Gauhar Jaan: সাহেবি রক্ত শরীরে, শৈশব কাটে বাঈজিখানায়, দেশের প্রথম ‘সুপারস্টার’ গায়িকা গওহর জান
নাচে-গানে মেহফিল জমানোই কাজ ছিল তাঁর। প্রকাশ্যে নাক সিঁটকোলেও, তথাকথিত ভদ্রসমাজের মানুষজন কার্যত হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতেন তাঁর দরবারে। নারীবাদী শব্দটির সঙ্গে তখনও সড়গড় হয়নি স্বাধীনতাপূর্ব ভারত। কিন্তু নিজের জীবন দিয়েই নারীবাদের আস্ত আখ্যান রচনা করে গিয়েছেন গওহর জান, যাঁকে কেউ বলতেন বাঈজি, কেউ আবার শিল্পী। বিশেষণ যাই হোক না কেন, প্রথম গান রেকর্ড করা ভারতীয় শিল্পী হিসেবে ইতিহাসে নাম রয়ে গিয়েছে তাঁর। ছবি: সংগৃহীত।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In App১৮৭৩ সালে উত্তরপ্রদেশের আজমনগরে জন্ম। জন্মসূত্রে পাওয়া নাম ইলিন অ্যাঞ্জেলিনা ইওয়ার্ড। মাতামহ ছিলেন ইংরেজ সৈনিক হার্ডি হেমিংস। রুক্মিনী নামের এক ভারতীয়কে বিবাহ করেন হার্ডি। তাঁদের কন্যা অ্যাডলিন ভিক্টোরিয়া হেমিংস। পরবর্তী কালে অ্যাডলিন বিবাহ করেন রবার্ট উইলিয়াম ইওয়ার্ডকে। ছবি: সংগৃহীত।
ভিক্টোরিয়া নাচ-গানে পারদর্শী ছিলেন। ১৮৭৯ সালে স্বামী রবার্টের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে তাঁর। একা মেয়েকে মানুষ করতে গিয়ে হিমশিম খান ভিক্টোরিয়া। সেই সময় অভিজাত এক মুসলিম খুরশিদের সঙ্গে আলাপ এবং বেনারস গমন। ধর্ম পরিবর্তন করে মেয়ের নাম গওহর রাখেন ভিক্টোরিয়া। নিজে নাম পাল্টে হন ‘মলকা জান’। ছবি: সংগৃহীত।
সঙ্গীত এবং কত্থকে পারদর্শী ছিলেন মলকা জান। বেনারসের বাঈজি পাড়ায় তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়তে সময় লাগেনি। ১৮৮৩ সালে মেয়েকে নিয়ে কলকাতায় চলে আসেন মলকা জান। মেটিয়াবুরুজে নবাব ওয়াজিদ আলি শাহের দরবারে পাকাপাকি জায়গা করে নেন। কলকাতাতেই সঙ্গীত এবং নৃত্যে হাতেখড়ি গওহরের। ক্লাসিক্যাল হিন্দুস্তানি ভোকাল মিউজিক, কত্থকে তালিম নেন তিনি। ধ্রুপদী নৃত্য, বাংলা কীর্তনও শেখেন। রবীন্দ্রসঙ্গীতও শিখেছিলেন গওহর। আবার ‘হমদম’ ছদ্মনামে লিখতেন গজলও। ছবি: সংগৃহীত।
১৮৮৭ সালে দ্বারভাঙা রাজের দরবারে প্রথম বার আত্মপ্রকাশ গওহরের। বেনারসেও দীর্ঘদিন প্রশিক্ষণ নেন। ১৩ বছর বয়সে ধর্ষণের শিকার হন গওহর। কিন্তু তাতে ভেঙে পড়েননি। বরং ১৮৯৬ সালে প্রথম বার কলকাতায় অনুষ্ঠান করেন গওহর। সেই সময় গুজরাতি পার্সি থিয়েটার শিল্পী অমৃত কেশব নায়কের সংস্পর্শে আসা। দু’জনের মধ্যে সম্পর্কও গড়ে ওঠে। কিন্তু ১৯০৭ সালে কেশব মারা যান। তার আগেই মারা যান মলকা জান। ছবি: সংগৃহীত।
১৯১০ সালে প্রথম বার মাদ্রাজ যান গওহর। সেখানে ভিক্টোরিয়া পাবলিক হলে তিনি যে অনুষ্ঠান করেন, তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। তামিলনাড়ুতে গওহরের হিন্দুস্তানি এবং উর্দু গানগুলি প্রকাশিত হতে শুরু করে। ১৯১১ সালে ব্রিটেনের রাজা পঞ্চম জর্জের দরবারেও অনুষ্ঠান করেন গওহর। ছবি: সংগৃহীত।
ধীরে ধীরে সেই সময়ের সবচেয়ে দামি শিল্পীতে পরিণত হন গওহর। সেই সময় বাজারে এক ভরি সোনার দাম যেখানে ২০ টাকা ছিল, একটি গান গাইতে ৩০০০ টাকা পারিশ্রমিক নিতেন গওহর। বাংলা, হিন্দি, উর্দু, মারাঠি, পাশতুন, গুজরাতি, আরবি, ফরাসি, ইংরেজি মিলিয়ে ১০টিরও বেশি ভাষায় গান গেয়েছেন। গেয়েছেন ঠুমরি, ভজন-কীর্তনও। ছবি: সংগৃহীত।
কিন্তু রাজা-মহারাজা এবং অভিজাত শ্রেণির মানুষই গওহরের গান শোনার সুযোগ পেতেন। বঞ্চিত রয়ে যেতেন সাধারণ মানুষ। গওহরের শিল্পকে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা সেই থেকেই। ১৯০২ সালে 78rpm-এ প্রথম গওহরের গান রেকর্ড করা হয়, যা বাজারে ছাড়ে গ্রামোফোন কোম্পানি অফ ইন্ডিয়া। যে কারণে গওহর ‘দ্য গ্রামোফোন গার্ল’ নামেও পরিচিত। ৬০০টিরও বেশি গান গেয়েছেন গওহর। দেশের প্রথম কোটিপতি সঙ্গীতশিল্পী হওয়ার কৃতিত্বও তাঁর। ছবি: সংগৃহীত।
শেষ জীবনে মহীশূর চলে যান গওহর। ১৯২৮ সালে মহীশূর প্রাসাদের শিল্পী হিসেবে মর্যাদা পান। কিন্তু তার ১৮ মাসের মধ্যেই, ১৯৩০ সালের ১৭ জানুয়ারি মারা যান গওহর। প্রৌঢ়াবস্থায় বয়সে ছোট একজনকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু সেই বিয়ে টেকেনি। বরং মামলা লড়তে গিয়ে জমি-বাড়ি বিক্রি করতে হয় তাঁকে। ছবি: সংগৃহীত।
গওহরের গাওয়া কিছু উল্লেখযোগ্য গান হল, ‘জবসে গয়ে মোরি সুদ’, ‘রস কে ভরে তোরে ন্যায়ন’, ‘মেরে দর্দ-ই-জিগর’, আজও যার নিত্য নতুন সংস্করণ উঠে আসে। গওহরের গাওয়া ভজন ‘রাধে কৃষ্ণ বোল মুখসে’ আজও জনপ্রিয়।গওহরকে অভিনয় জগতে আনতে চেয়েছিলেন বিগত দিনের অভিনেত্রী বেগম আখতার। কিন্তু গওহরের গান শোনার পর আর জোরাজুরি করেননি তিনি। শুধু তাই নয়, নিজে হিন্দুস্তানি ক্লাসিক্যাল শিখতে শুরু করেন বেগম আখতার। ছবি: সংগৃহীত।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -