Albert Einstein: ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব পান, জন্মসূত্রে ইহুদি হলেও, রাজি হননি আইনস্টাইন
ভাবনা-চিন্তা ধর্মনিরপেক্ষ হলেও, জন্মসূত্রে ইহুদি অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। বিজ্ঞানচর্চার জন্য গোটা দুনিয়ায় পরিচিত হলেও, রাজনীতির আঁচ থেকেও রক্ষা পাননি। যদিও সচেতন ভাবেই সেই ফাঁদ এড়িয়ে যান আইনস্টাইন।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In App১৯৩৩ সালে জার্মানিতে নাৎজিদের হাতে ক্ষমতা উঠলে দেশত্যাগী হন আইনস্টাইন। প্রকাশ্যে অ্যাডল্ফ হিটলারের সমালোচনা করেছিলেন। তার জন্য নাৎজিদের শত্রুতে পরিণত হন তিনি। তার পর দীর্ঘ সময় দেশহীন হয়ে থাকতে হয় তাঁকে। পরবর্তী কালে আমেরিকার নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন।
সেই সময়, ১৯৫২ সালে ইজরায়েলের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট চাইম উইজম্যানের মৃত্যু হয়। তাতে ইজরায়েলের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন আইনস্টাইনকে প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব দেন।
ইজরায়েলে প্রশাসনিক সব দায়-দায়িত্ব প্রধানমন্ত্রীর হাতে ন্যস্ত। প্রেসিডেন্ট সাংবিধানিক পদ। তাই সম্মান হিসেবেই দেখা হয় পদটিকে। কিন্তু আইনস্টাইন ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ায় আগ্রহ দেখাননি।
শোনা যায়, গুরিয়নও রীতিমতো আতঙ্কে ছিলেন। ঘনিষ্ঠমহলে জানিয়েছিলেন, মুখরক্ষা করতে আইনস্টাইনকে প্রেসিডেন্ট হতে অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি। আইনস্টাইন রাজি হলে সকলের কপালে শনি নাচছে।
প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে আইনস্টাইন জানান, ব্যক্তিগত ভাবে বেশ কিছু জায়গায় খামতি রয়েছে তাঁর মধ্যে। বয়সও হয়েছে, তাই প্রেসিডেন্টের গুরুদায়িত্ব তাঁর পক্ষে সামলানো সহজ কাজ নয়। শুধু তাই নয়, ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব তাঁর জন্য নীতিগত ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলেও উল্লেখ করেন। পরে ইৎজাক বেন-জভি ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হন।
ইহুদিদের প্রতি বরাবরই সমব্যথী ছিলেন আইনস্টাইন। জার্মানি থেকে প্রাণ বাঁচিয়ে চলে আসার পর, সেখান থেকে ইহুদি বিজ্ঞানীদের বের করে আনতে একাধিক জায়গায় পৌরহিত্যও করেন তিনি। ইহুদিদের পৃথক দেশের পক্ষেও ছিলেন আইনস্টাইন।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুকে লেখা চিঠিতে নিজের সেই অবস্থান জানিয়েছিলেন আইনস্টাইন। লিখেছিলেন, ‘ইহুদিরাষ্ট্রের জন্য আন্দোলনের প্রতি আমার সমর্থন জানিয়ে আমি ঐতিহাসিক ভুল সংশোধনের উপায় দেখতে পেয়েছিলাম’।
পৃথক ইহুদি রাষ্ট্রের সমর্থক হলেও, প্যালেস্তাইন থেকে আদি বাসিন্দাদের উৎখাত করার এবং প্যালেস্তাইনের বিভাজন ঘটানোর ঘোর বিরোধী ছিলেন আইনস্টাইন। ১৯৩৮ সালে নিউইয়র্কে ন্যাশনাল লেবার কমিটি ফর প্যালেস্তাইনের ভাষণে তিনি বলেন, “(ব্রিটেনের পরিবর্তে) আরবদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং ইহুদিরাষ্ট্র গঠন নিয়ে আলোচনার পক্ষে আমি।“
আইনস্টাইন আরও বলেন, “কাঁটাতারের সীমান্ত, সশস্ত্র সেনা মোতায়েন থাকা ইহুদি রাষ্ট্র, ক্ষমতা প্রদর্শনে যথেষ্ট বিনয় থাকলেও, আমার আশঙ্কা তাতে ইহুদিদের ভিতরকার ক্ষত দগদগেই থাকবে। কারণ আমাদের মধ্যে সংকীর্ণ জাতীয়বাদী ভাবনা গোড়া থেকেই নিহিত রয়েছে। পৃথক ইহুদি রাষ্ট্র না থাকার সময়ও তার বিরুদ্ধে লড়তে হয়েছে আমাদের।” তাই ইজরায়েলের প্রেসিডেন্ট হওয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের নেপথ্যে আইনস্টাইনের এই বিবেকবোধই কাজ করেছিল বলে মনে করেন কূটনীতিকরা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -