Science News: চোখের পলকে মাটি ছুঁয়ে ফেলে কেউ, কারও গতি আবার সাবধানী, পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে ঠিক যত সময় লাগে
পৃথিবী থেকে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। ১৪ জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে উৎক্ষেপণ হয়। চাঁদের বুকে পা রাখার কথা ২৩ অগাস্ট। নিরাপদে চাঁদের বুকে চন্দ্রযান-৩ মহাকাশযানকে অবতরণ করানোই লক্ষ্য ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ISRO-র। তাই সাবধানী পদক্ষেপ করছে তারা।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু এমনিতে পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে ঠিক কত সময় লাগে, তার উত্তর মোটেই সহজ নয়। পৃথিবীর কোন জাগা থেকে রকেটের উৎক্ষেপণ হচ্ছে, চাঁদের বুকে পা রাখাই লক্ষ্য, নাকি চারিদিকে চক্কর কেটে ফিরে আসা, কোন প্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে, সবকিছুর উপর নির্ভর করে এই হিসেব।
সোজাসাপটা হিসেব ধরলে, বর্তমানে যে রকেট প্রপালসন প্রযুক্তি ব্যবহৃত হয়, তাতে পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছতে সময় লাগে প্রায় তিন দিন। কোথাও না দাঁড়িয়ে, সবচেয়ে কম সময়ের মধ্যে পৃথিবী থেকে চাঁদে পৌঁছনোর রেকর্ড রয়েছে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র।
NASA-র নিউ হরাইজন অভিযানের আওতায় চাঁদকে পার করে যেতে সময় লেগেছিল মাত্র ৮ ঘণ্টা ৩৫ মিনিট। সেই সময় প্লুটোর উদ্দেশে রওনা দেওয়ার পথে চাঁদকে অতিক্রম করে গিয়েছিল মহাকাশযানটি।
তবে মানুষ রয়েছেন এমন মহাকাশযানকে যদি ধরা হয়, সে ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম সময়ে চাঁদে পৌঁছনোর রেকর্ড রয়েছে অ্যাপোলো ৮-এর। NASA জানিয়েছে, উৎক্ষেপণের পর মাত্র ৬৯ ঘণ্টা ৮ মিনিটে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়ে অ্যাপোলো ৮।
চাঁদে পৌঁছতে কত সময় লাগবে, তা নির্ভর করে ব্যবহৃত প্রযুক্তির উপরও। পৃথিবী এবং চাঁদের মধ্যেকার দূরত্ব ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার ৪০০ কিলোমিটার। কিন্তু বৃত্তাকার পথে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে না চাঁদ। ফলে দূরত্বের ক্ষেত্রেও ওঠানামা লক্ষ্য করা যায়।
এখনও পর্যন্ত যে তথ্য পাওয়া গিয়েছে, সেই অনুযায়ী, পৃথিবীর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থায় চাঁদের দূরত্ব ৩ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩০০ কিলোমিটার। সবচেয়ে দূরে থাকা অবস্থায় দূরত্ব ৪ লক্ষ ৫ হাজার ৫০০ কিলোমিটার হয়।
আলোর গতিবেগ সেকেন্ডে ২ লক্ষ ৯৯ হাজার ৭৯২ কিলোমিটার। তাই চাঁদের বুক থেকে পৃথিবীতে অথবা পৃথিবী থেকে চাঁদে আলো পৌঁছনোর সময়ও ভিন্ন। সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে ১.২ সেকেন্ড, সবচেয়ে দূরবর্তী অবস্থানে ১.৪ সেকেন্ড এবং গড়ে ১.৩ সেকেন্ড সময় লাগতে পারে তাতে।
NASA-র পার্কার সোলার প্রোব এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে দ্রুতগামী মহাকাশযান। প্রতি সেকেন্ডে ১৬৩ কিলোমিটার গতিতে ছুটে চলে সেটি। প্রতি ঘণ্টার নিরিখে ৫ লক্ষ ৮৬ হাজার কিলোমিটার। ওই পার্কার সোলার প্রোব সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থানে চাঁদে পৌঁছতে সময় নেবে ৩৭.২ মিনিট। সবচেয়ে দূরবর্ত অবস্থানে ৪১.৪ মিনিট এবং গড়ে ৩৯.৪ মিনিট।
যদি ধরে নেওয়া যায় রকেট নয়, গাড়িতে চেপে চাঁদের উদ্দেশে রওনা দেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে গড় হিসেবে যদি ৩ লক্ষ ৮৪ হজার ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব ধরা হয়, তাহলে ঘণ্টায় ৯৬ কিলোমিটার গতিতে ১৬৬ দিন লাগবে চাঁদে পৌঁছতে।
বর্তমান মহাকাশ অভিযানের কথা যদি ধরা হয়, চাঁদের কক্ষপথে ঢোকার পর মহাকাশযানের গতি শ্লথ করা হয়। তাই চাঁদে পৌঁছনোর লক্ষ্যে সেই হিসেবও ধরতে হয়, চাঁদের কক্ষপথে কতবার চক্কর কাটবে মহাকাশ যান, হিসেব রাখতে হয় তারও।
এখনও পর্যন্ত সবমিলিয়ে ১৪০-এর বেশি চন্দ্রাভিযান হয়েছে। অ্যাপোলো ১১ অভিযানে চার দিন ছ’ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় লেগেছিল। চাঁদের কক্ষপথ হয়ে ঢুকে তার বুকে মানুষের অবতরণ, গবেষণা, তার পর ফের পৃথিবীতে ফিরে আসা, সবমিলিয়ে অ্যাপোলো ১০ সময় নিয়েছিল আট দিন ৩ মিনিট ২৩ সেকেন্ড। কোনও মহাকাশচারী ছাড়া NASA-র ওরিয়ন মহাকাশযান এবং স্পেস লঞ্চ সিস্টেম রকেট আর্টেমিস ১ চাঁদে পৌঁছয় ষষ্ঠতম দিনে। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার উপরে অবস্থান করছিল সেটি।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -