Ashfaqulla Khan Birth Anniversary: ‘হলে হোক ভারত হিন্দুরাষ্ট্র, তবু ইংরেজ শাসন মঞ্জুর নয়’, সব শেষ বুঝেও আদর্শ থেকে সরেননি আশফাকুল্লা
জাত-ধর্ম নিয়ে মাথাব্যথা ছিল না। শুধু পরাধীনতার শৃঙ্খলে বাঁধা পড়ে থাকায় ঘোর আপত্তি ছিল। তাই ব্রিটিশ শাসকের হাতে থাকার চেয়ে ভারত হিন্দুরাষ্ট্র হয়ে গেলেও, হাসিমুখে মেনে নেবেন বলে জানিয়েছিলেন। ২২ অগাস্ট সেই স্বাধীনতা সংগ্রামী আশফাকুল্লা খানের ১২২তম জন্মদিন।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appউত্তরপ্রদেশের শাহজানপুরে সফিকউল্লা খান এবং মাজহারউন্নিসার ঘরে জন্ম আশফাকুল্লার। খাইবার প্রদেশের জমিদার পরিবারের ছেলে। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ। সপ্তম শ্রেণিতে পরার সময় স্কুলে ইংরেশ শাসকের হাতে রাজারাম ভারতীয়কে গ্রেফতার হতে দেখেন।
সেই ঘটনাই স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করে আশফাকুল্লাকে। পরবর্তী কালে রামপ্রসাদ বিসমিলের সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং বন্ধু হয়ে ওঠা। অসহযোগ আন্দোলনে শামিল হন তাঁরা। স্বরাজ পার্টি এবং হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য ছিলেন।
রামপ্রসাদ এবং আশফাকুল্লা দু’জনেই কবিতা লিখতেন। ছদ্মনাম ‘হাসরত’ ব্যবহার করে উর্দু এবং হিন্দিতে লেখালেখি করতেন আশফাকুল্লা। লেনিন এবং রুশ বিপ্লব দ্বারা অনুপ্রাণিত হন তিনি। পুজিঁবাদ, সাম্প্রদায়িকতার অবসান ঘটানোই ছিল লক্ষ। ধর্মীয় বিভাজনকে হাতিয়ার করেই ইংরেজ শাসক ভারত দখল করে রেখেছে এবং স্বাধীনতা অর্জনে দেরি হচ্ছে বলে মত ছিল তাঁর।
মহাত্মা গাঁধী অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে হতাশ হন আশফাকুল্লা। ইংরেজ শাসকের বন্দুকের মোকাবিলা করতে এর পর কাকোরিতে ট্রেন লুঠের পরিকল্পনায় শামিল হন রামপ্রসাদ এবং আশফাকুল্লা। চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজেন্দ্র লাহিড়ি, কেশব চক্রবর্তী, বনওয়ারিলাল, মন্মথনাথ গুপ্ত, শচীন্দ্র বক্সি, ঠাকুর রোশন সিংহ-ও ট্রেন লুঠের পরিকল্পনায় শামিল হন। ট্রেন লুঠের টাকায় অস্ত্রশস্ত্র কেনাই লক্ষ্য ছিল তাঁদের।
সেই মতো ১৯২৫ সালের ৯ অগাস্ট লখনউয়ের কাছে কাকোরিতে ট্রেন লুঠ করেন সকলে মিলে। তাতে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু করে তৎকালীন ইংরেজ সরকার। এর পর ২৬ অক্টোবর রামপ্রসাদ ধরা পড়েন। প্রথমে নেপালে পালিয়ে গেলেও কানপুরে ফেরেন আশফাকুল্লা। অন্য নামে চাকরিও শুরু করেন। কিছু দিন সেখানে কাটিয়ে ফের দিল্লি ফিরে বিপ্লবী কাজকর্মে সক্রিয় হতে উদ্যত হন আশফাকুল্লা। কিন্তু যে বন্ধুকে ভরসা করেন তিনি, তিনিই আশফাকুল্লাকে ধরিয়ে দেন। ১৯২৬ সালের ৭ ডিসেম্বর ধরা পড়েন।
কাকোরি ষড়যন্ত্র মামলার শুনানি চলে এক বছর ধরে। তাঁদের সন্ত্রাসবাদী বলে উল্লেখ করে ইংরেজ সরকার। মোট ৪০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। রামপ্রসাদ, রোশন সিংহ, রাজেন্দ্র লাহিড়ি এবং আশফাকুল্লার ফাঁসির সাজা হয়। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সময় আশফাকুল্লার বয়স ছিল ২৭ বছর, রামপ্রসাদের ৩০ বছর।
মুসলিম পাঠান পরিবারে জন্ম আশফাকুল্লার। রামপ্রসাদ ছিলেন আর্য সমাজের সদস্য। কিন্তু জাতপাত, ধর্মের বেড়াজাল মানতেন না তাঁরা। বরং দেশপ্রেমই তাঁদের বন্ধুত্বকে অটুট করে তোলে। বন্দিদশায় পৃথক জেলে ছিলেন রামপ্রসাদ এবং আশফাকুল্লা। তাঁদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক বিভাজন ঘটানোর চেষ্টা করে ইংরেজ সরকার। স্বাধীনতার নামে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানানোর পরিকল্পনা চলছে বলে আশফাকুল্লাকে জানান ইংরেজ সরকারের এক পুলিশ আধিকারিক। কিন্তু আশফাকুল্লার জবাব ছিল, ‘‘ইংরেজ শাসিত দেশ থাকার চেয়ে ভারতের হিন্দুরাষ্ট্র হওয়া ঢের ভাল।’’
দীর্ঘ দিন আলাদা থাকার পর সতীর্থ শচীন্দ্র বক্সির সঙ্গে আদালতে দেখা হয় আশফাকুল্লার। পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে আঝোরে কাঁদতে শুরু করেন তাঁরা। রাম এবং ভরতের মিলনের জন্য তাঁরাও অপেক্ষা করছিলেন বলে সেই সময় জেল আধিকারিকরা প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন।
জেলে থাকাকালীন ধর্মীয় বিধি মেনে চলতে শুরু করেন আশফাকুল্লা। দাড়ি রাখেন, দিনে পাঁচ বার নমাজও পড়তেন। উপোসও করেন রমজানে। শচীন্দ্রের সঙ্গে ধর্ম নিয়ে আলোচনাও হত তাঁর। নাস্তিক শচীন্দ্রকে কখনও ধর্মপাঠ দিতে যাননি আশফাকুল্লা। বরং ধর্ম যাঁর যাঁর ব্যক্তিগত বিষয় বলে মনে করতেন। ফাঁসি কার্যকর হওয়ার দিনও নিজ আদর্শ থেকে একচুলও সরেননি আশফাকুল্লা। ছয় ফুট লম্বা দৃঢ় পদক্ষেপেই ফাঁসির মঞ্চে ওঠেন। ফাঁসির দড়িতে ঠোট ঠেকিয়ে বলেন, ‘‘আমার হাতে খুনের দাগ নেই। আমার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মিথ্যা। উপরওয়ালাই আমার বিচার করবেন।’’ হিন্দি ছবি ‘রং দে বসন্তী’তে আশফাকুল্লার চরিত্রে অভিনয় করেন কুণাল কপূর।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -