Rittika Sen Pics: অভিনয়ের জন্য স্কুল ছাড়তে বাধ্য ঋত্বিকা শিকার হয়েছিলেন অবসাদের!
করোনা পরিস্থিতিতে বন্ধ রয়েছে সমস্ত শ্যুটিং। এইসময় চেন্নাইতে শ্যুটিং-এ ব্যস্ত থাকার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু কোভিড আতঙ্কে আগেই বাতিল করে দিয়েছেন সেই সমস্ত পরিকল্পনা। আটকে রয়েছে তাঁর একাধিক ছবির মুক্তিও। কিন্তু বাড়িতে বসে ঋত্বিকা সেনের কেবল মনে হচ্ছে, সবাই সুস্থ হয়ে উঠুক। ফিরে আসুক আগের মত করোনামুক্ত পৃথিবী। বাড়িতে বসে কীভাবে সময় কাটছে ঋত্বিকার? হাতে রয়েছে কী কী কাজ? এবিপি লাইভে অকপট অভিনেত্রী।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appআপাতত তামিল ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করছেন ঋত্বিকা। সেই সূত্রেই চেন্নাই যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। অভিনেত্রী বলছেন, ‘এইসময় চেন্নাইতে গেলে আটকে যেতাম। আমি নিজেই শ্যুটিং বাতিল করেছি। লকডাউন হবে এমন আভাস সবার কাছেই ছিল। আবার বাংলা ছবি দ্রৌপদীর কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। লকডাউনের জন্য ছবি মুক্তি নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়নি।‘
বাঙালি অভিনেত্রী হয়ে তামিল ছবিতে চুটিয়ে অভিনয় করছেন। ভাষা সমস্যা? ঋত্বিকা হেসে বললেন, ‘আমায় ভাষাটা শিখতে হয়েছে। সেটা খুব একটা সহজ ছিল না। এখন উচ্চারণগুলো আয়ত্ত্বে এনেছি। কিন্তু সঠিকভাবে সব বুঝতে পারি না। তবে ওখানকার ছবির চিত্রনাট্যগুলো বেশ আকর্ষণীয়। এখনও পর্যন্ত যাঁদের সঙ্গে কাজ করেছি সবাই খুব সাহায্য করতেন। ওনাদের ভাষা সবসময় বুঝতাম না। কিন্তু ওনারা কখনও আমায় বুঝতে দিতেন না আমি বাইরের কেউ। সেটে সবসময় ঠাট্টা, ইয়ার্কি চলত। এমনটি আমার স্ক্রিপ্টের পাশে আলাদা করে মানে লিখে দিতেন ওনারা। যাতে আমি অন্তত অর্থটা বুঝতে পারি। সম্প্রতি মল্লিকা শেরওয়াতের সঙ্গে তামবাটাম-এর শ্যুটিং শেষ করলাম। তামিল ইন্ডাস্ট্রিতেও এত ভালোবাসা পাব ভাবিনি। ‘
করোনা পরিস্থিতিতে কতটা ক্ষতি হয়েছে কাজের? ঋত্বিকা বলছেন, ‘বন্ধুরা অনেকেই করোনা আক্রান্ত ছিলেন। সুস্থ হয়েছেন। তবে শ্যুটিং বন্ধ থাকায় সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছেন টেকনিশিয়ান ভাইয়েরা। গত লকডাউন থেকে শ্যুটিয়ের ক্ষতি হচ্ছে। এবার কাজ করতে গিয়ে শুনেছি অনেকে মারা গিয়েছেন। তাঁদের কোভিড হয়নি। কেবল অভাবে। কাজ না পেয়ে। এইসব শুনলে মন ভার হয়। খারাপ লাগে। সাময়িক পরিস্থিতি ভালো হোক কেবল এটাই না, আমরা সবাই আগের পৃথিবীটাকে ফিরে পেতে চাই। যেখানে করোনা ছিল না। কত মানুষ কাজ হারাচ্ছেন এই পরিস্থিতিতে।‘
বর্তমানে বিবি অনার্স নিয়ে বেহালার একটি কলেজে পড়ছেন ঋত্বিকা। অভিনয়ের পাশাপাশি পড়াশোনাও সমানতালে চালিয়ে যেতে চান তিনি। অনেক ছোটবেলা থেকেই অভিনয় করছেন। কাজেই পড়াশোনা আর অভিনয়কে একসঙ্গে সামলানো একরকম অভ্যাসে পরিণত হয়েছে তাঁর। কিন্তু পথটা নেহাত সহজ ছিল না। ঋত্বিকা বলছেন, ‘আমি অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত কলকাতার একটি কনভেন্টে পড়াশোনা করেছি। সেই সময়ে ‘১০০ পান্সেন্ট লাভ’, ‘আরশিনগর’ এই সমস্ত ছবিগুলো পরপর মুক্তি পেয়েছে। সবার সঙ্গে স্কুলে পড়েও বন্ধুদের সঙ্গে আমি মন খুলে মিশতে পারতাম না।‘
ঋত্বিকা আরও বলেন, ‘স্কুলে আমায় কেউ আমার নাম ধরে ডাকত না। সবাই বলত হিরোইনি। সহপাঠী থেকে শুরু করে শিক্ষক-শিক্ষিকা, সবাই আমায় অন্য নজরে দেখত। নতুন ছেলে-মেয়েরা আমায় এসে বলত, তুমি ও ইন্ডাস্ট্রির মেয়ে। বাবা-মা শিখিয়ে দিয়েছে তোমার সঙ্গে বেশি কথা না বলতে। স্কুলে কখনও যদি অসুস্থ হয়ে পড়তাম, শিক্ষিকাদের জানালেন তাঁরা বলতেন, এটা তোমার শ্যুটিং ফ্লোর নয়। এখানে অভিনয় করা চলবে না। আমার কোনও বন্ধু ছিল না। ধীরে ধীরে আমি অন্তর্মূখী হয়ে পড়তে থাকি।‘
এখানেই শেষ হয়নি সমস্যার। ঋত্বিকা আরও বলেন, ‘আমি বয়সের থেকে বড় চরিত্রে অভিনয় করতাম। বডি শেমিং শুনেছি অনেক সেটা নিয়ে। রুপোলি পর্দায় প্রেমিকার চরিত্রে আমি অভিনয় করছি এটা আমার স্কুলের কেউ ভালোভাবে মেনে নিতে পারেনি। আমায় স্কুল থেকে ডেকে বলা হল, অভিনয় ও পড়াশোনা এই দুয়ের মধ্যে যে কোনও একটাকে বেছে নিতে। কারণ আমি নাকি স্কুলের পরিবেশ নষ্ট করছিলাম। এমন মন্তব্যও শুনেছি যে অভিনেত্রীদের পড়াশোনা করার প্রয়োজন পড়ে না। অষ্টম শ্রেণীতে আমি বাধ্য হলাম স্কুল ছেড়ে দিতে।‘
‘এরপর ৬ মাস স্কুলে যেতে পারিনি আমি। শ্যুটিং করলেও ধীরে ধীরে অবসাদে চলে যাই। ভেবেছিলাম আর কখনও স্কুলে ভর্তি হতে পারব না। পড়াশোনা করতে পারব না। কিন্তু এরপর ইন্দিরা গান্ধি মেমোরিয়াল স্কুলে প্রবেশিকা পরীক্ষা দিতে নিয়ে গিয়েছিলেন বাবা মা। সেই পরীক্ষায় খুব ভালো ফল করি। ওই স্কুলেই নবম শ্রেণীতে আবার ভর্তি হই।‘
নতুন স্কুলে এসে পরিস্থিতির বদল হয়। ঋত্বিকা বলছেন, ‘এই স্কুলে আমায় সবাই খুব সাহায্য করতেন। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও আমায় স্নেহের চোখেই দেখতেন। কিন্তু ছোটবেলার স্কুলের সেই খারাপ স্মৃতিটা আমি কাটিয়ে উঠতে পারিনি। তাই সেইভাবে কখনও বন্ধুত্ব করতে পারিনি। নিজের পড়াশোনা আর কাজ নিয়েই থেকেছি।‘
ঋত্বিকা বলছেন, ‘আমাদের ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই মানসিক অবসাদ নিয়ে মুখ খুলতে চান না। কিন্তু এই অভিজ্ঞতা হয়তো আমার একার নয়। অভিনেত্রীরা পড়াশোনা করবেন এটা এখনও মানতে পারেন না অনেকেই। কিন্তু এই সমস্যা নিয়ে আলোচনা করলে হয়তো আরও অনেকে নিজেদের সমস্যার কথা বলার সাহস পাবেন। ছোটবেলায় আমার স্কুলের খারাপ স্মৃতি এখনও আমায় তাড়িয়ে বেড়ায়।‘
ঋত্বিকার লম্বা চুল অনেকেরই ঈর্ষার কারণ? অভিনেত্রী হেসে বললেন, ‘আমার চুল সামলাতে গিয়ে হেয়ার ড্রেসাররা খুব রেগে যেতেন। অনেকে আবার বলতেন কী করে আমি নিজে সামলাই। হেসে উত্তর দিতাম এটা আমার মায়ের চুল। মা যত্ন নেন।‘
ছোটপর্দা ও রুপোলি পর্দা ছাড়াও এখন ওটিটির রমরমা। ওটিটি প্ল্যাটফর্মে অভিনয় করার ইচ্ছা আছে। ঋত্বিকা বললেন, ‘অবশ্যই। তবে হ্যাঁ পছন্দমত চিত্রনাট্য পেলে। এখন খুব অন্য়ধরনের ওয়েব সিরিজে কাজ হচ্ছে। হিন্দি একটা ওয়েব সিরিজে কাজ করার কথা হয়েছে ইতিমধ্যেই। চরিত্রটা খুব আকর্ষণীয়। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও আবার শ্যুটিং ফ্লোরে ফিরব।‘
ছবি সৌজন্যে: ঋত্বিকা সেনের ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইল
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -