Science News: আসমানি গ্রহকে ঘিরে ছিল মায়াবি বলয়, আচমকা মেঘ চুরি গেল নেপচুনের, সূর্যকে দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা
আকাশের দিকে তাকিয়ে মেঘের আনাগোনা দেখতে কার না ভাল লাগে! বিশেষ করে পড়ন্ত বিকেলে, সূর্যাস্তের সময় আকাশে রংয়ের ছটা দেখে ভরে ওঠে মন। শরতের মেঘ নিয়ে আবেগ আরও তীব্র। কিন্তু মহাশূন্যে একটি গ্রহের আকাশ থেকে মেঘ একেবারে গায়েবই হয়ে গেল।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appগত ১৭ অগাস্ট বিষয়টি সামনে এনেছেন বিজ্ঞানীরা। বলা হয়েছে, আমাদের সৌরজগতের বাসিন্দা, তুষারাবৃত, আসমানি নেপচুনের আকাশ থেকে গায়ে হয়ে গিয়েছে মেঘের রাশি।
মহাশূন্যে একাধিক অভিযানের মধ্যে নেপচুনকে ঘিরেও চলছে অভিযান, ১৯৯৪ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত নেপচুনের যত তোলা হয়েছে, পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে সেগুলিকেও। তাতেই ২০১৯ সাল থেকে একটি পরিবর্তন বিশেষ করে চোখে পড়তে শুরু করে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নেপচুনের অক্ষাংশের মাঝামাঝি উচ্চতা থেতে মেঘের আস্তরণ ধীরে ধীরে পাতলা হচ্ছিল। বর্তমানে একেবারে ফাঁকা হয়ে গিয়েছে। মেঘের রাশি তো দূর, ছিটেফোটাও আর বাকি নেই।
ইউনিভার্সিটি অফ ক্যালিফোর্নিয়া, বার্কলির জ্যোতির্বিজ্ঞানের অধ্যাপক ইমকে দি পেতর বলেন, ‘‘নেপচুনের আকাশ থেকে এত দ্রুত মেঘের রাশি গায়েব হয়ে গেল যে তাজ্জব হয়ে গিয়েছে আমি। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই সব শেষ।’’
এর জন্য সূর্যকেই দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। তাঁদের মতে, প্রতি ১১ বছর অন্তর সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের গঠনে পরিবর্তন ঘটে। কিন্তু তাই বলে সূর্যের অংশ ছিটকে বেরিয়ে আসছে না। বরং প্লাজমা দ্বারা গঠিত স্ফুলিঙ্গ ঢেউয়ের আকারে ধরা দেয়।
অর্থাৎ সময়ের সঙ্গে সূর্যের ধাঁচেও পরিবর্তন আসতে পারে। তার সঙ্গে প্লাজমার সঙ্গের সরাসরি যুক্ত হয়ে যায় এই চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। যত বেশি জট পাকতে থাকে, ততই বেশি করে চাপ বাড়তে থাকে। একটা সময় আর নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে পারে না সূর্য।
এর ফলে প্রতি ১১ বছর অন্তর সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র উল্টে যায়। অর্থাৎ উত্তর মেরু দক্ষিণ মেরুতে পরিণত হয়, দক্ষিণ মেরু পরিণত হয় উত্তর মেরুতে। এভাবেই চলে আসছে যুগ যুগ ধরে। সৌরশিখার শক্তি যেমন বাড়ে, সৌরঝড়ের আঁচ পড়ে অন্যত্রও।
এই সময়ে মহাশূন্যে বিকিরণ শক্তিও বেড়ে যায় সূর্যের। এক এক সময় এই সৌরশিখাগুলি এতটাই শক্তিশালী হয় যে, পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে চলা কৃত্রিম উপগ্রহগুলিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সৌরঝড়ের প্রভাবে পৃথিবীর বুকেও বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ইন্টারনেট সংযোগ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
চৌম্বকীয় ক্ষেত্র উল্টে গেলে সূর্য থেকে শক্তিশালী অতিবেগুনি রশ্মিও নির্গত হতে থাকে। তার প্রভাব পড়ের সৌরজগতের অন্যত্রও। এমনিতে সূর্যের থেকে নেপচুনের দূরত্ব ৪৫০ কোটি কিলোমিটার। কিন্তু সৌরশিখা এবং অতিবেগুনি রশ্মির নির্মগনের সঙ্গে নেপচুনের সংযোগ রয়েছে বলে মত বিজ্ঞানীদের একাংশের।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নেপচুনকে ঘিরে রয়েছে হিলিয়াম, মিথেন এবং হাইড্রোজেনের বলয়। মিথেনের জন্যই আসমানি রং নেপচুনের, তা সূর্য থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মির সংস্পর্শে এসে আলোক রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটে। তাতে নেপচুনকে ঘিরে তৈরি হয় ধোঁয়াশা। সময়ের সঙ্গে এই বিকিরণ কমতে থাকে, আবারও উল্টে যায় সূর্যের চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। তাতেই পাতলা হতে হতে ওই ধোঁয়াশা একেবারে গায়েব হয়ে যায়। নেপচুনের ক্ষেত্রেও তেমনটাই ঘটেছে। এতে চিন্তার কিছু নেই যদিও, কিন্তু সবচেয়ে দূরে থাকা নেপচুনের উপর সৌর বিকিরণের এহেন প্রভাব পড়ল কি করে, খতিয়ে দেখছেন বিজ্ঞানীরা।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -