Uttarakhand Situation: ধসে যাওয়ার পথে গোটা জোশীমঠ, দেবভূমিতে সঙ্কটে আরও একাধিক জায়গা
পাহাড়ি রাস্তায় গায়ে গায়ে লেগে রয়েছে বাড়িগুলি। কোনওটি হেলে পড়েছে অন্যটির গায়ে। কোনওটির দেওয়াল আবার কার্যত হাঁ করে রয়েছে। রাস্তাঘাটে এদিক ওদিক কোথাও লম্বালম্বি, কোথাও আবার আড়াআড়ি ফাটল ধরে রয়েছে। কোথাও আবার ঘরের দেওয়াল, ছাদই হুড়মুড়িয়ে পড়ার অপেক্ষায়।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appগত কয়েক দিন ধরে উত্তরাখণ্ডের জোশীমঠ থেকে যে সমস্ত ছবি সামনে এসেছে, তা দেখে কার্যতই ঘুম উড়েছে সকলের। ভিটেমাটি ছেড়ে শয়ে শয়ে মানুষকে এই ঠান্ডায় রাস্তায় নেমে আসতে হবে ভেবে গায়ে কাঁটা দিচ্ছে। আবার যাঁরা ফাটল ধরা ঘরেই মাথাগুঁজে রয়েছেন, মাথাচাড়া দিচ্ছে তাঁদের প্রাণহানির আশঙ্কাও।
কিন্তু শুধুই জোশীমঠ নয়, উত্তরাখণ্ডের একাধিক জায়গাতেই পরিস্থিতি রীতিমতো উদ্বেগজনক বলে খবর সামনে আসছে। পাউরি, বাগেশ্বর, উত্তরকাশী, তেহরি গরওয়াল, রুদ্রপ্রয়াগের মতো জায়গাগুলিও যে কোনও দিন জোশীমঠ হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয়দের।
তেহরি গড় ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেললাইন তেহরি জেলার আটালি গ্রাম হয়ে এগিয়েছে। সেখানকার নরেন্দ্রনগর এলাকায় লাগাতার সমস্যার মুখে পড়ছেন স্থানীয়রা। ধসের জেরে আটালির একাধিক বাড়িতে এমনিতেই ফাটল ধরেছে। গ্রামের শেষ প্রান্তে সুড়ঙ্গ তৈরিতে নিত্যদিন বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতেও বহু বাড়িতে ফাটল ধরতে শুরু করেছে।
আটালির স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, দিন-রাত সুড়ঙ্গ তৈরির কাজ চলছে। যখন তখন সেখানে বিস্ফোরণ ঘটানো হচ্ছে। তাতে বাড়িঘর সব কেঁপে ওঠে। এক এক সময় এত জোরে কাঁপতে থাকে বাড়ি, যে মাঝরাতে মানুষকে রাস্তায় বেরিয়ে আসতে হয় বলেও জানান তিনি। ছ’মাস অন্তর সেই নিয়ে বৈঠক হলেও, আজও কোনও সুরাহা হয়নি। তাই আটালির বাসিন্দারা পুনর্বাসনের দাবি জানাচ্ছেন।
পাউরি পাহাড় কেটে রেললাইন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বাড়িতে ফাটল ধরছে বলে দাবি এলাকাবাসীদের। শ্রীনগরের হেদাল মহল্লায় একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরার ঘটনা সামনে এসেছে। এ ছাড়াও, আশিস বিহার, নার্সারি রোডের বাড়িগুলিরও একই অবস্থা। ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেল পথে সুড়ঙ্গ তৈরির কাজের জেরেই এমন অবস্থা বলে দাবি স্থানীয়দের। তাঁদের দাবি, আতঙ্ক বুকে নিয়ে দিনপাত করছেন তাঁরা।
স্থানীয়দের দাবি, রেলের কাজে দিনে-রাতে, সারা ক্ষণ বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে একে একে বহু বাড়িতে ফাটল ধরেছে। বিস্ফোরণের তীব্রতায় কেঁপে ওঠে বাড়িগুলি। তাঁদের বাড়ি বাঁচিয়ে সরকারকে কাজ করতে হবে বলে দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।
বাগেশ্বর বাগেশ্বরের কাপকটের খারবাগাড় গ্রামের উপর দিয়ে, পাহাড় ভেদ করে এগিয়েছে সুড়ঙ্গ। তার উপর আবার বড় বড় গর্ত খোঁড়া হয়েছে, যা জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে ব্যবহৃত হবে। এর ফলে জল চুঁইয়ে মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। ওই গ্রামে প্রায় ৬০টি পরিবার রয়েছে। প্রায়শই সেখানে ভূমিধস লেগে থাকে। গ্রামের উপর দিয়ে গিয়েছে সুড়ঙ্গ। রেবতী নদী বয়ে যায় নিচে দিয়ে।
উত্তরকাশী উত্তরকাশীর মাস্তাদি এবং ভাতওয়াড়ি গ্রামের পরিস্থিতিও অত্যন্ত বিপজ্জনক। জোশীমঠের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে মাস্তাদির গ্রামবাসীদের মধ্যেও। ১৯৯১ সালে সেখানে ভূমিকম্পও হয়। তাতে আগেই একাধিক বাড়িতে ফাটল ধরে। উত্তরকাশীর সব জেলাই প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রবণ।
জেলা সদরদফতরের ১০ কিলোমিটার দূরবর্তী গ্রামের বাসিন্দাদের দাবি, তাঁদের গ্রাম ক্রমশ তলিয়ে যাচ্ছে। একাধিক বাড়িতে ইতিমধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে। ১৯৯১ সালে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় হয়ে ওঠে। ১৯৯৫ এবং ১৯৯৬ সাল থেকে বাড়ির ভিতর থেকে জলও বেরোতে শুরু করে। এখনও জল বেরোয় মাঝে মাঝে। প্রশাসনের তরফে পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখাও হয়েছে বলে দাবি বাসিন্দাদের।
ভাতওয়াড়ি গ্রামের অবস্থান আবার জোশীমঠের মতোই। গ্রামের নিচে দিয়ে বয়ে চলেছে ভাগীরথী। ঠিক উপরে রয়েছে গঙ্গোত্রী হাইওয়ে। ২০১০ সালে ভাগীরথীর ভাঙনে ৪৯টি বাড়ি তলিয়ে যায়। যে বাড়িগুলি এতদিন নিরাপদ ছিল, ফাটল দেখা দিয়েছে সেগুলিতেও। ভাতওয়াড়ি, আস্তাল, উর্দি, ধানেতি, সৌদ, কামাদ, ঠান্ডি, সিরি, ধারকোট, কিয়ার্ক, বারসু, কুজন, পিলাং, জোদাভ, হুরি, ধাসড়া, ডান্ডালকা, অগুড়া, ভাঙ্কোলি, সেকু, বীরপুর, বাদেঠি, কাঁসি, বড়িয়া, কাফনউল এবং কোর্নার মতো জায়গাগুলিকে অতি স্পর্শকাতর জায়গা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রুদ্রপ্রয়াগ ঋষিকেশ-কর্ণপ্রয়াগ রেলপথের আঁচ পড়ছে মারোদা গ্রামে। সুড়ঙ্গ তৈরিতে ইতিমধ্যেই বেশ কিছু বাড়ি বুলডোজার চাপিয়ে ভেঙে দেওয়া হয়েছে। ভাঙতে চেয়ে আরও কিছু বাড়িকে করা হয়েছে চিহ্নিত। যাঁদের বাড়ি ভেঙেছে, এখনও ক্ষতিপূরণ পাননি তাঁরা। ভাঙা বাড়িতে ত্রিপল টাঙিয়েও রয়েছেন কেউ কেউ। তাতে আরও বড় ধরনের বিপদ হতে পারে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -