‘বাঙালি-আবেগ’ কৌশলে শান তৃণমূলের, প্রশান্ত কিশোর কোথাকার, পাল্টা কটাক্ষ দিলীপ ঘোষের
এই প্রেক্ষাপটে রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি বিধানসভা ভোটের আগে বাঙালি অবাঙালি’র রাজনৈতিক কৌশল-যুদ্ধ আরও জোরাল হবে?
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appতৃণমূল যখন বিজেপিকে অবাঙালি, বহিরাগতদের দল বলে আক্রমণ শানাচ্ছে, তখন পাল্টা জবাব দিতে ছাড়েনি বিজেপি-ও। দিলীপ ঘোষ বলেছেন, পিকে কোথাকার... নিজেরা দল সামলান।
এই প্রেক্ষাপটে কটাক্ষের সুরে তৃণমূলের প্রশ্ন, এরাজ্যের দায়িত্ব যেখানে কেন্দ্রীয় নেতাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, সেখানে কেন্দ্রের মন্ত্রিসভায় এরাজ্যের কোনও সাংসদ পূর্ণমন্ত্রীর জায়গা পান না কেন? ব্রাত্য বসুর প্রশ্ন, ৭ বছর ধরে কেন্দ্রে সরকার থাকা সত্ত্বেও সেখানে বাঙালি ফুল ক্যাবিনেট মন্ত্রী নেই... হাফ প্যান্ট পরা মন্ত্রী রেখেছেন... এখান থেকে এমপি হয়ে যাচ্ছেন... মমতার দয়ায় অর্জুন সিং এমএলএ হয়েছিলেন... গুজরাতে অর্জুন রায় উত্তরপ্রদেশে অর্জুন বন্দ্যোপাধ্যায় হয় না কেন?
আন্দামানের সেলুলার জেলে দামোদর বিনায়ক সাভারকরের ছবির সামনে হাতজোড় করে বসে আছেন নরেন্দ্র মোদি।এই ছবি গোটা দেশে তোলপাড় ফেলে দিয়েছিল!বিরোধীরা প্রশ্ন তুলেছিল যে সাভারকর ব্রিটিশ সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে বেরিয়ে এসেছিলেন, সেই তাঁকেই বীর প্রমাণ করতে নরেন্দ্র মোদির দলের এত তৎপারতা কেন? পোর্ট ব্লেয়ার বিমানবন্দরের নাম কেন সুভাষচন্দ্র বসুর নামে না করে সাভারকরের নামে করল মোদি সরকার?১৯১০ থেকে ১৯৩৮ সাল পর্যন্ত সেলুলার জেলে বন্দি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংখ্যা ৪৯৯। এঁদের বেশির ভাগই বাঙালি— ৩৭০। এর পরই ছিলেন পঞ্জাবের বিপ্লবীরা। এঁদের সংখ্যা ৮৪। স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা সেলুলার জেলে বন্দী চট্টগ্রামের অনন্ত সিংহ,লোকনাথ বল,গণেশ ঘোষ ,বারীন ঘোষ,জেলের অত্যাচারে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা উল্লাসকর দত্ত।ব্রিটিশ শাসকদের বর্বরোচিত আচরণে সেলের মধ্যেই আত্মহত্যা করা ইন্দুভূষণ রায়ের মতো বাঙালি স্বাধীনতা সংগ্রামীদের পরিবর্তে কেন শুধু সাভারকরকে নিয়ে বিজেপির এত উল্লাস?এই প্রশ্ন তুলে বাঙালি-অবাঙালি আবেগ উস্কে দিয়েছেন ব্রাত্য বসু।
পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, এরাজ্যের ভোটে অবাঙালিরা একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। বিভিন্ন সমীক্ষার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, বিহার,ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশ এবং মধ্যপ্রদেশ থেকে আসা প্রায় ৭০ লক্ষ ভোটার রয়েছেন এ রাজ্যে।
এরাজ্যে ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের ফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৫ শতাংশের বেশি অবাঙালি ভোটার রয়েছেন, এমন ১০টি কেন্দ্রের ছ’টিতে জিতেছে বিজেপি।এই তালিকায় রয়েছে,আলিপুরদুয়ার,দার্জিলিং,রায়গঞ্জ,ব্যারাকপুর,বর্ধমান-দুর্গাপুর এবং আসানসোল।
বাংলায় একুশের বিধানসভা ভোটে বিজেপির রণকৌশল তৈরির মূল দায়িত্ব যে পাঁচজনকে দেওয়া হয়েছে, তাঁদের মধ্যে কেউই এরাজ্যের নন। মেদিনীপুর জোনের দায়িত্বে মহারাষ্ট্রের সুনীল দেওধর। রাঢ়বঙ্গ জোনের দায়িত্বে উত্তরপ্রদেশের বিনোদ সোনকর।কলকাতা জোনে দিল্লির দুষ্মন্ত গৌতম।নবদ্বীপ জোনে মহারাষ্ট্রের বিনোদ তাওড়ে।এবং উত্তরবঙ্গের জেলাগুলির দায়িত্বে উত্তরপ্রদেশের হরিশ দ্বিবেদী। এরাজ্যে বিজেপির পর্যবেক্ষকদের দায়িত্বে থাকা কৈলাস বিজয়বর্গীয়ও মধ্যপ্রদেশের।
তৃণমূল বিধায়ক ও বিজ্ঞান-প্রযুক্তি মন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেছেন, আমাদের আপনাদের কাছে হাতজোড় করে থাকতে হবে। আপনাদের মাথার ওপর বসানো হবে। সেই অনুযায়ী বাংলার রাজনীতি নিয়ন্ত্রিত হবে, আমাদের জাতির এই দুর্দশা এসে গেল।
পাল্টা জবাব দিয়েছে বিজেপি। দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, ওরাও তো বাইরে যায়। বাঙালিদের জন্য এত বছরে কী করেছে? পরিযায়ী শ্রমিক বানিয়েছে। আর কী করেছে।
বিধানসভা ভোটে বিজেপিকে টেক্কা দিতে বাঙালি আবেগকে হাতিয়ার করল তৃণমূল। বাঙালি-আবাঙালি তত্ত্ব জোরাল করে, বিজেপির গায়ে বহিরাগত তকমা লাগানোর কৌশল নিল তারা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -