Russia Ukraine War: হাসতে হাসতেই প্রেসিডেন্ট, পর্দার সঙ্গে মিলে যায় বাস্তব, জেলেনস্কির হাতে কি বাঁচবে ইউক্রেন!
বাস্তব জীবনের উত্থান-পতনকে পর্দায় ফুটিয়ে তলার রেওয়াজ চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। কিন্তু পর্দায় একের পর দৃশ্য জুড়ে বোনা কাহিনী হুবহু বাস্তবের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে, সচরাচর এমন চোখে পড়ে না।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি এমনই বিরলতম উদাহরণ। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের দিকে এই মুহূর্তে তাকিয়ে গোটা বিশ্ব। তাবড় শক্তিশালীদের মাঝে পড়ে দুরমুশ হয়েও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন জেলেনস্কি।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে জেলেনস্কি আদৌ পেরে উঠবেন কি না, তা সময়ই বলবে। তবে লোকবল, সামরিক শক্তিতে পিছিয়ে থেকেও যে ভাবে দেশের নাগরিকদের উদ্বুদ্ধ করে চলেছেন তিনি, তাতে প্রশংসা কুড়োচ্ছেন তিনি।
১৯৭৮ সালের ২৫ জানুয়ারি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্রিভি রি-তে এক ইহুদি পরিবারে জন্ম জেলেনস্কির।
২০০০ সালে কিভ ন্যাশনাল ইকোনমিক ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন। আইনের ডিগ্রি রয়েছে তাঁর। কিন্তু কখনও আইনের পেশায় নিযুক্ত হননি তিনি।রাজনীতির ধারেকাছেও ছিলেন না তিনি।
বরং মানুষকে হাসানোয় আগ্রহী ছিলেন জেলেনস্কি। তাই ‘দ্য লিগ অফ লাফটার’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও প্রতিষ্ঠা করেন। কৌতুকাভিনেতা হিসেবে অসম্ভব জনপ্রিয়ও হয়ে ওঠেন তিনি।
আজ পর্যন্ত ১০টি পূর্ণদৈর্ঘ্যের ছবি প্রযোজনা করেছেন জেলেনস্কি। টেলিভিশনে কাজের জন্য কমপক্ষে ৩০টি পুরস্কার পেয়েছেন।এ ছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সম্মানিত হয়েছেন। ২০০৩ সালে স্কুল জীবনের প্রেমিকা ওলেনা কিয়াশকোকে বিয়ে করেন জেলেনস্কি।
২০১৫ সালে ব্যাঙ্গধর্মী টেলিভিশন সিরিজ ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল’-এ মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন জেলেনস্কি। তাতে মধ্য তিরিশের ইতিহাস শিক্ষকের ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে,দুর্নীতি নিয়ে সরকারের উদ্দেশে কটূক্তি বর্ষণ করে যিনি ভাইরাল হয়ে যান রাতারাতি।ঘটনাচক্রে তিনিই দেশের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন।
এর পরই আচমকা ইউক্রেনের রাজনীতিতে অবির্ভাব ঘটে জেলেনস্কির। ২০১৮-র ৩১ ডিসেম্বর একটি কমেডি শো-তে অনুষ্ঠান করার সময়ই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নাম লেখানোর কথা ঘোষণা করেন তিনি। এর পর দেশের নির্বাচন কমিশনে গিয়ে নাম নথিভুক্ত করেন। নিজের দলের নামও রাখেন ওই টেলিভিশন সিরিজের নামেই ‘সার্ভেন্ট অফ দ্য পিপল’।
দেশের তাবড় রাজনীতিকদের সামনে অনভিজ্ঞ জেলেনস্কির জয়ের সম্ভাবনা একেবারেই নেই বলে সেই সময় ঘোষণা করে দিয়েছিল ইউক্রেনের সংবাদমাধ্যম। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের জন্য সংবাদমাধ্যমের উপর ভরসা করে থাকেননি জেলেনস্কি। জনসভা, আলোচনা সভা, বিতর্কে অংশ নেওয়ার পরিবর্তে আগের মতোই কমেডি শো-র আয়োজন করে মানুষের সঙ্গে জনসংযোগ গড়ে তোলায় মন দেন। একই সঙ্গে নেটমাধ্যমে ব্যাঙ্গধর্মী অনুষ্ঠান করতে দেখা যায় তাঁকে।
এই কৌশলে ভর করেই মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে দেশের ওপিনিয়ন পোলে একেবারে শীর্ষে উঠে আসেন জেলেনস্কি।ইউক্রেনকে তিনি ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন এবং ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত করেই ছাড়বেন, ক্রাইমিয়াকে ফেরত আনবেন বলে মানুষকে আশ্বস্তও করেন।
রাজনীতি নিয়ে চিরাচরিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে জেলেনস্কির গ্রহণযোগ্যতা বাড়তে থাকে মানুষের মধ্যে। তারই ফলস্বরূপ ২০১৯ সালের ২১ এপ্রিল বিপুল ভোটে জয়ী হন জেলেনস্কি। তৎকালীন ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট পেত্রো পোরোশেঙ্কো যেখানে মাত্র ২৫ শতাংশ ভোট পেয়েছিলেন, সেখানে জেলেনস্কি ভোট পান ৭৫ শতাংশ। ওই বছর ২০ মে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন তিনি।
কিন্তু প্রেসিডেন্ট পদে আসীন হলেও, আড়াল থেকে জেলেনস্কিকে অন্য কেউ পরিচালনা করছেন বলে বিগত কয়েক বছরে একাধিক বার অভিযোগ উঠে এসেছে। ইউক্রেনেরই নাগরিকদের একাংশের দাবি, স্বেচ্ছায় নির্বাসনে থাকা ধনকুবের আইহর কোলোমোইস্কির সমর্থন পাচ্ছেন জেলেনস্কি, যিনি কি না পোরোশেঙ্কোর ঘোর বিরোধী বলে পরিচিত।
জেলেনস্কির টিভি শো, কমেডি শো যে চ্যানেলে সম্প্রচারিত হয়, সেটির মালিকও কোলোমোইস্কি। এ ছাড়াও গাড়ির নথিভুক্তি থেকে বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার, বিভিন্ন বৈঠক থেকে উঠে আসা ছবিতেও জেলেনস্কি এবং কোলোমোইস্কির মধ্যে সংযোগ উঠে এসেছে বলে দাবি সে দেশের সংবাদমাধ্যমের একাংশের।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -