Vijay Diwas Facts: আমেরিকার চোখরাঙানি উপেক্ষা করেই সেনা নামান ইন্দিরা, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ করে ভারত
পূর্ব পাকিস্তান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশে সিলমোহর পড়েছিল আজকের দিনেই। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধের দিনটি তাই পালিত হয় বিজয় দিবস হিসেবে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appবাংলাদেশে আজকের দিনটির গুরুত্ব যেমন, ভারতের জন্যও দিনটি বিশেষ ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারতই বাংলাদেশকে স্বাধীনতা অর্জনে সাহায্য করেছিল। ৫১ বছর আগে আজকের দিনে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে জয় ঘোষণা করেছিল ভারত।
স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের আগের ১৩ দিন ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিল ভারত এবং পাকিস্তান। যুদ্ধের সূচনা হল কোথা থেকে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়েছিল এর, জেনে নিন বিশদ।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর ভারত-পাকিস্তান দু’টি পৃথক রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান গঠিত হয় ভারতের দুই দিকের, দুই ভূখণ্ড নিয়ে, পশ্চিম পাকিস্তান এবং পূর্ব পাকিস্তান। অধুনা বাংলাদেশ ছিল পূর্ব পাকিস্তান।
গোড়া থেকেই পশ্চিম পাকিস্তান (এখন পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তানের বন্ধে সমস্যা দেখা দেয়। ভারত দ্বারা দেশের দুই অংশ শুধুমাত্র বিচ্ছিন্নই ছিল না পরস্পরের থেকে, জীবনযাপন এবং আদর্শগত ভাবেও পরস্পরের থেকে আলাদা ছিল।
শুধু তাই নয়, পশ্চিম পাকিস্তান থেকেই যেহেতু সরকার চলত, সবদিক থেকে বঞ্চিত রয়ে যেত পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানের ভাষা ছিল উর্দু, পূর্ব পাকিস্তানের বাংলাভাষী মানুষের উপর জোর করে সেই ভাষা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
জোর করে ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধেই প্রতিবাদ জোরাল হতে শুরু করে। ছয়ের দশকে ভাষা আন্দোলনের অন্যতম মুখ হয়ে ওঠেন শেখ মুজিবুর রহমান, স্বাধীন বাংলাদেশের জনক বলা হয় যাঁকে। এই ভাষা আন্দোলনের উপর ভর করেই পাকিস্তানের হাত থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনতে মরিয়া হয়ে ওঠেন বাংলাদেশের মানুষ।
১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানে মুজিবের আওয়ামি লিগ ১৬২টির মধ্যে ১৬টি আসনে জয়ী হয়। পশ্চিম পাকিস্তানে জুলফিকর আলি ভুট্টোর দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি জয়ী হয় ১৩৮টির মধ্যে ৮১টি আসনে। সেই নিরিখে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল মুজিবের কাছে। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিল তাঁরই। মুজিবের প্রধানমন্ত্রী হওয়া আটকাতে পূর্ব পাকিস্তানে সেনা নামানো হয়। হাজার হাজার মানুষকে কার্যত কচুকাটা করা হয় সেখানে।
এমন পরিস্থিতিতে, প্রাণে বাঁচতে দলে দলে মানুষ ভারতে পালিয়ে আসতে শুরু করেন, তাতে শরণার্থী সঙ্কট দেখা দেয়। এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠনের দাবিতে সমর্থন জানায় ভারত। পশ্চিম পাকিস্তানের মোকাবিলা করতে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধী পূর্ব পাকিস্তানে সেনা নামানোর সিদ্ধান্ত নেন।
ইন্দিরার এই সিদ্ধান্ত নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে টানাপোড়েন শুরু হয়। পূর্ব পাকিস্তানে যখন গণহত্যা চালায় পশ্চিম পাকিস্তান, সেই সময় অস্ত্রশস্ত্র, বোমারু বিমানা জুগিয়ে তাদের সহযোগিতা করে আমেরিকা। এর ফলস্বরূপ ৩ লক্ষ মানুষের প্রাণ যায় পূর্ব পাকিস্তানে। ১ কোটির বেশি শরণার্থী আশ্রয় নেন ভারতে।
ঘটনাচক্রে সেই সময় ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নকে কোণঠাসা করতে চিনের সঙ্গে সখ্য তৈরির চেষ্টা চালাচ্ছে আমেরিকা। সে ব্যাপারে পাকিস্তান মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা পালন করছিল। অন্য দিকে, ভারত ছিল রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ। তাই ইন্দিরা আচমকা পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলে ভারতের উপর ক্ষুব্ধ হয় আমেরিকাও। ইন্দিরাকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যও করেছিলেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন।
পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ৩ ডিসেম্বর প্রথমে অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, অম্বালা, সিরসা, আগ্রায় বোমাবর্ষণ করা হয়। তার পর ৪ ডিসেম্বর যুদ্ধঘোষণা করেন ইন্দিরা। ফিল্ড মার্শাল স্যাম মানেকশ ছিলেন রণকৌশলের দায়িত্বে। ৬ ডিসেম্বরই পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন বাংলাদেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় ভারত।
১৬ ডিসেম্বর পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধঘোষণা করা হয়। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস পালন করে বাংলাদেশ। কারণ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ সেনা নামায় পাকিস্তান। তার পরের দিনটি থেকেই স্বাধীনতা সংগ্রামের সূচনা বলে ধরা হয়।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -