Balai Chand Mukhopadhyay Birthday: বনফুলের সুবাসে, ডাক্তারি-কলম চলেছে সমান তালে, জন্মদিনে ফিরে দেখা সাহিত্যিককে
প্রবাসে থেকে আজকাল বাংলা বলাই ভুলতে বসেছেন মানুষ। অথচ প্রবাসে থেকে একধারে প্রেসক্রিপশন যেমন লিখে গিয়েছেন, তেমনই অবিরত থেকেছে তাঁর সাহিত্যচর্চা। ১৩তম জন্মবার্ষিকীতে ফিরে দেখা সাহিত্যিক বলাইচাঁদ মুখোপাধ্যায় ওরফে বনফুলকে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appপৈতৃক নিবাস ছিল আদতে হুগলি জেলার শিয়াখালায়। বাবা সত্যচরণ মুখোপাধ্যায় ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। মা মৃণালিনী দেবী। ১৮৯৯ সালের ১৯ জুলাই বিহারের পুর্ণিয়া জেলার মণিহারি গ্রামে জন্ম বলাইচাঁদের। হাজারিবাগ কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করে বাবার পথ অনুসরণ করে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়তে আসা। শিক্ষানবীশ ছিলেন প্যাথলজির।
সেই সময়টুকুই বাংলায় থাকার সুযোগ পেয়েছিলেন বলাইচাঁদ। ৩ নম্বর মির্জাপুর স্ট্রিটের একটি মেসে ছিলেন বেশ কিছু দিন। ডাক্তারি পাশ করার পর পটনা মেডিক্যাল কলেজে প্র্যাকটিস শুরু করেন। তার পর আজিমগঞ্জ হাসপাতাল হয়ে ভাগলপুরে ল্যাব খুলে প্যাথলজিস্ট হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু। ১৯২৭ সালে বিয়ে করে সংসারী হন।
অল্প বয়স থেকেই লেখালেখির প্রতি আকর্ষণ জন্মায়। কিন্তু ডাক্তার হতে গেলে অন্য দিকে মন দেওয়া চলবে না বলে নিদান ছিল এক শিক্ষকের। তাঁর চোখরাঙানি এড়াতেই প্রথম ছদ্মনাম বনফুল ধারণ করেন।
জীবনের প্রথম তিন দশক নেহাত শখের বশেই টুকটাক সাহিত্যচর্চা করতেন। নিয়মিত লেখালেখি শুরু হয় ৩৩ বছর বয়সে। বয়স ৪০-এর কোঠায় যখন পা রাখলেন, সেই সময়ই খ্যাতির শীর্ষে বলাইচাঁদ।
বলাইচাঁদের উল্লেখযোগ্য উপন্যাসের মধ্যে রয়েছে, ‘ভুবন সোম’, ‘অগ্নিশ্বর’, ‘বৈতরণীর তীরে,’ ‘হরিশচন্দ্র’, ‘গন্ধরাজ’, ‘উদয় অস্ত’, ‘পীতাম্বরের পুনর্জন্ম’, ‘নবীন দত্ত’, মহারানি’, ‘তৃণখণ্ড’, ‘সপ্তর্ষি’, ‘কৃষ্ণপক্ষ, ‘হাটেবাজারে’, ‘কষ্টিপাথর’, ‘তীর্থের কাক’, ‘জলতরঙ্গ’, ‘রাত্রি’, ‘সীমারেখা’, ‘মৃগয়া’, ‘নবদিগন্ত’, ‘ত্রিবর্ণ’, ‘তুমি’।
ছোট গল্পের মধ্যে ‘প্রতিবাদ’, ‘স্বাধীনতা’, ‘বিন্দু বিসর্গ’, ‘সপ্তমী’, ‘বনফুলের গল্প’, ‘নবমঞ্জরী’ উল্লেখযোগ্য। ‘অগ্নিশ্বর’, ‘ভুবন সোম’, ‘একটি রাত’, ‘আলোর পিপাসা’, ‘হাটে বাজারে’, ‘অর্জুন পণ্ডিত’, ‘তিলোত্তমা’ ‘পাকাদেখা’ নিয়ে ছায়াছবিও তৈরি হয়েছে। ঋষিকেশ মুখোপাধ্যায়ের তৈরি ‘অর্জুন পণ্ডিত’ ছবির জন্য সেরা কাহিনীর ফিল্মফেয়ার পুরস্কারও পান।
শুধু রোগী দেখা বা লেখালেখিই নয়, রান্না করতে যেমন ভালবাসতেন, তেমনি খেতেও। নিজেহাতে মাংস রেঁধে তাঁকে খাওয়াতেন অশোককুমার। এ ছাডা়ও পাখিদেখার শখ ছিল খুব। ভালবেসে একবার উপহার দিতে চেয়েছিলেন রীবন্দ্রনাথ ঠাকুর। তাঁর কাছ থেকে পরনের একটি জোব্বা চেয়ে নিয়েছিলেন বলাইচাঁদ। লেখালেখি নিয়ে কবির সঙ্গে বনফুলের মতবিরোধের খবরও শোনা যায়। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্পর্কে তা কখনও বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি।
ভাগলপুরের পাট চুটিয়ে পরে কলকাতার লেকটাউনে উঠে আসেন বনফুল। সেই সময় তাঁকে বিদায় জানাতে ভি়ড় উপচে পড়েছিল ভাগলপুর স্টেশনে। ১৯৭৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি প্রয়াণ।
বনফুলের ১০০তম জন্মবার্ষিকীতে তাঁর ছবি দিয়ে ডাকটিকিট প্রকাশ করে ভারত সরকার। লেখালেখিতে বিশ্বযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রামের ছায়া থাকলেও, ইহজীবনে কখনও রাজনীতির ক্ষেত্রে পা রাখেননি বনফুল।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -