Book of the Dead: কফিনে পড়ে ২ হাজার বছর, মিশরে উদ্ধার ‘প্যাপিরাস’ বই, রয়েছে পরকালের ‘টোটকা’
দুধসাদা, টানটান পাতার উদ্ভব হয়নি তখনও। তাই বলে আটকায়নি লেখা, পড়া, সাহিত্যচর্চা। বরং জলাভূমিতে জন্মানো প্যাপিরাস অর্থাৎ নলখাগড়াই হয়ে ওঠে মেধাচর্চার মাধ্যম। বিস্তর কাঠখড় পুড়িয়ে নলখাগড়াকে লেখার যোগ্য করে তোলা হতো। আজও সেই পরিশ্রম ইতিহাসকে তথ্যের জোগান দিয়ে চলেছে।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appনলখাগড়ার উপর লিপিবদ্ধ এমনই প্রাচীন বইয়ের খোঁজ মিলল মিশরে। তবে কোনও গ্রন্থাগার বা বাড়িতে নয়, প্রায় ২ হাজার বছর পুরনো কফিনের মধ্যে থেকে। গত ১৪ জানুয়ারি সেটির প্রাপ্তির কথা প্রকাশ করা হয়েছে, ওই দিনটি মিশরে প্রত্নতত্ত্ব দিবস হিসেবে পালিত হয়। সম্প্রতি ওই বইটির একাধিক ছবি প্রকাশ করেছে মিশরের পর্যটন এবং পুরাতত্ত্ব মন্ত্রক।
নীলনদের দেশ মিশরের বিখ্যাত জোসের পিরামিডের মধ্যে থাকা কফিনের মধ্যে থেকে ওই বইটি উদ্ধার হয়েছে। তবে আজকের দিনের মতো মলাটে মোড়া বই নয়, পুঁথির আকারে গোটানো কাগজের বই। তাতে ঈশ্বর, পরকালের অলঙ্করণ রয়েছে। রয়েছে পাতার পর পাতা লেখাও।
২৫ ফুট দীর্ঘ ওই বইটিকে ‘বুক অফ ডেড’ অর্থাৎ মৃতের বই বলে অভিহিত করেন প্রত্নতত্ত্ববিদরা। কারণ প্রাচীন মিশরে কারও মৃত্যু হলে, তাঁর কবরে ওই বই রেখে দেওয়ার চল ছিল। কারণ সেই যুগের মানুষের বিশ্বাস ছিল, ওই বই-ই মৃত ব্যক্তিকে পরলোক এবং পুনর্জন্মের রাস্তা দেখাবে। কোন মন্ত্রে দেবতাদের তুষ্ট করা যাবে, পুনর্জন্মের রীতিনীতি, সব বেঁধে দেওয়া রয়েছে।
২০২২ সালের মে মাসে ওই বইটির খোঁজ মেলে বলে জানা গিয়েছে। সম্প্রতি সেটিকে পুনরুদ্ধার এবং সংরক্ষণ করা গিয়েছে। আরবিতে করা হয়েছে অনুবাদও। কায়রোর জাদুঘরে রয়েছে চিত্রলিপিতে লেখা বইটি।
মিশর সরকার জানিয়েছে, আহমোসে নামের এক ব্যক্তির কফিন থেকে ওই বই উদ্ধার করা গিয়েছে। বইয়ে ২৬০ বার তাঁর নামের উল্লেখ রয়েছে। ওই ব্যক্তি ৩০০ খ্রিস্টপূর্ব নাগাদ জীবিত ছিল বলে দাবি গবেষকদের। সেই সময় মিশরে পলেমাইক বংশের রাজত্ব ছিল, আলেকজান্ডারের সেনাপ্রধানদের বংশধর যারা।
বইটিকে সংরক্ষিত রাখতে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করতে হয়েছে গবেষকদের। গোটানো পাতা খোলার আগে এগোতে হয়েছে অত্যন্ত সাবধানে। জোসের পিরামিডের দক্ষিণের একটি পিরামিড থেকে সেটি উদ্ধার হয়েছে। তবে তৃতীয় রাজবংশের ফারাও জোসেরের পিরামিডের অদূরে। তবে আহমোসের সঙ্গে ফারাওয়ের কোনও ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল না, বরং তখনকার দিনে প্রয়াত ফারাওদের পাশে সমাধিস্থ হওয়ার চল ছিল।
ওই বইটি কালো এবং লাল কালি দিয়ে লেখা। অর্থাৎ কোনও পেশাদার মানুষ অথবা গবেষক সেটি লিখিছিলেন বলে মত উদ্ধারকারীদের। এমন বই আগেও উদ্ধার হয়েছে। এর আগে, ‘বুক অফ ডেড প্যাপাইরাস,’ বইটি উদ্ধার হয়। সেটি ছিল ১২১ ফুট দীর্ঘ। বর্তমানে ব্রিটেনের জাদুঘরে রয়েছে। উদ্ধার হওয়া এই নয়া বইটি আপাতত মিশরের কায়রোর জাদুঘরে রয়েছে। সাধারণ মানুষের জন্য সেটি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। সেই সংক্রান্ত নানা খুঁটিনাটি তথ্যও ব্যাখ্যা করা হয়েছে সকলের সুবিধার জন্য।
হরফের লেখা ছাড়াও বইটির ভিতর অজস্র অলঙ্করণ রয়েছে। অলঙ্করণ রয়েছে প্রাচীন মিশরের পাতাল দেবতা হিসেবে গন্য ওসিরিসেরও। মিশরের পুরাণ অনুযায়ী, মৃত্যুর পর ওসিরিস পুনর্জীবিত হন। ওসিরিসের মতো প্রাচীন মিশরের লোকজন নিজেরাও পরলোক এবং পুনর্জন্মে বিশ্বাস করতেন। বইয়ের অলঙ্করণে ওসিরিস সিংহাসনে বসে রয়েছেন। মাথায় রয়েছে মুকুট।
বইয়ের অলঙ্করণে এক যুগলও রয়েছেন। কোনও দেবীর উপাসনায় ব্যস্ত তাঁরা। গবেষকদের ধারণা, হতে পারে আহমোসে এবং তাঁর স্ত্রীকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। আহমোসের স্ত্রীর নাম জানা যায়নি। আহমোস সম্পর্কেও মেলেনি বিশদ তথ্য। তবে গবেষকদের মতে, আহমোসে নির্ঘাত ধনী ব্যক্তি ছিলেন। কারণ তখনকার দিনে এমন দীর্ঘ এবং সুন্দর বই তৈরিতে বিপুল টাকা খরচ করতে হতো। বইয়ে নৌকা, এমনকি গরুও দেখা গিয়েছে। সবার আগে আগে চলতে দেখা গিয়েছে গরুকে। তাই গবেষকদের দাবি, গরুটিকে হয়ত বলি দিতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
বইয়ের মধ্যে এক জায়গায় দেবী আম্মিতের সামনে বসে থাকতে দেখা গিয়েছে ওসিরিসকে। মিশরের পুরাণ অনুযায়ী, যখন সচ্চরিত্র, সৎ এবং ন্যায়পরায়ণ কেউ মারা যান, তাঁর হৃৎপিণ্ডের ভার পালকের মতো হয়ে যায়। কিন্তু যাঁরা কুকর্ম করেছেন, তাঁদের হৃৎপিণ্ড পালকের চেয়ে ভারী হয়। সে ক্ষেত্রে মৃতের শরীর গিলে ফেলবেন আম্মিত।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -