Manna Dey Birthday: 'আমি এত যে তোমায় ভালবেসেছি', মান্নার গানেই প্রেম-বিষাদের উপলব্ধি বাঙালির
প্রেম অথবা বিষাদ, নস্ট্যালজিয়া অথবা অভীপ্সা, ছুঁয়ে দেখেছেন সব কিছুই। তাঁর গানেই বাঙালির সব অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ। রবিবার সেই প্রবাদপ্রতিম শিল্পী মান্না দে জন্মবার্ষিকী। বেঁচে থাকলে শতবর্ষ পার হয়ে যেত। কিন্তু কাহাঁতক নিসঃসঙ্গ থাকা যায়! প্রিয় মানুষের ছবির দিকে তাকিয়ে গুনে চলা যায় মুহূর্ত। তাই চাওয়া-পাওয়ার হিসেব না কষেই চলে গিয়েছেন তিনি।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু রেখে গিয়েছেন একের পর এক অমূল্য সৃষ্টি। কষ্টি পাথরে ঘষে যাচাই করে দেখার প্রয়োজন সেই সেসবকে। কারণ বাঙালির মন জানে, যা পেয়েছেন, যতটুকু পেয়েছেন, তা দুর্মূল্য। তাই আলোর ঝলকানি, জাঁকজমকের মধ্যেও বিস্মৃত হননি মান্না দে।
জন্মসূত্রে পাওয়া নাম প্রবোধচন্দ্র দে। ঘর-গেরহস্তে ডাকা হতো মানা নামে। অবাঙালি উচ্চারণে পরে তা হয়ে যায় মান্না নাম বিকৃতি হওয়া নিয়ে আক্ষেপ ছিল না শিল্পীর। বরং নাম নয়, গানের সূত্রে পাওয়া পরিচিতিতেই সন্তুষ্ট ছিলেন তিনি।
ছোট থেকে বাড়িতে গান-বাজনার পরিবেশই পেয়েছিলেন, নেপথ্যে ছিলেন কাকা, সঙ্গীতাচার্য কৃষ্ণচন্দ্র দে। তাঁর কাছেই সঙ্গীতে হাতেখড়ি। ছোটবেলায় কৃষ্ণনগর রাজবাড়িতে একবার রাতের মজলিশে কাকার সঙ্গে গিয়েছিলেন। খেয়ালবশতই ভাইপোর হাতে তানপুরা ধরিয়ে দিয়েছিলেন কাকা। শচীন দেববর্মন, ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়দের দেখে ঘাবড়ে যাওয়ার বদলে আগাগোড়া কীর্তনে কাকাকে যোগ্য সঙ্গ দিয়েছিলেন। ফলে জলসা মাতিয়ে রাখার শিক্ষা পেয়ে গিয়েছিলেন ছোটবেলাতেই।
গান-বাজনা করতে গিয়ে পড়াশোনাকে হেলাফেলা করেননি যদিও। স্কটিশ চার্চ কলেজে পড়াকালীন কুস্তি, বক্সিংয়েও হাত পাকিয়েছিলেন। বিদ্যাসাগর কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর সাধনায় আরও মগ্ন হয়ে ওঠেন। কাকার কাছে তালিম নেওয়ার পাশাপাশি উস্তাদ দাবির খানের কাছেও সঙ্গীতশিক্ষা পান। তার পর কাকার সঙ্গেই বোম্বাই গমন (অধুনা মুম্বই)। তবে গেলেন, দেখলেন, জয় করলেন, এমনটা মোটেই হয়নি। বরং কাকা এবং শচীনকর্তার অধীনে দীর্ঘদিন সহকারি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। তার পর একাও অনেক ছবিতে সঙ্গীত পরিচালকের কাজ করে গুজরান হয়েছে।
সেই সময় ‘তমান্না’র সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে কাজ করছিলেন কৃষ্ণচন্দ্র। তাঁর দ্বিতীয় সহকারি হিসেবে কাজ করছিলেন মান্না দে। ছবিতে ‘জাগো আই উষা’ গানে এক কিশোরীর সঙ্গে তাকে ডুয়েট গাওয়ার সুযোগ দেন কাকা, সেই মেয়ে আর কেউ নন, সুরাইয়া। ‘রামরাজ্য’ সিনেমায় প্রথম প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসেবে গাওয়ার সুযোগ পান। ‘অমর ভূপালী’ ছবিতেও তাঁর গান ছিল। কিন্তু ছুটকো দু’একটি সুযোগ পেলেও দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন মান্না দে। পাতে দেওয়া যায় না, এমন ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করতে হচ্ছিল তাঁকে।
আর কাজের ফাঁকেই ঈশ্বরপ্রদত্ত গলা ঝালিয়ে নিতে থাকেন। উস্তাদ আমন আলি খান, উস্তাদ আব্দুল রহমান খান, উস্তাদ গোলাম মুস্তফা খানের কাছে তালিম চলতে থাকে। অথচ এত চেনা-পরিচিতি থাকা সত্ত্বেও গান গাওয়ার সুযোগ পাচ্ছিলেন না। তাতে আশেপাশের লোকজনের উপর অভিমানই হয়েছিল একটু। তা টের পেয়েই হয়ত ‘মশাল’ ছবির জন্য গান গাইতে ডেকে পাঠান শচীনকর্তা। আর ‘উপর গগন বিশাল’ গানের দৌলতেই মায়ানগরীতে তারকা-শিল্পী হিসেবে নাম নথিভুক্ত হয়ে গেল মান্না দে-র।
এর পর আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাঁকে। সেই সময় মহম্মদ রফিও মান্না দের ভূয়সী প্রশংসা করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল, “গোটা বিশ্ব আমার গান শোনে। কিন্তু আমি শুধু মান্না দে-র গান শুনি।”কিশোর কুমারের সঙ্গে ‘শোলে’ ছবির ‘ইয়ে দোস্তি’, ‘পড়োসন’ ছবির ‘এক চতুর নর’ গানেও গলা মেলান মান্না দে। দীর্ঘ কর্মজীবনে বাংলা-হিন্দি, মারাঠি ছাড়াও একাধিক ভাষায় গান গেয়েছেন তিনি। মহম্মদ রফির সঙ্গে ১০১টি এবং আশা ভোঁসলের সঙ্গে ১৬০টি ডুয়েট গেয়েছেন। রাজেশ খান্নার ভক্ত ছিলেন নিজে। গানের চিত্রায়ণ রাজেশের মতো কেউ করতে পারেন না বলে মন্তব্যও করতে শোনা গিয়েছিল তাঁকে।
এক সময় বাংলা ছবিতে নায়ক উত্তম কুমার এবং গায়ক হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের জুটি ছিল অনবদ্য। ‘সপ্তপদী’, ‘হারানো সুর’-সহ একাধিক ছবিতে কালজয়ী সব গান উপহার দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু একটি ছবিকে ঘিরে দু’জনের বন্ধুতায় ফাটল ধরে। তার পরই উত্তমকুমারের ঠোঁটে মান্না দে-র গান শোনা যেতে শুরু করে। সুদীর্ঘ কেরিয়ারে র্যা মন ম্যাগসেসে , সঙ্গীত নাটক অ্যাকাডেমি, জাতীয় পুরস্কার-সহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। পেয়েছেন পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ, বঙ্গবিভূষণ, দাদা সাহেব ফালকে সম্মানও। বহু আন্তর্জাতিক পুরস্কার এবং সম্মানও পেয়েছেন।
১৯৬৩ সালে সুলোচনা কুমারণের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মান্না দে। তাঁদের দুই কন্যা। ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে প্রয়াত হন সুলোচনা কুমারণ। ক্যান্সারে ভুগছিলেন তিনি। স্ত্রীর মৃত্যুর পর মুম্বই ছেড়ে বেঙ্গালুরুতে গিয়ে ওঠেন মান্না দে। সেখানেই ২০১৩ সালে, ৯৪ বছর বয়সে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। ঘনিষ্ঠরা জানান, স্ত্রীর মৃত্যুর ধাক্কা সামলাতে পারেননি তিনি। স্ত্রীর ছবির সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতেন তিনি। ছবির দিকে তাকিয়ে তাঁকে অঝোরে কাঁদতেও দেখেছেন নিকটজনেরা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -