Kazi Nazrul Islam Birthday: হাজার বঞ্চনাতেও রা কাড়েননি কখনও, বাঙালির বিদ্রোহী কবি একজনই
চেনা লোকজন যখন অচেনা হয়ে যান, খসে পড়ে মানবধর্মের শেষ নির্যাসটুকু, বার বার তাঁকে আঁকড়ে ধরেন সমাজ সচেতন মানুষ। তাই বিস্মৃত হতে হতেও বাঙালির মনে শেষ পর্যন্ত থেকেই যান কাজী নজরুল ইসলাম। কারণ শুধু তো রচনা নয়, বাংলা ভাষায় লেখনীর মাধ্যমে এক বিরাট জনগোষ্ঠীকে এক বাঁধনে বেঁধে রাখতে পেরেছেন তিনি। কলমের খোঁচায়, সৃষ্টিসুখের উল্লাসে মুছে দিতে পেরেছেন দেশ-কালের সীমারেখা। জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা বিদ্রোহী কবিকে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appবর্ধমানের চুরুলিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন নজরুল। ফকির আহমেদের দ্বিতীয় স্ত্রী জাহেদা খাতুনের পর পর চার পুত্রের মৃত্যুর পরে নজরুলের যখন জন্ম হল, তাঁর নাম রাখা হল দুখু মিয়াঁ। মাত্র আট বছর বয়সেই বাবাকে হারান। স্কুলে পড়াকালীনই তিনি গল্প, কবিতা লিখতে শুরু করেন।
স্কুলের পড়া শেষ না করেই কাজী নজরুল ইসলাম ৪৯ নম্বর বাঙালি রেজিমেণ্টে সৈনিক হিসেবে যোগ দিয়ে মেসোপটেমিয়ায় যান ১৯১৭ সালে। সেখানে বাঙালি পল্টনের মুসলমান সেনাদের তদারকির কাজে এক জন পাঞ্জাবি মৌলবী যুক্ত ছিলেন। তাঁর মুখে হাফিজের কবিতা শুনেই মুগ্ধ নজরুল মৌলবী সাহেবের কাছে ফারসি শিখতে থাকেন।
১৯১৯ সালে দেশে ফেরেন নজরুল। সেই সময় কলকাতার শৈলজানন্দ মুখোপাধ্যায়ের রমাকান্ত স্ট্রিটের বোর্ডিং হাউসে আশ্রয় নেন তিনি। কিন্তু তিনি মুসলমান জানতে পেরে সেখানকার পরিচারিকা তাঁর বাসন ধুতে অস্বীকার করেন। তার পর কলেজ স্ট্রিটে মুজ়ফ্ফর আহমেদের আস্তানায় আশ্রয় নেন। ওই সময় সওগাত, বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য পত্রিকা, প্রবাসীতে লিখে কলকাতার সাহিত্যজগতে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করেন। ১৯২২ সালে ‘বিজলী’ পত্রিকায় তাঁর লেখা ‘বিদ্রোহী’ কবিতা সাড়া ফেলে দেয়।
এর পর মুজফফর আহমেদের সঙ্গে যৌথ ভাবে ‘নবযুগ’ পত্রিকার সম্পাদনা। তার পর ‘ধূমকেতু’ পত্রিকার দায়িত্বে। সেখানেই প্রকাশিত হয় ‘আনন্দময়ীর আগমনে’ কবিতাটি। তার জন্যই তাঁকে কারারুদ্ধ করে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার। ১৯২২ সালে ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যটিও প্রকাশিত হয়।
প্রেসিডেন্সি জেলে কিছু দিন থাকার পর ১৯২৩ সালে এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড হয় নজরুলের। প্রথমে আলিপুর সেন্ট্রাল জেল, তার পর হুগলি জেল হয়ে বহরমপুর ঠাঁই হয় তাঁর।
সেখানে আরও একটি মামলা হলে গোটা বহরমপুর তাঁর পাশে দাঁড়ান। হিন্দু-মুসলিম আইনজীবীরা মিলে মামলা লড়েন।
জেলে থাকাকালীনই একাধিক কবিতা, নাটক লেখেন নজরুল। হালমোনিয়াম জোগাড় করে চলে সঙ্গীতচর্চা। তার অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও ‘জাতের নামে বজ্জাতি সব জাত-জালিয়াৎ খেলছে জুয়া’ গানটি রক্ষা পায়। ১৯২৩ সালের ১৫ ডিসেম্বর মুক্তি পান নজরুল। বন্দি অবস্থায় কয়েদিদের উপর অকথ্য অত্যাচারের প্রতিবাদে অনশনও করেন।
নজরুলে ব্যক্তিগত জীবনও ছিল যন্ত্রণাময়। ১৯২৪ সালে প্রমীলা সেনগুপ্তের সঙ্গে বিয়ে হয়। দুই পুত্রসন্তানের অকালমৃত্যুতে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন তিনি। ধীরে ধীরে যা-ও বা স্বাভাবিক হলেন, ১৯৪০ সালে স্ত্রী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। ১৯৪২ সালে আক্রান্ত হলেন পিক্সরোগে আক্রান্ত হলেন, যাতে ক্রমশ তাঁর মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা চলে যায়।
৭৭ বছরের জীবনকালে মাত্র ২২-২৩ বছরই সৃষ্টি করতে পেরেছেন নজরুল। তাতেই বাঙালির মনে চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। আজকের দিনে নজরুলগীতির জনপ্রিয়তা তেমন নেই বলে আক্ষেপ করতে শোনা যায় অনেককে। কিন্তু নজরুলের শ্যামাসঙ্গীত, কীর্তন, বৈষ্ণব পদাবলীর পাশাপাশি ইসলামি সঙ্গীত, মুর্শেদী গান আজও মুগ্ধ করে রেখেছে বহু মানুষকে।
জাতপাত, ধর্ম, এ সবের গণ্ডিতে কখনওই বাঁধা পড়েননি নজরুল। বড় ছেলে সব্যসাচীর বিয়েও দিয়েছিলেন হিন্দু, ব্রাহ্মণকন্যা উমা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। পেশায় নার্স উমা কবির সেবায় নিযুক্ত হন একসময়। স্নান করানো থেকে, খাওয়ানো, সব কিছু ছিল তাঁর দায়িত্বে। তাতেই স্নেহের বন্দন গড়ে ওঠে। সেই সময় কবির সব্যসাচীর সঙ্গে মন দেওয়া নেওয়া হলে, বাড়ির অমতেই কবির বউমা হন উমা। ১৯৭৬ সালের ২৯ অগাস্ট কবি মারা যাওয়ার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত তাঁর পাশে ছিলেন উমা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -