Indira Gandhi Birth Anniversary: ‘গুঙ্গি গুড়িয়া’ থেকে ‘লৌহমানবী’, পদে পদে পিতৃতন্ত্রকে পরাস্ত করেন ইন্দিরা
রাজনীতি হোক বা সমাজ জীবন, নারীবাদ শব্দটির বহুল ব্যবহার ইদানীং চোখে পড়ছে। নারীর সমান অধিকারের দাবি যখন আজকের মতো জোরাল হয়নি, সেই সময়ই আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে নারীবাদের ভিত্তি স্থাপন হয়েছিল। সাত থেকে আটের দশকে, তিন মহিলা রাষ্ট্রপ্রধানের হাত ধরে, ভারতের ইন্দিরা গাঁধী, ইজরায়েলের গোল্ডা মেইর এবং ব্রিটেনের মার্গারেট থ্যাচার।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁসির রানি লক্ষ্মীবাই, বেগম হজরত মহল, সরোজিনী নায়ডু, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, সাবিত্রীবাই ফুলের মতো বহু মহীয়সী নারীর উল্লেখ পাওয়া যায়। কিন্তু দেশ চালানোর উপযুক্ত বলে তখনও গন্য করা হতো না মহিলাদের। ভারতে ইন্দিরা গাঁধীই সেই প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেন। রাজনৈতিক এবং ব্যক্তিগত জীবনে একাধিক বিতর্ক থাকলেও, শাসক হিসেবে ইন্দিরার দক্ষতা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ নেই।
আজ থেকে ১০৬ বছর আগে, ১৯১৭ সালের ১৯ নভেম্বর জন্ম ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহরুর। আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম। বিয়েও করেছিলেন রাজনীতিককে। তার পর সংসার-সন্তান সামলেই রাজনীতিতে প্রবেশ। শোনা যায়, মেয়ে রাজনীতিতে আসুন, চাননি জওহরলাল নেহরু। কিন্তু সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে ভারত নামক গণতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইন্দিরা। এখনও পর্যন্ত দেশের একমাত্র মহিলা প্রধানমন্ত্রী তিনি।
স্বাধীনতা অর্জনের পর ২০ বছরও কাটেনি। ভারতীয় রাজনীতিই নয়, দেশের সমাজও তখন পিতৃতান্ত্রিক। কংগ্রেসের মাথাতেও পুরুষদের আধিপত্য। সেই অবস্থাতেই ১৯৬৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন ইন্দিরা।
সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষমতাই সমসাময়িক রাজনীতিকদের থেকে এগিয়ে রেখেছিল ইন্দিরাকে। গলার স্বর কোমল এবং মৃদু হলেও, মন্ত্রিসভার ‘একমাত্র পুরুষ’ সদস্য বলে তাঁর উল্লেখ করতেন অনুরাগীরা। দেশের রাজনীতিতেই নয় শুধু, আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতেও নিজের বিচারবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছিলেন ইন্দিরা।
শোনা যায়, সেই সময় কংগ্রেসের প্রবীণ নেতারা ভেবেছিলেন, নামসর্বস্ব প্রধানমন্ত্রী হয়ে থাকবেন ইন্দিরা। ইন্দিরাকে দিয়ে নিজেদের কার্যসিদ্ধি করার কথা ভেবেছিলেন তাঁরা। যে কারণে দলের অন্দরেই ইন্দিরাকে ‘গুঙ্গি গুড়িয়া’ অর্থাৎ ‘নির্বাক পুতুল’ বলে করতেন অনেকে। কিন্তু কারও হাতে পরিচালিত হওয়ার মতো রাজনীতিক ছিলেন না ইন্দিরা।
ঠান্ডা যুদ্ধের সময় আন্তর্জাতিক মহল যখন দ্বিধাবিভক্ত, সেই সময় নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে সফল হয়েছিলেন ইন্দিরা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেওয়া থেকে, ১ কোটি বাংলাদেশি শরণার্থীর দায়িত্ব নিতে রাজি হওয়া, উপমহাদেশীয় রাজনীতিতে ‘লৌহ মানবী’ হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠেন।
ভারতকে দারিদ্র্যের অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে ২০ পয়েন্ট পরিকল্পনা চালু করেন ইন্দিরা। দেশের অর্থনীতির সংস্কার করে আত্মনির্ভর, স্বয়ংসম্পূর্ণ ভারতের ভিত্তি স্থাপন করেন। ব্যাঙ্কের সরকারিকরণ থেকে কৃষিক্ষেত্রে সবুজবিপ্লব ঘটানো, সবকিছুর নেপথ্যে ছিলেন ইন্দিরা।
সংবিধানের ২৯১ এবং ৩৬২ অনুচ্ছেদে উল্লেখিত রাজভাতা আইন বিলোপ করেন ইন্দিরা। এর আওতায়, স্বাধীনতার পর একত্রীকরণ চুক্তির আওতায় যে সমস্ত রাজ পরিবার সরকারি অর্থ সাহায্য পেত, তাদের টাকা দেওয়া বন্ধ করে দেন ইন্দিরা। এর ফলে রাজকোষে সঞ্চয় বাড়ে।
১৯৭৪ সালের ১৮ মে রাজস্থানের পোখরানে প্রথম বার পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষা করে ভারত। ইন্দিরার তদারকিতেই তা সম্পন্ন হয়েছিল। তার ’বছর আগেই পরমাণু অস্ত্র পরীক্ষায় অনুমোদন দিয়েছিলেন তিনি।
১৯৮০ সালে ‘ট্রু লিবারেশন অফ উইমেন’ শীর্ষক প্রবন্ধে ইন্দিরা লেখেন, ‘নিজেকে নারাবাদী বলায় একাধিক বার আপত্তি জানিয়েছি আমি। কিন্তু ইতিহাসের সূচনাপর্ব থেকে যা মেয়েদের উপর পুরুষরা কর্তৃত্ব ফলিয়েছেন, সামাজিক ক্ষেত্রে, শ্বশুরবাড়িতে বৈষম্য, নিপীড়ণের শিকার হয়েছেন যে মেয়েরা, তাঁদের অবহেলা করি কী করে?’
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -