Yaas Cyclone Effects: ইয়াস-তাণ্ডবের পর এখন চারদিকে অসহায়তার ছবি...
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডবে সবথেকে ক্ষতিগ্রস্ত উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুর। বিভিন্ন নদীতে জলস্তর বাড়ায় ভেঙে গিয়েছে নদী বাঁধ। এই পরিস্থিতিতে আগাম সতর্কতা হিসেবে এদিন বীরভূমের নানুরে অজয়ের বাঁধের অবস্থা খতিয়ে দেখল বিপর্যয় মোকাবিলা দল। ছিলেন থুপসরা গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্মীরা। অজয়ের জলস্তর বাড়ছে কি না খতিয়ে দেখার পাশাপাশি, মোবাইল ফোনে ছবিও তোলেন তাঁরা। সামনেই বর্ষা। তার আগে অজয়ের বাঁধের অবস্থা খতিয়ে দেখছে প্রশাসন।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appইয়াস বাংলায় আছড়ে পড়েনি। কিন্তু, তার ঝাপটাতেই বেসামাল অবস্থা। বিপর্যস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী এলাকা। ভাঙছে একের পর এক নদীবাঁধ। আর তার জেরেই জল ঢুকছে হু হু করে। ভাসিয়ে দিচ্ছে পরপর গ্রাম। আশ্রয়হীন হাজার হাজার মানুষ।
বুধবারের পর, বৃহস্পতিবারও বদল হয়নি অসহায়তার ছবির। নামখানায় হাতানিয়া-দোয়ানিয়া নদীর বাঁধ ভেঙে প্রবল বেগে গ্রামে ঢুকছে জল। যে কোনও মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে ঘর। আতঙ্কে ঘর ছেড়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে রয়েছেন গ্রামবাসীরা। জলের তোড়ে ভেসেছে চাষের জমি থেকে পানের বরজ। এই অবস্থায় জলবন্দি কয়েকজনকে উদ্ধার করে এনডিআরএফ।
নদী বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে পাথরপ্রতিমাতেও। পাখিনালা নদীর বাঁধ ভেঙে জল ঢুকছে লক্ষ্মী জনার্দনপুর পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকায়। প্লাবিত ২টি গ্রাম। এখনও জলমগ্ন কাকদ্বীপের বিস্তীর্ণ এলাকা। ত্রাণ শিবিরের থাকা গ্রামবাসীরা এদিন বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু জল না কমায় ত্রাণ শিবিরে ফিরে যান তাঁরা।
ইয়াসের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে ফ্রেজারগঞ্জেও। ক্ষতিগ্রস্ত বিস্তীর্ণ এলাকার সমুদ্র বাঁধ। এদিন দুর্গত এলাকায় পরিদর্শনে যান সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী। মন্ত্রীকে সামনে পেয়েই, নিজেদের অসহায়তার কথা তুলে ধরেন ভুক্তভোগী মানুষজন। আজও দক্ষিণ ২৪ পরগনার গোসাবার গোমর, বিদ্যাধরী ও দুর্গাদোয়ানি নদীর বাঁধ ভাঙা জল ঢুকছে একের পর এক গ্রামে। প্লাবিত রাঙাবেলিয়া, গোসাবা ও লাহিড়িপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২০-২২টা গ্রাম। হু-হু করে ঢুকছে জল। গৃহহীন অসংখ্য মানুষ।
মুড়িগঙ্গার মোহনায় টহলদিতে শুরু করেছে নৌবাহিনী। সব মিলিয়ে ঝড় চলে গেলেও আকাশে এখনও রয়েছে দুর্যোগের কালো মেঘ।
ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের তাণ্ডব, সঙ্গে কটালের জেরে জলোচ্ছ্বাসের কারণে জলমগ্ন হলদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকা। রায়রায়চক, রাজারচক এলাকায় জলের তলায় ঘরবাড়ি।স্থানীয় বাসিন্দারা আশ্রয় নিয়েছেন হলদিয়ার নির্মীয়মাণ ইএসআই হাসপাতালে। হলদি নদীর জলে এখনও ভাসছে হলদিয়া পুর এলাকার একাংশ। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন বহু মানুষ। নদীর জল কিছুটা নামলেও, আতঙ্কে বাড়ি ফিরতে পারছেন না অনেকেই। বাসিন্দাদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছে গবাদি পশুরাও।
ইয়াসের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড ওল্ড দিঘা। পর্যটকদের বসায় জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত। ভেঙে পড়েছে বাতিস্তম্ভ। ওয়াচ টাওয়ারে ওঠার সিঁড়িও ভেঙে গিয়েছে। এখনও জলমগ্ন দিঘার বিভিন্ন গ্রাম। দিঘার পাশাপাশি পর্যটকদের অত্যন্ত পছন্দের জায়গা চাঁদপুরও। প্রকৃতির মার খেয়েছে এই এলাকাও। সমুদ্রের জল ঢোকা আটকাতে সম্প্রতি কংক্রিটের বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল। সব হারিয়ে নিঃস্ব অসংখ্য মানুষ। বাঁধভাঙা সমুদ্রের জলে প্লাবিত ট্যাংরামারি গ্রাম। মৎস্যবন্দর শঙ্করপুরের কাছের এই গ্রাম এখন জলের তলায়। ভিটে মাটি ছেড়ে মানুষজন আশ্রয় নিয়েছেন ত্রাণ শিবিরে। মাথা গোঁজার ঠাঁইটাই আজ বসবাসের অযোগ্য। তবুও বাড়ি ছাড়তে মন মানে না।
ইয়াস তাণ্ডব চালিয়ে যাওয়ার পর, এখন পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুর থেকে শঙ্করপুর, শুধুই ধ্বংসাবশেষ। একদিকে সমুদ্রের নোনা জলে ভেসে গেছে ঘরবাড়ি। অন্যদিকে ঝড়ে ভেঙে পড়েছে দোকান। তাজপুর বিচের অনেক ব্যবসায়ীর তো এমন অবস্থা, রুজি-রুটির উপায়, মাথার ওপর আশ্রয়-- দুই-ই হারিয়েছেন। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে কয়েকটি গ্রাম।
দিঘার পাশাপাশি প্রকৃতির ঘা খেয়েছে মন্দারমণিও। বাধাহীনভাবে সমুদ্রের জল ঢুকে ভাসিয়ে দিয়েছে গ্রাম। বাড়ি ঘর আর আস্ত নেই। শুধু টালির চালটুকুই কেবলমাত্র জলের উপরে মাথা তুলে রয়েছে। দুর্যোগের সময় গ্রামের লোকজন আশ্রয় নিয়েছিলেন ত্রাণ শিবিরে।
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলা প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে গোটা জেলায় ৮০০-র বেশি গ্রামে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। ৯ লক্ষের বেশি মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। ৪ লক্ষ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -