Mamata Banerjee: নিয়োগ থেকে আয়কর- কেন্দ্রকে তোপ মমতার, তুললেন শেয়ারবাজার প্রসঙ্গও
গতকাল ছিল বীরভূম, আজ বর্ধমান। মমতা প্রশাসনিক সভায় উপচে পড়ল ভিড়। এদিন সভা থেকে নানা বিষয় নিয়ে কেন্দ্রকে নিশানা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ' মনে রাখবেন চাকরির জন্য বাইরে কাউকে ভিক্ষে করতে হবে না। কেন্দ্রীয় সরকার একটা বাজেট করেছেন গতকাল আমি দেখেছি। বেকারদের জন্য একটি কথাও বলা হয়নি। বেকারদের জন্য একটি কথাও বলা হয়নি। একটি কথাও খরচ করা হয়নি। ইলেকশন আসলে বলে ২কোটি লোককে চাকরি দেব। আর ইলেকশন চলে গেলে ৪ কোটি লোকের চাকরি খেয়ে নেয়। কারণ সব ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ। কালকে তো প্রায় সরকার পড়ে যাচ্ছিল। কেন পড়ে যাচ্ছিল? শেয়ারবাজারে ধস নেমেছিল। এবার কাউকে কাউকে রিকোয়েস্ট করে...আমরা জানি তারা কারা। নামগুলো বলে আর আমি তাদের দুর্বিষহ করতে চাই না।'
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In App১০০ দিনের প্রকল্পে রাজ্যের তরফে বারবার বঞ্চনার অভিযোগ তোলা হয়েছে। এদিন মমতা বলেন, 'একটা সরকারের যদি প্ল্য়ানিং না থাকে, বলুন তো কেন এই সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা কেটে নিয়েছে? যারা কাজ করেছে, তাদের টাকাও দেয়নি। আর এই বাজেটে, ৬০ হাজার কোটি টাকা কেটে নিয়েছে। যাতে আগামী দিনে ১০০দিনের কাজ মানুষ করতে না পারে। ক্ষমতা দেখাচ্ছো? ইলেকশনের আগে বড়বড় কথা?
রাজ্য়ে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল আসা নিয়েও তীব্র ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মমতা। তিনি বলেন, 'সেন্ট্রাল টিম পাঠাচ্ছ? ছাড়পোকা কামড়ালেও সেন্ট্রাল টিম। কালীপটকা ফাটালেও সেন্ট্রাল টিম। কারও বাড়িতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার থাকলেও সেন্ট্রাল টিম। কে কী জামা-কাপড় পরেছে, তাই দিয়েও সেন্ট্রাল টিম। কে কোন জামা-কাপড় পরবে, সেটাও সেন্ট্রাল টিম। কে ডিম খাবে, নাকি আলুভাজা খাবে, তারজন্যও সেন্ট্রাল টিম। ১০০দিনের কাজের টাকা দিচ্ছ না কেন? পাঠাও সেন্ট্রাল টিম ইমিডিয়েট টাকা দিয়ে। আর তা নইলে জেনে রাখবে, বাংলা দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলবে।'
রাজ্যের বকেয়া নিয়েও মুখ খুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, '৭ হাজার কোটি টাকা আমরা পাই। যারা কাজ করেছে তাদের টাকা দিচ্ছে না। মানুষগুলো না খেতে পেয়ে মারা যাচ্ছিল প্রায়। আমাদের রাজ্য়ের টাকা সব কেটে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমাদের প্রাপ্য টাকা দিচ্ছে না। তা সত্ত্বেও আমি গর্ব করে বলতে পারি, ৪০ লক্ষ জবকার্ড হোল্ডারদের কাজ বাংলা সরকার দিয়েছে। বেঙ্গল গভর্নমেন্ট দিয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার দেয়নি। তাদের খাওয়া-দাওয়া যাতে হয় সেই জন্য়।'
সভা থেকে বিজেপিকেও নিশানা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, 'অন্য রাজ্য়গুলোর দিকে তাকিয়ে দেখুন। বিজেপি রাজ্যগুলোতে, অত্যাচার করা ছাড়া, সন্ত্রাস করা ছাড়া, আর কোনও কাজ নেই। আর সকাল থেকে সন্ধে পর্যন্ত শুধু আমাকে গালাগালি দিয়ে বেড়াচ্ছে। আমি বলি আমাকে যত ইচ্ছে গালাগালি দাও। তুমি আমাকে দুটো গালে দুটো থাপ্পড়ও মারতে পারো। কিন্তু মনে রাখবে, আমার মুখ বন্ধ করা যাবে না। আমি গরিবের জন্য কথা বলি, আমি সাধারণ মানুষের জন্য় কথা বলি।'
রেশন নিয়েও আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্য়মন্ত্রী। মমতা বলেন, 'খাদ্যের সাবসিডি তুলে দিয়েছে প্রায়। অনেকটা কেটে দিয়েছে, মানেটা কি জানেন? জনগণ যাতে আর রেশন না পায়। ভবিষ্যৎ কর্মসূচি বিজেপি সরকারের। ১০০ দিনের কাজের টাকা কেটেছে। ফুড সাবসিডি কেটেছে। গরিব লোকেরা, আমরা বাংলায়, এদের থেকে সব মানুষকে বেশি রেশন দিই, ৫ কেজি করে। কেটে দিয়েছে, সাবসিডি। আমরা তাও নিজের টাকা দিয়ে অনেকটা দিই।'
এবারের বাজেটে সবচেয়ে বেশি আলোচ্য় বিষয় আয়কের ছাড়। কিন্তু মমতা জানিয়েছেন, 'মাছের তেলে মাছ ভেজেছে। কী করেছে বলুন তো? কথার কারসাজি। আর লোভ দেখিয়েছে, আসলে কিন্তু কিছু নয়। মিথ্য়ে স্বপ্ন দেখিয়েছে। আপনার রোজগার আরও ঝরঝরে করে দিয়েছে। এবার আমি আপনাদের বলি, ৫ থেকে ৭ যে হল, ২ বাড়াল আড়াই কাটল। আপনার আড়াই ফেসিলিটিজ কাটল। কী করে কাটল? ভাবছে চালাকি দিয়ে সবকিছু হয়। কেউ না কেউ তো ধরবে? কথার জাগলারি। নতুন কর কাঠামো শুনে রাখুন, যাঁরা ইনকাম ট্যাক্স দেন, 80D ধারায়, LIC, PPF, কিংবা Tax savings mutual fund মিলিয়ে যে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আপনারা ছাড় পেতেন, নতুন কাঠামোয় সেই দেড় লক্ষ টাকা আপনারা কিন্তু ছাড় পাবেন না আর।'
নিয়োগ নিয়েও সুর চড়িয়েছেন তিনি। মমতা বলেন, 'চাকরি কোথা থেকে দেবে? একটা চাকরির কথাও বলেনি। সেল্ফ হেলফ গ্রুপ নাকি ৮১ লক্ষ করবে। আরে বাংলাকে দেখো, ছিল ১ লক্ষ, এই ১০ বছরে করেছি ১১ লক্ষ, আরও হবে। আমি চাই, সেল্ফ হেল্ফ গ্রুপের মেয়েরা ক্রেডিট পাক। নিজের পায়ে দাঁড়াক। তারা গভর্নমেন্টের কাজ করুক। তুমি ৮১ লক্ষ করবে কি? আমাকে ৫ বছর টাইম দাও, আমি ৮১ লক্ষ একাই করে দিচ্ছি। এতগুলো রাজ্য আছে, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ পঞ্জাব, রাজস্থান, গুজরাত, কত...রাজ্যগুলো করে এগুলো। যত ক্রেডিট সব নেবেন ওনারা। আর সেন্ট্রাল টিম পাঠাবেন।
শিক্ষা-দুর্নীতি নিয়ে এখন রাজ্য তোলপাড়। সেই প্রসঙ্গ টেনে এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'নিজেরা চাকরি দেবে না, আর আমরা একটা চাকরির কথা বললেই, যে কেউ আদালতে যেতে পারে, আদালতের প্রতি আমার শ্রদ্ধা আছে। গিয়ে বলছে এটা অনিয়ম আছে, বন্ধ করে দাও। চালাকিটা হচ্ছে যাতে কেউ বাংলায় চাকরিটা না পায়। চাকরিটা হবেই। আইন মেনেই হবে। কার কত ক্ষমতা আছে, চাকরি বন্ধ করবে, অনেক চাকরি হবে। চাকরি টাইম টু টাইম হবে।'
আবাস-যোজনা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মমতা বলেন, 'একটা গরিব লোককে বাড়ি দেবে বলছে, তোমার বাড়িতে স্কুটি থাকলে তুমি বাড়ি পাবে না। তোমার ছেলেমেয়েরা যদি স্কলারশিপ পায়, তুমি বাড়ি পাবে না।এ ধরনের কত রেস্ট্রিকশন। তাহলে কে পাবেন বলুন তো? কারও বাড়িতে না কারও বাড়িতে একটা স্কুটি আছে। বাইকই তো চালায়, স্কুটারই তো চালায়।সাইকেলই তো চালায়।' সব ছবি: মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ফেসবুক পেজ
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -