Continental Split: আফ্রিকার বুক চিরে জন্ম নেবে নয়া মহাসাগর! বদলে যেতে পারে পৃথিবীর মানচিত্র
সেই কোন কালে তৈরি হয়েছিল বিশ্ব মানচিত্র। আজও তা অনুসরণ করে চলছে গোটা দুনিয়া। ছোটখাটো পরিবর্তন যে ঘটেনি, তা নয়। কিন্তু নতুন করে মানচিত্র তৈরির প্রয়োজন পড়েনি এখনও।
Download ABP Live App and Watch All Latest Videos
View In Appকিন্তু আগামী দিনে নয়া মানচিত্র তৈরির প্রয়োজন পড়তে পারে। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে যেমন মেরুপ্রদেশের নকশা বদলাচ্ছে, তেমনই জলের তলিয়ে যেতে বসেছে একাধিক দ্বীপ।
তবে এখানেই শেষ নয়, আগামী দিনে পৃথিবীর বুকে নয়া মহাসাগরও তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। আফ্রিকার বুক চিরে ওই নয়া মহাসাগর গজিয়ে উঠবে বলে জানা যাচ্ছে। এখন থেকেই তার ইঙ্গিত মিলতে শুরু করেছে।
আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত ইথিওপিয়ার আফার অঞ্চলে কয়েছে দাব্বাহু আগ্নেয়গিরি। আফার ত্রিভূজের অংশ সেটি, যে এলাকা সক্রিয় আগ্নেয়গিরি অঞ্চল হিসেবেই পরিচিত। দাব্বাহু একটি স্ট্রাটোভলক্যানো, অর্থাৎ সংযুক্ত আগ্নেয়গিরি। জমাট বাঁধা লাভা, ঝামা পাথর, ছাই দিয়ে তৈরি শঙ্কু আকৃতির আগ্নেয়গিরি সেটি।
এই আগ্নেয়গিরি মাউন্ট দাব্বাহু, বইনা, মইনা নামেও পরিচিত। ২০০৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর দাব্বাহু থেকে অগ্ন্যুৎপাত ঘটেছিল। তবে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি হলেও, ওই একবারই অগ্ন্যুৎপাতের রেকর্ড রয়েছে ইতিহাসে। সে বার অগ্নুৎপাতের আগে ভূমিকম্পও হয়েছিল ওই এলাকায়।
২০০৫ সালে অগ্ন্যুৎপাতের ফলে নির্গত লাভার প্রভাবে তিন দিন, তিন রাত কালো ধোঁয়ায় ঢেকে ছিল গোটা এলাকা। পরে দেখা যায়, ওই অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ৫০০ মিটার দীর্ঘ ফাটল তৈরি হয়েছে। ওই ফাটলই আরও গভীরে যেতে সাহায্য করেছে বিজ্ঞানীদের।
গোড়ায় ওই ফাটল দেখে তেমন গুরুতর বলে মনে হয়নি। কিন্তু যদ তিন যায়, ততই চওড়া হতে থাকে ওই ফাটল। কোথাও কোথাও ফাটল প্রস্থে ৬ মিটার বেড়ে যায়। ওই ফাটল এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, তার মধ্যে কয়েক লক্ষ অলিম্পিক সুইমিং পুলের জলও ধরে যাবে বলে মত বিজ্ঞানীদের।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, দাব্বাহু অগ্ন্যুৎপাতের ফলে সৃষ্ট ফাটল ওই এলাকায় মাটির নিতে অবস্থিত টেকটোনিক পাতেও চিড় ধরিয়েছে। তাতে অগ্ন্যুৎপাতের সময় নিঃসারিত ম্যাগমা ফাটল চুঁইয়ে মাটির নিচের পাতগুলির মাঝেও পৌঁছে যায়। এর ফলে পাতগুলির মধ্যে তৈরি হয় দূরত্ব। তাতেই ফাটল আরও চওড়া হয়ে যায়।
অগ্ন্যুৎপাতের কয়েক মাস পর ওই অঞ্চলে একের পর এক এমন ফাটল তৈরি হয়। ইথিওপিয়ার দক্ষিণে আরও প্রায় একডজন এমন ফাটল তৈরি হয়েছে। যত সময় যাচ্ছে, সেগুসলির বিস্তৃতি আরও বাড়ছে।
ওই ফাটল দেখে বিপদের আঁচ পাওয়া যায়নি যদিও। পরে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন যে, আফ্রিকা মহাদেশের ওই অংশে ভূগর্ভে ফাটল ধরতে শুরু করেছে। এখনও পর্যন্ত টেকটোনিক প্লেটগুলি সচল রয়েছে বলেই মত বিজ্ঞানীদের। কিন্তু আগামী দিনে পৃথিবীর মানচিত্র বদলে যাবে বলে মত তাঁদের।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, পরিবর্তনই বিশ্ব সংসারের একমাত্র ধ্রুবক। পৃথিবী মোটেই কোনও স্থিতিশীল গ্রহ নয়। ভৌগলিক পরিবর্তন সর্বদাই ঘটে চলে, মাটির উপরে এবং নিচে। টেকটোনিক প্লেটও সর্বদা সচল থাকে। ভূমিকম্প, সুনামি, অগ্ন্যুৎপাতের সময়ই সেগুলির উপর নজর পড়ে।
এই মুহূর্তে আফার মরুভূমির ওই অঞ্চল পৃথিবীর একমাত্র জায়গা, যেখানে মহাদেশে আলাদা হয়ে সাগর-মহাসাগরের সৃষ্টিতত্ত্ব সম্পর্কে পড়াশোনা করা যায় হাতেকলমে। ফলে ওই এলাকায় বছরভর গবেষকদের আনাগোনা লেগে থাকে। সেখানকার পরিস্থিতি এই মুহূর্তে বসবাসের উপযোগী নয়।
তবে ওই এলাকাকে ঘিরে তুমুল উৎসাহ কৌতুহলী মানুষের মধ্যে। কারণ মহাদেশের ভাঙনের সাক্ষী থাকার মতো সুযোগ কবেই বা মেলে! তাই মানচিত্রের নকশা বদলের সাক্ষী থাকতে আগ্রহী মানুষের সংখ্যা কম নয়। তার জন্য ঝুঁকিও নিতে রাজি তাঁরা। বিজ্ঞানীদের দাবি, ওই ফাটল থেকেই আগামী দিনে নয়া মহাসাগরের সৃষ্টি হবে। তাতে দু’টি খণ্ডে ভেঙে যাবে আফ্রিকা মহাদেশ। তবে বর্তমান প্রজন্ম তো দূর, ভৌগলিক এই রদবদলে কয়েক লক্ষ বছর সময় লাগতে পারে।
- - - - - - - - - Advertisement - - - - - - - - -