগে ভাসল শহর।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -