Durga Puja 2022: গৃহকর্তাকে মাছ ধরতে সাহায্য করেছিলেন রমণী, এরপরেই আসে স্বপ্নাদেশ!
দেবীর নির্দেশে অভাবের সংসারে একসময় পর্ণকুটিরে শুরু হয়েছিল দেবী আরাধনা। অভাবী পরিবারের অসহায়তার কথা জেনে দেবী নিজেই নির্দেশ দিয়েছিলেন বাড়ির সাধারণ খাবার দিয়েই ভোগ নিবেদনের। সেই নির্দেশ মেনে আজও পোড়া রুটি ও পান্তা ভাতে পুজিতা হন রাউৎখন্ড বাগদী পাড়ার চতুর্ভূজা দেবী দুর্গা।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appআজ থেকে প্রায় ২০০ বছর পূর্বে বাঁকুড়া জেলার জয়পুর থানার রাউৎখন্ড ছিল তৎকালীন বর্ধমান রাজা মাহাতব চাঁদের অধীনে। আর এই রাউৎখণ্ড এলাকার সমস্ত খাজনা আদায় করে বর্জায় চাপিয়ে বর্ধমান রাজ পরিবারে পৌঁছে দিতেন রাউৎখণ্ড বাগদী পাড়ার একটি পরিবার। রাজামশাই ওই বাগদী পরিবারের পদবী দিয়েছিলেন আটপৌরি। সেই থেকে ওই গ্রামের নামও হয়ে যায় আটপৌরি পাড়া।
বর্তমানে সেই এলাকা বাগদিপাড়া নামে পরিচিত। কোন এক আশ্বিনের শারদ প্রাতে ওই বাগদী পরিবারের কর্তা গ্রামের অদূরে এক জলাশয়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুতেই তিনি তার মাছ ধরার জাল একা একা ঠিক করতে পারছিলেন না। ঠিক তখনই এক সুন্দর অপরূপা রমণী তাকে এসে বলে তোর জাল আমি ধরে দিচ্ছি।
বাগদী পরিবারের ওই কর্তা আগন্তুক রমণীকে জিজ্ঞাসা করে তুমি কে মা? উত্তরে ঐ রমণী বলেন আমি তোদের বাগদি পরিবারেরই এক কন্যা। এর পর মাছ ধরা শেষ হলে ওই বাগদী পরিবারের কর্তা বাড়ি ফেরার জন্য উদ্যোগী হলে ওই রমনী বলেন আমি তোর সাথে তোদের বাড়িতে যাব। বাগদী পরিবারের ওই কর্তা প্রথমে কিছুতেই রাজি না হলেও ওই রমণীর কাকুতি মিনতিতে অবশেষে তাকে বাড়ি আসার বিষয়ে সম্মতি দেন।
এর পর দুজনে গল্প করতে করতে গ্রামের দিকে রওনা হয়, গ্রামের অদূরে এসে আর ওই রমনীর গলা শুনতে পাননি বাগদী পরিবারের কর্তা। পিছনে ফিরে দেখেন ওই রমনী অদৃশ্য হয়ে গিয়েছেন। মন ভারাক্রান্ত করে বাড়ি ফিরে আসেন বাগদী পরিবারের কর্তা।
জনশ্রুতি ওই রাতেই দেবী স্বপ্নে চতুর্ভূজা বৈষ্ণবী রূপে দেখা দেন বাগদি পরিবারের কর্তাকে। তিনি তাঁকে বাড়িতে প্রতিষ্ঠা করে পুজো শুরু করার নির্দেশ দেন। বাগদি পরিবারের কর্তা মাকে অসহায়তার কথা জানালে দেবী নির্দেশ দেন প্রতিদিন বাড়িতে যে আহার হয় তা দিয়েই ভোগ নিবেদনের।
সকালেই এই সংবাদ পৌঁছে দেওয়া হয় বর্ধমান রাজার কানে, তড়িঘড়ি রাউৎখন্ডে আসেন বর্ধমানের রাজা। রাতারাতি তালপাতার ছাউনি করে শুরু হয় চতুর্ভুজা দেবী মায়ের পুজো। এদিকে অভাবের তাড়নায় ওই বাগদি পরিবারের নিত্যদিনের আহার ছিল পান্তা ভাত আর পোড়া রুটি।
মায়ের আদেশ মত সেই বছর মাকে ভোগ নিবেদন করা হয় পান্তা ভাত আর পোড়া রুটি দিয়েই। আর এভাবেই প্রথম বছর কার্যত ঘরের মেয়ের মতোই পুজিতা হন দেবী দুর্গা।
এরপর সময় বয়েগিয়েছে। তবে বদলায়নি পুজোর রীতিনীতি। ২০০ বছর পেরিয়ে আজও একই পরম্পরা এবং ঐতিহ্য।
আজ থেকে দুশো বছর আগে রাউৎখন্ড বাগদী পাড়ার দেবী পুজোয় চালু হওয়া রীতি রেওয়াজ আজো বয়ে নিয়ে চলেছে বাগদী পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম। আজও দেবীর চতুর্ভূজা মূর্তির সামনে মায়ের ভোগ হিসাবে নিবেদিত হয় পান্তা ভাত আর পোড়া রুটি।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -