Russia-Ukraine War: ক্ষতবিক্ষত গোটা বিশ্ব, ইয়ত্তা নেই হতাহতের, ছিন্নমূল লক্ষ লক্ষ মানুষ, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের একবছর
অতিমারির ভয়াবহতা সবেমাত্র শিথিল হয়েছিল। স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টায় ছিল গোটা বিশ্ব। আর সেই আবহেই নেমে এসেছিল যুদ্ধের খাঁড়া। কিন্তু তার পর এক বছর কেটে গেলেও, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে ইতি পড়েনি এখনও। বরং যত সময় এগোচ্ছে, আন্তর্জাতিক কূটনীতির পারদ চড়ছে ততই।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In App২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে অভিযানের ডাক দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। শুক্রবার তার এক বছর পূর্ণ হয়েছে। আর এই এক বছরে, শুধুমাত্র রাশিয়া এবং ইউক্রেন নয়, ক্ষতবিক্ষত হয়েছে গোটা বিশ্ব। আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, তেল, এমনকি খাদ্যসঙ্কট পর্যন্ত দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতির নিষেধাজ্ঞা চাপায় রাশিয়া থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে ইউরোপে। গোটা বিশ্বের অর্থনীতি এই মুহূর্তে সুতোয় আটকে রয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে এখনও পর্যন্ত প্রায় ৮ হাজার নিরীহ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। যদিও ইউক্রেন সরকারের দাবি, তাদের দেশেই কমপক্ষে ১ লক্ষ নিরীহ নাগরিক রুশ হামলায় মারা গিয়েছেন। দুই দেশ মিলিয়ে সংখ্যাটা ঢের বেশি বলে মত আন্তর্জাতিক মহলের।
রাষ্ট্রপুঞ্জের মানবাধিকার বিভাগের দাবি, নিরীহ নাগরিক যত জন মারা গিয়েছে, তার মধ্যে পুরুষের হার ৬১.১ শতাংশ, মহিলার হার ৩৯.৯ শতাংশ। এখনও পর্যন্ত প্রায় ৫০০ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ১ হাজার শিশু। পাশাপাশি যৌন নিগ্রহ, অত্যাচারের ঘটনাও সামনে এসেছে ভূরি ভূরি। ইউক্রেনের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৪০ শতাংশ, প্রায় ১ ২ কোটি মানুষ মানবিক সঙ্কটে রয়েছেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত রাশিয়া এবং ইউক্রেন, দুই দেশের কমপক্ষে ২ লক্ষ ৫০ হাজার সৈনিক মারা গিয়েছেন বলে পরিসংখ্যান সামনে এসেছে। আমেরিকার দাবি, যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত দুই দেশেরই ১ লক্ষ ২০ হাজার করে সৈনিক মারা গিয়েছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে আহত হয়েছেন।
দলে দলে সাধারণ নাগরিকরা ইউক্রেন ছেড়েছেন। গত বছর মে মাসে রাষ্ট্রপুঞ্জ যে পরিসংখ্যান দিয়েছিল, সেই অনুযায়ী, প্রায় ৮০ লক্ষ ইউক্রেনীয় নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। যুদ্ধ যত এগিয়েছে, রাশিয়া থেকেও পলায়নের খবর মিলেছে।
যুদ্ধের শুরুতে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র রাশিয়া, লোকবল, অর্থবল, সবেতেই ইউক্রেনের চেয়ে দৌড়ে এগিয়েছিল। কিন্তু যত সময় এগিয়েছে, আন্তর্জাতিক মহলে ততই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে তারা। বরং আমেরিকা এবং পশ্চিমি কিছু শক্তির সহায়তায় মনোবলের পাশাপাশি গায়ের জোরও ফিরে পেয়েছে ইউক্রেন। যুদ্ধের এক বছর কেটে গেলেও, এখনও পর্যন্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিভে ঢুকতে পারেনি রাশিয়া। বরং খারকিভ পুনরুদ্ধারও করে নিয়েছে তারা। খেরসন তেকে এমনিতেই সরে গিয়েছে রাশিয়া।
যত দিন যাচ্ছে, যুদ্ধাপরাধের ঘটনা উত্তরোত্তর ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি কিভের শহরতলিতে রাস্তার উপর, পাশের সমাধিস্থলে ৩০০-র বেশি দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। পিছমোড়া করে হাত বাঁধা ছিল কারও, কারও সারা শরীর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, মাথার পিছনে গুলির ক্ষতও পাওয়া গিয়েছে। এর জন্য পুতিনের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা দায়েরের দাবি তোলেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে রাশিয়া একরকম কোণঠাসাই। তাদের উপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা চাপানো হয়েছে। যদিও তাতে রাশিয়ার খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। কম দামে গোটা বিশ্বকে তেল সরবরাহ করছে রাশিয়া। এমনকি বিভিন্ন দেশ রুশ মুদ্রা রুবেল মারফতই লেনদেন করছেন। ফলে মুশ মুদ্রার মূল্যও পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এই যুদ্ধ কার্যতই গোটা বিশ্বকে দ্বিখণ্ডিত করে দিয়েছে। রাশিয়ার পাশে রয়েছে তুরস্ক, চিন, ইরানের মতো দেশ। সামরিক সাহায্য জোগাচ্ছে চিন এবং ইরান। কাস্পিয়ান সাগর হয়ে পণ্য সরবরাহে সহযোগিতা করছে তুরস্ক। অন্য দিকে, রাশিয়া ইউক্রেনের পাশে দাঁড়িয়েছে। আবার আমেরিকা, ব্রিটেন, ফ্রান্সের মতো দেশ পাশে দাঁড়িয়েছে ইউক্রেনের।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -