Imran Khan: প্রত্যাশা জাগিয়েও রাজনীতিতে ২২ গজের ক্যারিশমা ধরে রাখতে পারলেন না ইমরান
ক্রিকেট হোক বা ব্যক্তিগত জীবন, প্রত্যেক ধাপে বর্ণময় অধ্যায় রেখে গিয়েছেন তিনি। রাজনীতিতেও শুরুটা হয়েছিল একেবারে জাঁকজমক করেই। কিন্তু পাকিস্তানের রাজনীতিতে ইমরান খান কি কালো অধ্যায় হয়ে থেকে যাবেন!
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appশনিবার আস্থাভোটে ক্ষমতাচ্যূত হওয়ার পর ইমরানকে নিয়ে এমনই প্রশ্ন উঠে আসছে। অ্যাসেম্বলিতে পরাজয়ের খবর পেয়েই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান ইমরান। আগামী দিনে পাক রাজনীতিতে তাঁর ভূমিকা কী হবে, তা নিয়ে জল্পনা চলছে। কিন্তু পাক মসনদে ইমরানের প্রথম অধ্যায় সুখকর হতেই পারত।
ক্রিকেট জীবনে আক্ষরিক অর্থেই হার্টথ্রব ছিলেন ইমরান। নিজের দেশে তো বটেই, রান আপে তাঁকে দেখলে বুক ধড়ফড় করত পড়শি কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারীর অসংখ্য মেয়েরও। একাধিক বিবাহ, একাধিক বিচ্ছেদ যদিও পরবর্তীকালে তাঁর সেই ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে।
কিন্তু রাজনীতিক হিসেবে ইমরানকে ঘিরে আশায় বুক বেঁধেছিলেন অনেকেই। ইমরানম নিজেই প্রত্যাশা বাড়িয়েছিলেন। কারণ জনপ্রিয়তার শিখরে থাকাকালীন মহম্মদ জিয়া উল হক, নওয়াজ শরিফ থেকে অনেকেই তাঁকে পাশে পেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনও শিবিরে নাম না লিখিয়ে রাজনীতিতে একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে যাত্রা শুরু করেন ইমরান।
জবরদস্তির সেনাশাসন হোক বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত সরকারের পত্তন, স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও পাকিস্তানের হাল ফেরেনি। বরং দুর্নীতি, আর্থিক সঙ্কট, ধর্মীয় কট্টরপন্থার অন্ধকারে ক্রমশ ডুবছিল দেশ। সেই সময় নিজের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ গঠন করেন ইমরান, বাংলায় তর্জমা করলে যার অর্থ দাঁড়ায় ন্যায় বিচারের দাবিতে আন্দোলন।
১৯৯৭ সালের সাধারণ নির্বাচনে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ইমরানের দল। NA-53 মিয়াঁওয়ালি এবং NA-94 লহৌর, দুই আসন থেকে একাই লড়েন। কিন্তু পরাজিত হন। ১৯৯৯ সালে জেনারেল পারভেজ মুশারফের নেতৃত্বে সেনা অভ্যুত্থানকে সমর্থন করেন ইমরান। ২০০২ সালেই ইমরানকে প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন মুশারফ। কিন্তু প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ইমরান।
প্রধানমন্ত্রী করতে চেয়েছিলেন মুশারফ। কিন্তু প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন ইমরান। ২০০২ সালে ফের সাধারণ নির্বাচনে অংশ নেন ইমরান। সেই বার মিয়াঁওয়ালি থেকে জয়ী হন। সে বার গণভোটে মুশারফকে সমর্থন করেছিলেন ইমরান। বাকিরা তার বিরুদ্ধে ছিলেন। সেনাপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা না দিয়ে মুশারফের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে ২০০৭ সালে ৮৫ সাংসদের সঙ্গে মিলে পদত্যাগ করেন ইমরান। মুশারফ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করলে গৃহবন্দি হন।সেখান থেকে পালিয়ে গা ঢাকা দেন প্রথমে। তার পর পঞ্জাব ইউনিভার্সিটির পড়ুয়াদের আন্দোলনে অংশ নেন। তার জন্য কিছু দিন জেলও খাটেন।
২০১১ সালে নতুন করে মূলস্রোতের রাজনীতিতে ফেরার উদ্যোগ শুরু করেন ইমরান। ৩০ অক্টোবর ১ লক্ষ সমর্থকদের লহৌরে জমা করে সভা করেন। ডিসেম্বরে ফের করাচিতে বিরাট সভায় ভাষণ দেন। তখন থেকেই বিরোধী মুখ হয়ে উঠতে শুরু করেন ইমরান। তৎকালীন একটি সমীক্ষায় সামগ্রিক ভাবে গোটা দেশে এবং প্রত্যেক প্রদেশে জনপ্রিয়তায় শীর্ষে উঠে আসে তাঁর দল।
আমেরিকার ড্রোন হামলার বিরুদ্ধে ২০১২-র অক্টোবরে আন্দোলনে নামেন ইমরান। ২০১৩ সালের ২৩ মার্চ ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার ডাক দেন। তখন থেকেই নওয়াজ শরিফের সঙ্গে সরাসরি সংঘাত দেখা দেয় তাঁর। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকা পাকিস্তানের মাটিকে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তোলেন ইমরান। ২০১৩-র সাধারণ নির্বাচনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে উঠে আসে ইমরানের দল।
তালিবানকে পাকিস্তান থেকে উৎখাত করতে সেই সময় আলোচনায় বসার প্রস্তাব দেন ইমরান। আমেরিকা পাকিস্তানের মাটিকে যুদ্ধে ব্যবহার করছে বলেই দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করা যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ তোলেন। কারচুপি করে নওয়াজ ভোটে জিতেছেন বলে ২০১৪-য় অভিযোগ করেন ইমরান। নওয়াজের পদত্যাগের দাবিতে মিছিল করেন। সেই সময় তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি চলে। তার পর থেকে বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করতেন।
২০১৪-র সেপ্টেম্বরে ইমরানের নেতৃত্বে একটি মিছিল নওয়াজের বাসভবনে ঢুকে পড়ে। তাতে ব্যাপক হিংসা ছড়ায়। তিন জনের মৃত্যু হয়। আহত হন ৬০০। ইমরানই সমর্থকদের আইন হাতে তুলে নেওয়ার পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এর পর ২০১৭ সালে পানামা পেপার্স দুর্নীতি মামলার জেরে ক্ষমতা হারান নওয়াজ। তাঁর হয়ে বাকি মেয়াদ পূরণ করেন শাহিদ খাকান আব্বাসি।
২০১৮-র নির্বাচনে ফের নাম লেখান ইমরান। সে বার বান্নু, ইসলামাবাদ, মিয়াঁওয়ালি, লহৌর, করাচি, পাঁচ জায়গা থেকে ভোটে দাঁড়ান। সে বার ২৭০টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ১১৬টিতে জয়ী হয় ইমরানের দল। পাঁচটি আসনেই জয়ী হন ইমরান, পাকিস্তানের রাজনৈতিক ইতিহাসে এমন নজির নেই কারও। যদিও বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, ছাপ্পা ভোটেই জিতেছেন ইমরান। ২০১৯ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ১০০ প্রভাবশালীর তালিকায় জায়গা পান। দেশকে ঋণমুক্ত করতে, দুর্নীতি দূর করতে এবং পরিবেশরক্ষায় একাধিক পদক্ষেপ করেন। কিন্তু ওসমা বিন লাদেনকে ‘শহিদ’ বলে উল্লেখ করে বিতর্কে জড়ান।
২০২১-এর গোড়া থেকে ইমরানের বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধতে শুরু করে। কোভিডের সময়কার অব্যবস্থা, অর্থনৈতিক সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি, সরকারি কোষাগারের টাকার অপব্যবহার নিয়ে তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ আন্দোলন শুরু হয় দেশ জুড়ে। তাতে সাধারণ মানুষের সঙ্গে আসিফ আলি জারদারি, শেহবাজ শরিফ, বিলাবল ভুট্টো, মরিয়ম শরিফের মতো বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকরাও যোগদান করেন। ৮ মার্চ ইমরান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেন তাঁরা।
ইউক্রেনে যুদ্ধ চালানো রাশিয়ার আতিথেয়তা গ্রহণ করেছেন, তাদের থেকে গ্যাস কেনার চুক্তি করেছেন বলে আমেরিকা তাকে গদিচ্যূত করতে চাইছে বলে সেই সময় অভিযোগ করেন ইমরান। ৩ মার্চ ভোটাভুটি হবে বলে ঠিক হয়। কিন্তু অ্যাসেম্বলি ভেঙে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে বিমুক্ত করে দেওয়া হয় ইমরানকে। তিন মাসের মধ্যে নতুন করে ভোট করানোর ঘোষণা করেন তিনি নিজেই। গদি বাঁচাতে তিনি সংবিধান সঙ্ঘন করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিরোধীরা।
এর পর বৃহস্পতিবার পাক সুপ্রিম কোর্ট ইমরান এবং তাঁর সরকারকে পুনরায় বহাল করে এবং শনিবার আস্থাভোটের নির্দেশ দেয়। সকাল সাড়ে ১০টায় ভোটাভুটি শুরু হয়। কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আবেদন করে ইমরানের দল। টালবাহানা করে পিছনো হতে থাকে আস্থাভোটও। সেই নিয়ে চরম উত্তেজনার মধ্যে মধ্যরাতের পর ভোটাভুটি হয়। পদচ্যূত হন ইমরান। রাতেই প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন ছেড়ে বেরিয়ে যান।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -