Durga Puja 2022: স্বপ্নাদেশে মূর্তি স্থাপন, মহিষাসুরমর্দিনী নয়, দাস পরিবারে দেড়শো বছর ধরে চলছে হরগৌরীর আরাধনা
বর্ধমানে দাস বাড়ির দুর্গা পুজো। অষ্টমীর সন্ধিক্ষণে ও বিসর্জনের সময় আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল। বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড়ে জমিদার বাড়ির পুজো ১৫০ বছরের পুরনো। একসময়ে বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড়ের জমিদার বাড়ির পুজো দেখতে আসতেন খোদ বর্ধমানের মহারাজা আর তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appবর্ধমান শহরের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার দাসবাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ১৫০ বেশি সময় ধরে হয়ে আসছে। দাসবাড়ির পুজোর প্রচলন করেছিলেন তৎকালীন জমিদার মাখনলাল দাস। কিন্তু মাখনলাল দাসের সময়ে মূর্তিতে নয়, পুজো হত ঘটে। পরবর্তী কালে মাখনলালের পুত্র বজেন্দ্র লাল দাস স্বপ্নাদেশ পেয়ে মুর্তি পুজো শুরু করেন।
ব্রজেন্দ্রলাল দাসের নাতি শিবশঙ্কর দাস জানিয়েছেন, ব্রজেন্দ্রলাল দাসকে দেবী স্বপ্নে দেখা দিয়ে তাঁকে প্রতিষ্ঠা করে পুজোর নির্দেশ দেন। আর সেই বছর থেকেই মা দুর্গার মূর্তি পুজোর প্রচলন হয় আনোয়ার বেড়ের জমিদার পরিবারে।
স্বপ্নাদেশ পাওয়া মাত্রই তৈরি হয় মূর্তিও। একচালার কাঠামোয় বসে থাকা দেবীর ডান পাশে বসে আছেন দেবাদিদেব মহাদেব। শিব-পার্বতীর দুপাশে লক্ষ্মী আর সরস্বতী বসেন। তাঁদের নীচে বসেন কার্তিক আর গণেশ। তবে দেবী এখানে মহিষাসুরমর্দিনী নয়, দাস পরিবারে হয় হরগৌরীর আরাধনা।
পরিবারের সদস্য শিবশঙ্কর দাস জানিয়েছেন, জমিদার ব্রজেন্দ্রলাল দাসের কোনও পুত্র সন্তান ছিল না। এই হতাশাই কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিল বর্ধমানের খাজা আনোয়ার বেড় এলাকার দাপুটে জমিদার তথা বর্ধমানের মহারাজার বিশিষ্ট বন্ধু ব্রজেন্দ্রলাল দাসকে।
কথিত আছে, দেবীর সেই স্বপ্নাদেশের পর মহাসমারোহে হরগৌরী মূর্তি তৈরি করে পুজোর পরই ব্রজেন্দ্রলাল দাস পুত্রলাভ করেন। দেবীর স্বপ্নাদেশে পাওয়া কারণে একমাত্র পুত্রের নাম রাখেন দুর্গাচরণ দাস।
শিবশঙ্করবাবু আরও জানিয়েছেন, তখন জমিদারী ছিল। পুজোর জাঁকজমক আর জৌলুসও ছিল নজরকাড়া। ব্রজেন্দ্রলালবাবুর আমল থেকেই দাসবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়ে আসছে পঞ্চমী থেকে। পঞ্চমীতে বোধন দিয়ে পুজোর সূচনা। আগে পুজো উপলক্ষ্যে দরদালানে নিয়ম করে বসত যাত্রাপালা, গানের আসর। দুর্গামণ্ডপ লাগোয়া দোতলার ঘর থেকে অন্দরমহলের মহিলারা তা উপভোগ করতেন।
দাসবাড়ির পুজোর বিশেষত্ব বলতে কাঁঠালী কলা, নারকেলের বিভিন্ন মিষ্টি আর গাওয়া ঘি-এর লুচি। প্রত্যেকদিনই দেবীর কাছে এই ভোগ নিবেদন করা হয়। আগে সন্ধিপুজোর সময় ছাগল বলি হলেও, ৮০ বছর আগে তা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তার বদলে জমিদার বাড়িতে হয় মণ্ডা বলি।
শিবশঙ্করবাবুর দাবি, অষ্টমীর দিন সন্ধিক্ষণে এখনও দুর্গামণ্ডপের উপর শঙ্খচিল উড়তে দেখা যায়। দশমীর দিন দেবীকে বিসর্জন করা হয় পাশের মল্লিকপুকুরে। তখনও আকাশে ওড়ে শঙ্খচিল।
বছর ঘুরেছে। বদলেছে অনেক কিছুই জমিদার বাড়ির দেওয়ালের পলেস্তারা খসে পড়লেও,পুজোর আগের মতো জৌলুস না থাকলেও আচার আচরণ মেনে আজও দাস বাড়িতে চলছে হরগৌরির আরাধনা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -