World Braille Day 2021: দুর্ঘটনায় দৃষ্টি হারিয়েছিলেন ছোট্ট বয়সে, বাকিদের জন্য শিক্ষার আলো রেখে যান লুই ব্রেইল
ছোট্ট বয়সে দুর্ঘটনায় পড়ে হারিয়েছিলেন দৃষ্টিশক্তি। কিন্তু চোখের আলো নিভে যাওয়ার অর্থ জীবনের আলো নিভে যাওয়া নয়, নিজেকে দিয়ে তা বুঝেছিলেন লুই ব্রেইল। তাঁর জন্যই আজ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত নন দৃষ্টিহীনরা।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appভালবাসার শহর প্যারিস থেকে ২০ মাইল পূর্বে ফ্রান্সের কুব্রে শহরে জন্ম লুইয়ের। বিঘে বিঘে জমিতে আঙুর চাষ করত তাঁর পরিবার। চামড়ার ব্যবসাও ছিল। তাই টাকা পয়সার কোনও সমস্যা ছিল না।
কিন্তু তিন বছর বয়সে চামড়ায় ফুটো করতে গিয়ে নিজের চোখে সূচের মতো দেখতে লোহার কাঁটা ঢুকিয়ে ফেলেন লুই। তড়িঘড়ি ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয় তাঁকে।
প্রাথমিক চিকিৎসার পর স্থানীয় ওই চাক্তার লুইকে প্যারিসে অস্ত্রোপচারের জন্য নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু তখনকার দিনে উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা ছিল না। কোনও ভাবেই লুইকে সুস্থ করা যায়নি। বেশ কয়েক সপ্তাহ এমন চলার পর এক চোখ থেকে অন্য চোখে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে লুইয়ের।
বয়স পাঁচ বছর হতে হতে দুই চোখেই সম্পূর্ণ দৃষ্টিশক্তি হারান লুই। কিন্তু ছোট্ট বয়সে তা বোঝার শক্তি ছিল না তাঁর। তাই মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করতেন, চারপাশে এত অন্ধকার কেন।
তবে চোখে দেখতে না পেলেও, বেশ মেধাবী ছিলেন লুই। ১০ বছর পর্যন্ত কুব্রে-তে থাকার পর দ্য রয়্যাল ইনস্টিটিউট ফর ব্লাইন্ড ইয়ুথ স্কুলে ভর্তি হন তিনি। সেখানের লাইব্রেরিতেই প্রথম স্পর্শের মাধ্যমে শব্দ চিনতে শেখা লুইয়ের।
চিনতে শেখা লুইয়ের। স্কুলের শিক্ষক ভ্যালেন্টিন হাউই নিজে দৃষ্টিশক্তিহীন না হলেও, পড়ুয়াদের জন্য ছোট একটি লাইব্রেরি গড়ে তুলেছিলেন তিনি। সেখানে রাখা বইয়ের পাতার মোটা কাগজে চাপ দিয়ে অক্ষর উঁচু করে ফুটিয়ে তোলা হয়েছিল, যাতে হাত বুলিয়ে অক্ষরের আকার-নকশা বোঝা যায়।
কিন্তু ভ্যালেন্টিনের নকশা এতটাই জটিল ছিল যে অক্ষর বুঝতে অসুবিধা হতো দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়েদের। লুইও সেই সমস্যায় পড়েন। পরবর্তী কালে চার্লস বারবিয়ারের সংস্পর্শে আসেন তিনি, দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষ মুদ্রণ আনার চেষ্টা করছিলেন তিনিও।
চার্লসের সেই নকশা থেকেই দৃষ্টিহীনদের জন্য সহজে অক্ষর চেনার উপায় বার করেন লুই। পর পর বিন্দু সাজিয়ে মোটা কাগজে চাপ সৃষ্টি করে অক্ষর ফুটিয়ে তোলেন তিনি। তবে চার্লস যেখানে ১২টি বিন্দু ব্যবহার করতেন, সেখানে লুই মাত্র ছ’টি বিন্দু দিয়ে অক্ষর ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হন।
১৮২৪ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে দৃষ্টিহীনদের জন্য সহজ মুদ্রণ পদ্ধতি তৈরি করেন লুই। প্রথমে তাতে আড়াআড়ি দাঁড়িও ব্যবহার করতেন তিনি। কিন্তু ১৮৩৭ সালে দাঁড়িগুলি বাদ দেন। তাঁর নামানুসারেই পরবর্তীকালে দৃষ্টিহীনদের জন্য বিশেষ পদ্ধতির মুদ্রণের নাম হয় ব্রেইল।
২০১৯ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ সভা প্রতি বছর ৪ জানুয়ারি দিনটিকে বিশ্ব ব্রেইল দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই দিনেই জন্মেছিলেন লুই।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -