Mikhail Gorbachev: রক্তপাত ছাড়াই মিটমাট আমেরিকার সঙ্গে, সোভিয়েত সাম্রাজ্য খানখান হওয়ায় ‘ঘরশত্রু’ হয়েই ছিলেন গর্বাচভ
সোভিয়েত ইউনিয়নের শেষ নেতা মিখাইল গর্বাচভ প্রয়াত। সুপার পাওয়ার হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার জন্য আজও তাঁকেই দায়ী করেন রাশিয়ার মানুষ। কিন্তু ৯১ বছরের জীবনে কখনও আদর্শের সঙ্গে সমঝোতা করেননি তিনি। তাই নিজের দেশে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হয়ে রয়ে গেলেও, শান্তি এবং মানবিকতা বোধের জন্য গোটা বিশ্বে সমাদৃত তিনি।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appসাত বছরেরও কম সময় চলেছিল তাঁর শাসনকাল। কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন খানখান হয়ে রাশিয়ার উৎপত্তি, সোভিয়েত কর্তৃত্ব থেকে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলির স্বাধীনতা এবং সর্বোপরি বিনা রক্তপাতে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান, একের এক পালক যুক্ত হয়েছে তাঁর মুকুটে। তা করতে গিয়ে যদিও নিজের দেশেই ‘ঘরশত্রু’ বলে প্রতিপন্ন হতে হয়েছে। তবে সেই দেশ ছাড়ার কথা একবারও ভাবেননি গর্বাচভ।
১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে অবিভক্ত সোভিয়েত ইউনিয়নের সর্বাধিনায়ক ঘোষিত হন গর্বাচভ। ১৯৯১ সালের ২৫ ডিসেম্বর পদত্যাগ করেন। রাশিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক পরিবারে জন্ম নেওয়া গর্বাচভ জীবনে অসম্ভব কিছু করে দেখাবেন, এমন অলীক কল্পপনার সাহস দেখাননি তাঁর মা-বাবাও। তাঁর দুই দাদু ছিলেন জোসেফ স্ট্যালিনের অনুগামী। স্ট্যালিনের আমলে নিপীড়ন চালানোর দায়ে জেল হয় তাঁদের।
এহেন গর্বাচভ পূর্বপুরুষকেই অনুসরণ করবেন বলে কাঙ্খিত ছিল। কিন্তু তথাকথিত রুশ আগ্রাসনের ধারেকাছেও ছিলেন না গর্বাচভ। ১৯৫০ সালে মস্কো ইউনিভার্সিটিতে আইন নিয়ে পড়াশোনা করেন। সেখানেই স্ত্রী রাইসা তিতোরেঙ্কোর সঙ্গে আলাপ। এর পর মাত্র কয়েক বছরেই কমিউনিস্ট পার্টিতে পদোন্নতি হতে শুরু করে তাঁর। সেই সময় রুশ গুপ্তচর ইউরি আন্দ্রোপভের সংস্পর্শে আসা। গর্বাচভের রাজনৈতিক গুরু ছিলেন এই আন্দ্রোপভ।
ক্ষমতায় আসার পর পুঁজিবাদের উপরই প্রথমে জোর দেন গর্বাচভ। কারখানা মালিকদের হাতে প্রভূত ক্ষমতা তুলে দেন তিনি। তাঁর আমলেই রাশিয়ায় ‘কোঅপারেটিভ’ সংস্কৃতির উত্থান। সেই সময় ১৯৮৬ সালে ইউক্রেনের চেরনোবিল পারমাণবিক কেন্দ্রে বিস্ফোরণ ঘটলে, দেরিতে খবর পায় সরকার। ফলে বিপর্যয় আটকানো যায়নি। এর পর সরকারের সমালোচক হিসেবে পরিচিত বিজ্ঞানী আন্দ্রেই সাখারভকে নির্বাসন থেকে ফিরেয়ে আনেন গর্বাচভ। নিষিদ্ধ বই, জার্নাল এবং যাবতীয় লেখালেখির উপর থেকে নিয়ন্ত্রণ তুলে নেন। দেশবাসীকে পশ্চিমি দেশে যাওয়াতেও ছাড় দেন।
আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ড রোনাল্ড রিগানের সঙ্গে এর পর দফায় দফায় সাক্ষাৎ শুরু করেন গর্বাচভ। জেনিভা, রেকজাভিকের পর ওয়াশিংটনেও দু’জনের মধ্যে বৈঠক হয়। এর পর দু’জনের মধ্যে ঐতিহাসিক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়, যার আওতায় মাঝারি পাল্লার পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ হয়। এর মধ্যেই সোভিয়েত ইউনিয়নে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। উজবেকিস্তান, জর্জিয়া, বাল্টিক সাগরকে ঘিরে থাকা দেশগুলি এমনকি আজেরবাইজানও স্বাধীনতার দাবিতে অন্দোলন শুরু করে।
১৯৮৯ সালের ৯ ডিসেম্বর বার্লিন ওয়াল ভেঙে পড়লে বন্ধুহীন হয়ে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন। এর পর কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও মতভেদ তৈরি হয় গর্বাচভের। বিনা রক্তপাতে আমেরিকার সঙ্গে ঠান্ডা যুদ্ধের অবসান ঘটাতে সফল হয়ে আন্তর্জাতিক মহলে নোবেল শান্তি পুরস্কারে সম্মানিত হলেও, দেশের অন্দরে ‘বিশ্বাসঘাতক’ হিসেবে প্রতিপন্ন হন তিনি। সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, সুপার পাওয়ার হওয়ার দৌড় থেকে ছিটকে যাওয়ার জন্য গর্বাচভকেই দায়ী করেম ইয়েগর লিকাশেভ, বলিস ইয়েল্তসিনের মতো কমিউনিস্ট নেতারা। ১৯৯১ সালের অগাস্ট মাসে গর্বাচভের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটান তাঁরা। গৃহবন্দি করা হয় গর্বাচভকে।
১৯৯১ সালের ডিসেম্বরে ইউক্রেন, বেলারুশের মতো দেশের সঙ্গে সমঝোতায় আসেন ইয়েল্তসিন। সোভিয়েত ইউনিয়নের কফিনে শেষ পেরেক পোঁতা হয়। ক্ষমতাচ্যূত হন গর্বাচভ। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার দৌড়ে এর পর ১৯৯৬ সালে নির্বাচনে নাম লেখান তিনি। কিন্তু মাত্র ১ শতাংশ মানুষের সমর্থন পান।
ভ্লাদিমির পুতিনের ঘোর সমালোচক ছিলেন গর্বাচভ। দু’বছরের বেশি পুতিনের প্রেসিডেন্ট থাকা উচিত নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি। পুতিন ইয়েল্তসিনের উত্তরসূরি। গর্বাচভকে তিনিও তেমন পছন্দ করতেন না। ইউক্রেনে সেনা পাঠানোরও ঘোর বিরোধী ছিলেন গর্বাচভ। মানুষের জীবনের থেকে ক্ষমতা কখনওই বড় নয় বলে প্রকাশ্যে বিবৃতি দেয় তাঁর স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। কিন্তু শেষ জীবনে নিজের দেশেই কার্যত ব্রাত্য ছিলেন গর্বাচভ।
এতকিছুর মধ্যেও সর্বক্ষণ যাঁকে পাশে পেয়েছিলেন, সেই স্ত্রী রাইসাও ১৯৯৯ সালে মারা যান। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন রাইসা। সেই সময় স্ত্রীর সেবায় নিযুক্ত ছিলেন গর্বাচভ। তাতে মধ্যবিত্ত রুশ নাগরিকদের মধ্যে তাঁর প্রতি সমবেদনার উদ্রেক হয়। স্ত্রীর রাইসার পাশেই গর্বাচভকে সমাধিস্থ করা হবে বলে জানা গিয়েছে। গর্বাচভের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন পুতিনও। বিশ্ব ইতিহাসে গর্বাচভের অবদান অনস্বীকার্য বলে মন্তব্য করেন তিনি।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -