Dilip Kumar 100th Birth Anniversary: এক মামলায় সম্পর্ক ভাঙে মধুবালার সঙ্গে, দিলীপ কুমারের দেশপ্রেম সন্দেহাতীত, বলেছিলেন বাজপেয়ী
জীবিত থাকলে শতবর্ষ পূরণ করতেন। কিন্তু একবছর আগেই প্রয়াত হয়েছেন কিংবদন্তি শিল্পী-অভিনেতা দিলীপকুমার এক বছর আগেই চলে গিয়েছেন ইহলোক ছেড়ে। রবিবার, ১১ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিনে আরও জেনে নিন দিলীপ কুমার সম্পর্কে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In App১৯২২ সালের ১১ ডিসেম্বর অধুনা পাকিস্তানের পেশোয়ারে জন্মগ্রহণ করেন দিলীপ কুমার। জন্মসূত্রে নাম মহম্মদ ইউসুফ খান, মুসলিম পরিবারের ছেলে। লালা গোলাম সারওয়ার খান এবং আয়েশা বেগমের ১২ সন্তানের মতো অন্যতম ছিলেন।
দিলীপ কুমারের বাবা ছিলেন ফলের ব্যবসায়ী। বাবার ফলের বাগানও ছিল। মহারাষ্ট্রে পড়াশোনা দিলীপের। পেশোয়ারে যেখানে পৈতৃক বাড়ি দিলীপের, সেখানেই বাড়ি ছিল বলিউডের আর এক কিংবদন্তি রাজ কপূরের। তাঁরা শৈশবের বন্ধু।
১৯৪০ সালে পুণের একটি ক্যান্টিন থেকে ড্রাইফ্রুটের বরাত পেয়ে বেশ কয়েক বছরের পরিকল্পনা নিয়ে চলে আসেন মহারাষ্ট্রে। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পরও তাঁর পরিবার আর কখনও পেশোয়ার ফেরেনি।
কিন্তু অভিনয়ের প্রতি আগ্রহের কথা বাড়িতে জানাতে পারেননি। তাই বাবা যাতে জানতে না পারেন, তার জন্যই অন্য নামে পরিচিত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। প্রথম ছবি ‘জোয়ার ভাঁটা’। তাতে অভিনেত্রী তথা প্রযোজক দেবিকা রানির পরামর্শেই আসল নাম পাল্টে দিলীপ কুমার করে নেন।
প্রথম ছবি সে ভাবে সাড়া ফেলেনি দিলীপ কুমারের। দ্বিতীয়, তৃতীয় ছবিও নয়। নুর জাহানের সঙ্গে চতুর্থ ছবি ‘জুগনু’ বিরাট সাফল্য পায়। এর পর ‘শহিদ’, ‘মেলা’, ‘অন্দাজ’-এর মতো হিট ছবি উপহার দেন।
পাঁচের দশকে সবচেয়ে বেশি সাফল্য পান দিলীপ কুমার। ‘যোগন’, ‘বাবুল’, ‘দীদার, ‘তরানা’, ‘দাগ’, ‘নয়া দওর’-এর মতো ছবি করেন। বৈজয়ন্তিমালা, মধুবালা, নার্গিস, নিম্মি, মীনা কুমারী, কামিনী কৌশলের সঙ্গে তাঁর জুটি দর্শকের মন কাড়ে। হিন্দি ছবির স্বর্ণযুগে দিলীপ কুমার, রাজ কপূর এবং দেব আনন্দই ইন্ডাস্ট্রির ভিত্তি মজবুত করেন।
পর পর বেশ কিছু ছবিতে ট্র্য়াজিক চরিত্রে দেখা যায় দিলীপকে। তাতে তাঁর নামের সঙ্গে ‘ট্র্যাজেডি কিং’ উপমা জুড়ে যায়। একই রকমের চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে নিজেও অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তার পর মনোবিদের পরামর্শেই হালকা মেজাজের চরিত্র বাছতে শুরু করেন।
দিলীপ কুমারই প্রথম অভিনেতা, যিনি ফিল্মফেয়ার পুরষ্কার জেতেন, ‘দাগ’ ছবির জন্য। ছবি পিছু ১ লক্ষ টাকা পারিশ্রমিক নেওয়া প্রথম অভিনেতাও তিনি। ব্যবসার নিরিখে দেশের অন্যতমন সফল ছবি ‘মুঘল-ই-আজম’ দীর্ঘ ১৫ বছর সেরা সফল ছবির খেতাব ধরে রেখেছিল, ১৯৭৫ সালে যা ভেঙে দেয় ‘শোলে’। আজকের নিরিখে ধরলে, ছবিটি ১ হাজার কোটির ব্যবসা করে।
সুদীর্ঘ অভিনয় জীবনে একাধিক সুন্দরী নায়িকার সঙ্গে নাম জড়ায় দিলীপ কুমারের। মধুবালার সঙ্গে সাত বছরের সম্পর্ক ছিল তাঁর। ‘নয়া দওর’ ছবিতে ভোপালে শ্যুটিংয়ের কথা ছিল তাঁদের। কিন্তু তাতে আপত্তি তোলেন মধুবালার বাবা আতাউল্লা খান। মেয়ের সঙ্গে নিভৃতে সময় কাটানোর সুযোগ করে দিতেই বিআর চোপড় এমন ফন্দি এঁটেছেন বলে দাবি করেন তিনি। মামলা গড়ায় আদালত পর্যন্ত। তাতে মধুবালা এবং তাঁর বাবার বিরুদ্ধেই আদালতে কথা বলেন দিলীপ কুমার। তাতেই সম্পর্কে ইতি পড়ে।
অভিনয়ের পাশাপাশি পরিচালনাতেও হাত দেন দিলীপ কুমার। ২০০১ সালে অজয় দেবগণ, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে ‘অসর’ ছবিতে অভিনয়ের কথা ছিল। কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার জেরে সরে আসেন দিলীপ কুমার। আরও একাধিক ছবি থেকে সরে আসেন তিনি। তাতে ছবিগুলিই বন্ধ হয়ে যায়। রাজ্যসভায় কংগ্রেসের সাংসদও ছিলেন দিলীপ কুমার।
উল্লেখ্য, সিনেমায় কী দেখানো উচিত, কতটা দেখানো উচিত, তা নিয়ে একসময় উত্তাল হয়েছিল সংসদ। সেই সময় কংগ্রেস সাংসদ লীলাবতী মুন্সি দিলীপ কুমারকে নিশানা করেন। প্রশ্ন তোলেন তাঁর চুলের ছাঁট নিয়ে। দিলীপের জন্যই যুসমাজ অধঃপতনের দিকে এগোচ্ছে বলে মন্তব্য় করেন। সরকারের উপর এমন চাপ সৃষ্টি করেন লীলাবতী যে, ছবি থেকে চুম্বনদৃশ্য বাদ দিতে হয়। সেই লীলাবতির কেন্দ্র থেকেই দিলীপ কুমারকে সাংসদ করে রাজ্যসভায় নিয়ে যায় কংগ্রেস।
বৈজয়ন্তিমালার সঙ্গেও নাম জড়ায় দিলীপকুমারের। ‘গঙ্গা যমুনা’ ছবিতে বৈজয়ন্তিমালার প্রত্যেকটি শাড়ি দিলীপকুমার নিজেহাতে বেছেছিলেন বলে শোনা যায়। তবে ১৯৬৬ সালে বয়সে ২২ বছরের ছোট সায়রা বানুর সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দিলীপকুমার। এর পর, ১৯৮১ সালে আসমা সাহিবাকেও দ্বিতীয় পত্নী হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু ১৯৮৩ সালে সেই বিয়ে ভেঙে যায়।
সায়রা বানু এবং দিলীপ কুমার নিঃসন্তান থাকার সিদ্ধান্ত নেন। তা ব্যাখ্য়া করতে গিয়ে আত্মজীবনীতে দিলীপ জানান, ১৯৭২ সালে অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন সায়রা। কিন্তু কিছু শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। তাতে শিশুটির মৃত্যু হয়। ঈশ্বরের ইচ্ছা মনে করে তার পর আর সন্তান নেননি তাঁরা।
হিন্দকো, উর্দু, হিন্দি, পশতু, পঞ্জাবি, মারাঠি, ইংরেজি, বাংলা, গুজরাতি, ফারসি, ভোজপুরি এবং অওয়ধি ভাষায় ঝরঝর করে কথা বলতে পারতেন দিলীপ কুমার। ছবির কাজ করতে গিয়ে শিখেছিলেন সেতারও। ক্রিকেট খেলতে ভালবাসতেন।
২০২১ সালের ৭ জুলাই মুম্বইয়ের হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন দিলীপ কুমার। দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ছিলই, ক্য়ানসার রোগীও ছিলেন। তাঁর প্রয়াণে গোটা উপমহাদেশে শোকের ছায়া নেমে আসে। পদ্ম বিভূষণ, পদ্মভূষণ, দাদাসাহেব ফালকে-সহ দেশ-বিদেশে অজস্র সম্মান পেয়েছেন দিলীপকুমার।
১৯৯৮ সালে দিলীপ কুমারকে সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ‘নিশান-ই-ইমতিয়াজ’ প্রদান করে। তা নিয়ে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি ফুঁসে উঠলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারি বাজপেয়ী দিলীপকুমারকে সম্মান না ফেরানোর পরামর্শ দেন। বাজপেয়ীর বক্তব্য ছিল, “দিলীপ কুমারের দেশপ্রেম, দেশের প্রতি তাঁর ভালবাসা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই বিন্দুমাত্র।” পেশোয়ারে দিলীপ কুমারের পৈতৃক বাড়ি হেরিটেজ তকমা পেয়েছে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -